বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, রাজ্যের মানুষ যেন ২১ মে পর্যন্ত সাবধানে থাকেন। তাঁর এই কথার পরই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তা হলে কি লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে থেকে বাড়িয়ে ২১ মে করা হচ্ছে? যদিও এমন কথা স্বীকার করেননি মমতা। তিনি বলেছেন, ‘আমি সে কথা বলিনি। লকডাউনের মেয়াদ বাড়বে কিনা, তা কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করবে। আমি সকলকে সাবধানে থাকতে বলেছি।’
উল্লেখ্য, রাজ্য–সহ গোটা ভারতেই ২৪ মার্চ শুরু হয় প্রথম দফার লকডাউন। তা চলার কথা ছিল ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু মেয়াদ শেষের আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউনের সময়সীমা দ্বিতীয় দফায় বাড়িয়ে ৩ মে পর্যন্ত করে দেন। এখন তা যদি তৃতীয় দফায় বাড়িয়ে ২১ মে পর্যন্ত করা হয়, তা হলে হবে ৪৯ দিন। মমতা জানান, এই ৪৯ দিন মানুষকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। লকডাউনের সময় বাড়াতে হলে বাড়াবে কেন্দ্রীয় সরকার।সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। সেই কনফারেন্সে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তার পর বিকেলে মমতা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। ওই বৈঠক সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন। জানান, তাঁর অনেক কথা বলার ছিল। কিন্তু সেভাবে বলার সুযোগ পাননি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা সাহায্য চাইতেন। কিন্তু সময় না দেওয়ায় সে কথা তিনি বলতে পারেননি। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ভারতে মোট ২৯টি রাজ্য রয়েছে। প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা কোনও নির্দিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক ছিল না। তাই বৈঠকে দীর্ঘক্ষণ কারও সঙ্গে কথা বলার মতো সময় প্রধানমন্ত্রীর ছিল না।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত কারও চিকিৎসা বাড়িতেই হতে পারে। যাঁদের বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার মতো পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে, তাঁদের বাড়িতে কারও যদি করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে, তা হলে নিজের বাড়িতেই চিকিৎসা চলতে পারে।’ তিনি জানান, লক্ষ লক্ষ মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করা সম্ভব নয়।
সরকারেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাশাপাশি নিজের কথার ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের চেয়ে বাড়িতে থাকলে রোগী অনেক ভালো থাকেন। হাসপাতালে নানা রকম রোগী আসেন। তাঁদের দেখে অনেকেরই অনেক রকম সমস্যা হয়।’ অবশ্য যে রোগীর বাড়িতে এই চিকিৎসা হবে, সেই বাড়িকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘কেউ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করালে স্বাস্থ্য দফতর টেলি–চিকিৎসা করবে।’
তবে তাঁর এমন কথায় রীতিমতো আলোড়ন পড়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, তা হলে কি রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে? হাসপাতালগুলিতে কি আর করোনা আক্রান্ত রোগীকে জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়? বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলগুলি বিতর্ক তৈরি করতে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের।