বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের লোকসভা কেন্দ্রেই বিজেপিতে বেশ বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার বিজেপি ছেড়ে চার নেতা তৃণমূলের জেলা সদর দফতরে গিয়ে দলবদল করেন। এই চার নেতা হলেন রাজদীপ গুহ, অজয় চট্টোপাধ্যায়, শৈলেন্দ্র সিং ও সজল রায়। খড়্গপুর লোকসভা কেন্দ্রে এই চারজন বিজেপির দাপুটে নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তাঁরা তৃণমূলে চলে আসায় শাসক দলের শক্তি যেমন বেড়েছে, তেমনই বিজেপির শক্তি যে অনেকটাই কমে গিয়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই রাজনৈতিক মহলের।
এখন সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে দিল্লিতে রয়েছেন দিলীপবাবু। ঠিক এই সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে রাজ্যে বিজেপিতে ভাঙন ধরিয়ে চলেছে তৃণমূল। সোমবারই উত্তরবাংলায় বিজেপির দুইজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা তৃণমূলে যোগ দেন। এ ছাড়া কয়েকদিন পর পরই বিজেপি ছেড়ে শয়ে শয়ে কর্মী তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। তৃণমূলের ওয়েবসাইট–সহ বাংলার সংবাদ মাধ্যমগুলিতে সেইসব খবর ফলাও করে প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু দিলীপ ঘোষ বা তাঁর অনুগামীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের মনোভাব এমনই যে, যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরা গিয়েছেন। তাতে বিজেপির কোনও রকম ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না।
ফলে বিজেপির অনেক নেতা ও কর্মীর মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁরা বলছেন, তৃণমূল জমানায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। অথচ বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সভাপতি ভাবিত নন। তাই দল ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাচ্ছেন অনেকে। ফলে তাঁরা আরও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছেন। যদিও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেরই বিশ্বাস, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবাংলায় পালাবদল হচ্ছেই। তৃণমূলকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের এই আশা রাজ্য বিজেপির অধিকাংশ নেতাই বিশ্বাস করেন। বাস্তবিকই নানা ইস্যুতে পশ্চিমবাংলায় তৃণমূল বিরোধী একটা হাওয়া জোরদার হয়েছে। বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। তাই রাজ্য বিজেপির নেতাদের মধ্যে ইদানীং একটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
বিজেপির রাজ্য নেতাদের অনেকেই মনে করেন, রাজ্য সভাপতি পদে দিলীপ ঘোষ আসার পরই বিজেপির এই শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। কারণ, দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নিয়ে সমাজের উচ্চমহলে যত সমালোচনাই হোক না কেন, গ্রামবাংলা এবং প্রান্তিক অঞ্চলের সাধারণ মানুষ নাকি সেই মন্তব্যই পছন্দ করেন। না হলে এর আগে তথাগত রায় বা শমীক ভট্টাচার্যের মতো উচ্চমার্গের অনেক তাত্ত্বিক ব্যক্তিই বিজেপির রাজ্য সভাপতি হয়েছেন। তাতে রাজ্যে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি মোটেও হয়নি। আসন সংখ্যাও তেমন বাড়েনি। নির্বাচনগুলিতেও কোনও ফায়দা হয়নি দলের। তাই রাজ্যে বিজেপির ক্ষমতা বাড়ার পেছনে অবদান রয়েছে দিলীপ ঘোষেরই।
অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য নেতাদের আর একটি অংশের ধারণা, রাজ্যে এখন প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া বইছে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যর্থতার কারণেই এই হাওয়া উঠেছে। সিপিএম বা কংগ্রেস সেই হাওয়ার সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তা ছাড়া সিপিএম এবং কংগ্রেস, উভয় দলেরই শাসন রাজ্যবাসী দেখেছেন। কিন্তু বিজেপির শাসন দেখেননি। তাই এখন বিজেপির প্রতি তাঁরা নমনীয় হয়েছেন। এই ঘটনায় দিলীপ ঘোষের কোনও অবদানই নেই। কোন অংশের ধারণা ঠিক, তা এখন বোঝা সম্ভব নয়। হয়তো ২০২১ সালে পাওয়া যেতে পারে এই প্রশ্নের জবাব।
এখন কথা হল, দলের অনেকেই মনে করছেন, দিলীপ ঘোষ রাজ্য বিজেপির সমস্ত ক্ষমতাই নিজের কুক্ষিত করে রাখতে চাইছেন। সেইজন্য সারা রাজ্যেই বিজেপির বহু নেতা ও কর্মী এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। ফলে অনেকেই হয় বসে যাচ্ছেন, নতুবা কেউ কেউ শাসক দলের দিকে পা বাড়াচ্ছেন। আর এই সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। কিন্তু দিলীপ ঘোষ এখন এতটাই দাম্ভিক হয়ে উঠেছেন যে, সে সব কিছুই গুরুত্ব দিতে রাজি নন। ফলে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে।