বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:ফের শিরোনামে সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’। তবে এই ‘ফেলুদা’ তাঁর লেখা কোনও গল্প বা সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ নয়। এই ফেলুদার নামও প্রদোষ মিত্র নয়। এটি আসলে একটি করোনা টেস্ট কিট। এক ঘণ্টারও কম সময়ে এই ফেলুদা বলে দেবে কারও করোনা হয়েছে কিনা! খরচও নামমাত্র। মাত্র পাঁচশো টাকা। এই টেস্ট কিটের পুরো নাম এফএনক্যাস ৯ এডিটর লিঙ্কড ইউনিফর্ম ডিটেকশন অ্যাসে। প্রতিটি শব্দের আদ্যাক্ষর মিলিয়ে ‘ফেলুদা’। তৈরি করেছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক অনুমোদন করলেই বাজারে চলে আসবে এই ‘ফেলুদা’।
সত্যজিৎ রায়ের কাহিনিতে যেমন ফেলুদা স্রেফ বুদ্ধির জোরে মানে মগজাস্ত্র দিয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করত এবং শেষে ধরে ফেলত, ঠিক সে ভাবেই এই ‘ফেলুদা’ মানুষের শরীরে বাসা বেঁধে থাকা কোভিড–১৯ ভাইরাসকে ধরে ফেলবে। গত এপ্রিল মাসে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই টেস্ট কিটটি তৈরি করেন দিল্লির ইনস্টিটিউট অফ জেনোমিক্স বায়োলজির দুই বাঙালি বিজ্ঞানী শৌভিক মাইতি ও দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। আর ইনস্টিটিউট অফ জেনোমিক্স বায়োলজির এই উদ্যোগে সহযোগী হয়েছে টাটা গোষ্ঠী। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই) অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে ‘ফেলুদা’।
এই বিষয়ে ইনস্টিটিউট অফ জেনোমিক্স বায়োলজির ডিরেক্টর জেনারেল শেখর সি মান্ডে বলেছেন, ‘এটা অনেকটা প্রেগন্যান্সি টেস্ট স্ট্রিপের মতো। কোনও বিশেষ দক্ষতা ছাড়াই এই পরীক্ষা করা সম্ভব। এমনকী, কোনও যন্ত্রেরও প্রয়োজন নেই। কেবল রং বদল দেখেই বুঝে নেওয়া যাবে মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে কিনা। একেবারে সাধারণ প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবেই এই পরীক্ষা করা যাবে। আর সবচেয়ে ভালো খবর হল, এই স্ট্রিপ যে রিপোর্ট দেবে, তা পুরোপুরি নির্ভুল। কোভিড শনাক্তকরণে এই স্ট্রিপের কোনও ভুল হবে না।’
নয়া ‘ফেলুদা’র স্রষ্টা যে দুই বাঙালি বিজ্ঞানী, সেই শৌভিক মাইতি ও দেবজ্যোতি চক্রবর্তী জানালেন, ‘ফেলুদা’ বাঙালি মননে চিরকালের জন্য একটা জায়গা করে নিয়েছে। এই করোনা টেস্ট কিট তৈরি করার সময়ও মনে হয়েছে, এর কাজটা পুরোপুরি ফেলুদার মতোই। মানুষের শরীরে হাজার এক জীবাণু থাকে। তার মধ্য থেকে কোভিড–১৯ ভাইরাস আছে কিনা, আর থাকলে তাকে সে খুঁজে বের করে নেবে। তাই এই করোনা টেস্ট কিটের নাম ‘ফেলুদা’ দেওয়া হয়েছে। আর এ ভাবেই সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টিকে সম্মান জানিয়েছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী।