বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:বাম জমানায় পশ্চিমবাংলায় নন্দীগ্রামের গর্জে ওঠার ঘটনা সকলেরই জানা। সেই নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনে শহিদ হয়েছিলেন নিশিকান্ত মণ্ডল। মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের সোনাচূড়ায় তাঁর স্মৃতিতে আয়োজিত সভায় অংশ নেন ‘তৃণমূল নেতা’ তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সেই সভায় তিনি নাম না করে দলেরই শীর্ষ নেতৃত্বকে ইঙ্গিত করে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে রীতিমতো জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘যারা ইতিহাস ভুলে যায়, তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে না।’
শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সমীকরণ যে ইতিবাচক নেই, তা বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন ঘটনায় প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। সামনে চলে আসছে তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর শীতল লড়াইয়ের প্রসঙ্গ। আবার তৃণমূলের একাংশের ধারণা, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিজেপির গোপন আঁতাত তৈরি হয়েছে। যদিও তার কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল, গত কয়েকমাস ধরে তৃণমূলের তরফে রাজ্য ও দলের বিভিন্ন কমিটি থেকে শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর অনুগামীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কোনও কোনও অনুগামী নিজেদের বিরক্তির কথা জানালেও শুভেন্দু কিন্তু নীরবই ছিলেন। কিন্তু নন্দীগ্রামে এমনই কিছু মন্তব্য তিনি করেন, যা যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন রাজ্যের রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।
এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘প্রথম যখন আমি এখানে এসেছিলাম, তখন আমি ছিলাম দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক। তখন কিন্তু সাংসদ ছিলাম না। নিশিকান্তবাবু আমাকে হাত ধরে নিয়ে এসে এই মাটিতে জমিরক্ষা আন্দোলনের বীজ পুঁতেছিলেন। এটা ইতিহাস। ইতিহাস থেকে সবাই শিক্ষা নেয়। ইতিহাস ভুলে যেতে নেই। ইতিহাসকে ভুলে গেলে ইতিহাসই কিন্তু ক্ষমা করে না। যারা ইতিহাস ভুলে গিয়েছে, তাদের ভবিষ্যৎ কোনও দিন উজ্জ্বল হয়নি। হতে পারে না।’
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ইঙ্গিত করেই তিনি এ কথা বলেছেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের তরফে এদিন প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে সূত্রের খবর, তৃণমূলের অভ্যন্তরে তাঁর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, কারও যদি দলে থাকতে ইচ্ছে না থাকে, তা হলে তিনি চলে যেতে পারেন। কিন্তু দলে থেকে এবং মন্ত্রিত্ব না ছেড়ে এ–সব কথা বলা এক প্রকার দ্বিচারিতাই।