বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:চলে গেলেন পরমাণু বিজ্ঞানী শেখর বসু। ভারতে প্রথম পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ আইএনএস অরিহন্তের মূল স্থপতি ছিলেন তিনি। কিন্তু হার মেনে নিলেন করোনার কাছে। বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৭। তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ভারতের পরমাণু শক্তি মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব শেখর বসু ছিলেন ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টরও। পরমাণু শক্তি বিষয়ক গবেষণা এবং দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ২০১৪ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করে।
কয়েকদিন আগে তাঁর কোভিড টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। করোনার পাশাপাশি তাঁর কিডনিরও সমস্যা ছিল। তাঁর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের একটি বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল ক্রমশ। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছিল। চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পরই বাংলার বিজ্ঞান গবেষক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই বলেছেন, বড় অসময়ে চলে গেলেন তিনি। দেশ তথা জাতিকে তাঁর আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই দিতেন। কারণ, তিনি বিজ্ঞান গবেষণার কাজেই নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। সকলেই তাঁকে পরমাণু শক্তিতে ভারতকে স্বনির্ভর করার অন্যতম কারিগর বলে উল্লেখ করেন।
শেখর বসুর জন্ম ১৯৫০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর তিনি মুম্বইয়ে (তৎকালীন বম্বে) ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখান থেকেই যোগ দেন ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টারে। এখানে দীর্ঘদিন ডিরেক্টরের দায়িত্ব সামলেছেন। এর পরই তিনি যোগ দেন পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন পরমাণু শক্তি মন্ত্রকের সচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন। দেশের প্রথম সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্ত তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। পরমাণু গবেষক হিসেবে তিনিই আইএনএস অরিহন্তের জটিল রিঅ্যাক্টরগুলি তৈরি করেছিলেন। পরমাণু বর্জ্য নিষ্কাশন এবং চুল্লি তৈরির বিষয়টি নিয়ে ছিল তাঁর অপরিসীম আগ্রহ। বিষয়টি নিয়ে কাজও করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।
ভারতের প্রথম সারির বিজ্ঞানীদের প্রত্যেকেই তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন। এক বার্তায় তাঁরা জানিয়েছেন, দেশকে পরমাণু শক্তিতে স্বনির্ভর করতে তাঁর গবেষণা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধিকর্তা তথা বিজ্ঞানী সোমক রায়চৌধুরী বলেছেন, ‘শেখরবাবু অরিহন্তের রূপকার ছিলেন। পরমাণু শক্তি মন্ত্রকে থাকার সময় তিনি সার্নের প্রকল্পে ভারতের অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলাপ ও আলোচনায় এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ অনুসন্ধান সংক্রান্ত প্রকল্প লাইগোতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।’ বাংলায় তাঁর জীবনাবসানে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।