বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:সোমবার কৃষি বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কৃষকদের দুরবস্থার কথা তুলে পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘রাজ্যের দোষেই বাংলার কৃষকরা তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’ বর্তমান বাংলায় রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের বিবাদ অতিপরিচিত একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার রাজ্যপাল এমন ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন, যা নজিরবিহীন বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে টুইটে তিনি লেখেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী এখন কুমিরের কান্না কাঁদছেন। কারণ, তাঁর এই কান্না কৃষকদের দুরবস্থা বিন্দুমাত্র কমাতে পারবে না।’ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলা ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি’তে অংশ নেয়নি। আর সেই কারণে ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বাংলার ৭০ লক্ষ কৃষক। যদি তা না হত, তা হলে রাজ্যের কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এর মধ্যেই ১২ হাজার টাকা করে ঢুকে যেত। কিন্তু তা হয়নি। এরজন্য দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অথচ দেশের বাকি রাজ্যগুলি প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধিতে অংশ নিয়েছে। ফলে সেই রাজ্যগুলির কৃষকরা খুবই উপকৃত হয়েছেন। শুধু সমস্যায় থেকে গিয়েছেন এই রাজ্যের কৃষকরাই।’
এর পর এদিনই রাজ্যের প্রশাসনিক দফতর টুইট করে কেন্দ্রকে লেখা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি চিঠি প্রকাশ করে। সেই চিঠি দুটি লেখা হয়েছে গত ৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে। চিঠি দুটির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি’ এবং ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’ নামে দুটি প্রকল্প চালু করতে চান বলে জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট বাংলা–সহ ৬টি রাজ্যের কাছে ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’ চালু না করার কারণ জানতে চেয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সেইজন্যই প্রকল্প দুটি চালু করতে চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু ওই চিঠি দুটিতে এমন দুটি বিশেষ শর্ত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শর্ত দুটির একটি হল, প্রকল্প দুটির সমস্ত খরচ বহন করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। অর্থাৎ, এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার কোনও টাকা খরচ করবে না। আর দ্বিতীয় শর্তটি হল, কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রকল্পের টাকা সরাসরি রাজ্য সরকারের হাতে দিতে হবে। রাজ্য সরকারই সেই টাকা বিলি করবে। এই দ্বিতীয় শর্তটি নিয়েই তৈরি হয়েছে জল্পনা। আর প্রথম তা উসকে দেন স্বয়ং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ই।
এদিনই রাজ্যপাল ফের টুইট করে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পে কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা চলে যায়। এখানে কেউ কাটমানি খেতে পারে না। কোনও মধ্যস্বত্বভোগীও নেই। তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কেন মধ্যস্বত্বভোগী হতে চাইছে? ঘোলা জলে মাছ ধরার সুযোগ পেতে চাইছে কি?’ এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি আমফান দুর্যোগের সময় ত্রাণ বিলি নিয়ে কেলেঙ্কারি এবং করোনা পরিস্থিতিতে রেশন ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের কথাও তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেন। তিনি লেখেন, ‘ওই দুটি ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, আজ তা কারও অজানা নেই।’
এদিকে, রাজনৈতিক মহলের ধারণা, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এ কথা বলে কার্যত বিরোধী দলগুলির হাতেই অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। যার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে এদিন রাতেই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে শুধুই টাকা চান। কিন্তু সেই টাকার কোনও হিসেব কেন্দ্রীয় সরকারকে তিনি দেবেন না। কারণটা রহস্যজনক। তবে, মনে হয়, এখন সকলেই ব্যাপারটা জেনে গিয়েছেন।’