বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিল নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এক হয়ে লড়ার আহ্বান জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি দলের দুই সাংসদকে সাসপেন্ড করা নিয়েও তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। কেন্দ্রীয় সরকারকে স্বৈরতান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, রবিবার রাজ্যসভায় বিরোধী দলগুলির বিরোধিতার মাঝেই ধ্বনি ভোটে পাস হয়ে যায় কেন্দ্রের কৃষিবিল। বিক্ষোভ দেখিয়ে বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন বিরোধী দলের সাংসদরা। এমনকী, অভিযোগ, তাঁরা চড়াও হন ডেপুটি চেয়ারম্যানের ওপর। ঘটনাটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় জাতীয় রাজনৈতিক মহলে।
ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার তৃণমূলের ২ সাংসদ–সহ বিরোধী দলগুলির মোট ৮ সাংসদকে সাতদিনের জন্য সাসপেন্ড করেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূলের ২ সাংসদ হলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং দোলা সেন। সমস্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন ডেপুটি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলি। যদিও সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। এই বিষয়ে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের সাংসদরা কৃষকদের স্বার্থে লড়াই করছিলেন। এই ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকৃত মানসিকতা প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। এটা সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা। তবে এ ভাবে আমাদের আটকে রাখা যাবে না। আমরা পিছিয়ে আসব না। আমরা মাথা নত করব না। ফ্যাসিস্ত সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিজেপি দেশের লজ্জা। সমস্ত রাজ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। হিটলারি কায়দায় দেশ চলছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাঁকে দাঙ্গার মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ কোনও প্রতিবাদ করতে পারছে না।’ তাঁর সমালোচনার পাল্টা সমালোচনা করেছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। তিনি বলেছেন, ‘সংসদে তৃণমূলের দুই সাংসদ–সহ মোট আট সাংসদ যে কাজ করেছেন, তা রীতিমতো অগণতান্ত্রিক। কিন্তু আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তা মনে করেন না। কারণ, সমস্ত অগণতান্ত্রিক কাজকেই তিনি গণতান্ত্রিক বলে মনে করেন। তিনি নিজেই অগণতান্ত্রিক কাজ করে এসেছেন। এক সময় তিনি বিধানসভা ভেঙেছিলেন। তাই সংসদে যে কাজ ওই সাংসদরা করেছেন, তার নিন্দা তিনি করতে পারবেন না। আর, বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে তিনি ও তাঁর প্রশাসন কী করছে? মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজেবাজে কেস দেওয়া হচ্ছে। তিনি কোন মুখে সমালোচনা করছেন?’
এদিকে, সাসপেন্ড হওয়ার পর দিল্লিতে বিক্ষোভ অবস্থানে বসেন আট সাংসদ। তাঁরা হলেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেন, আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং, কংগ্রেসের রাজীব সাতাব, রিপুন বোরা ও সৈয়দ নাসির হুসেন, সিপিএমের কে কে রাগেশ এবং এলামারাম করিম। গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বসেই এদিন সন্ধেয় গান করেন দোলা সেন। অন্যদিকে, বাংলায় আইন–শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অভিযোগ তুলে এদিন দিল্লির সংসদ চত্বরে পাল্টা বিক্ষোভ দেখান রাজ্যের বিজেপি সাংসদরা। বিক্ষোভে ছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষ–সহ আরও অনেকে। তাঁরা স্লোগান দেন, ‘বিজেপি হঠাও, বাংলা বাঁচাও।’ সেখানে লকেট বলেন, ‘রাজ্যে একের পর এক বিজেপি কর্মীকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসন নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে। কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।’