পশ্চিমবঙ্গ সংবাদদাতা : সারা ভারতে এখন আনলকের চতুর্থ পর্যায় চলছে। ধীরে ধীরে অনেক নিয়ম শিথিল হয়েছে। স্বাভাবিক হয়ে উঠছে জীবনযাত্রা। বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু তারই মাঝে অদ্ভুত কথা শোনা গেল বাংলারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। শনিবার মেয়ো রোডে তিনি কার্যত মেনে নিলেন, বাংলায় সংক্রমণ মোটেও কমেনি। বরং, ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে রাজ্যের গোষ্ঠী সংক্রমণ। অথচ কয়েক মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রী আশার কথা শুনিয়ে বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরের শেষে নাকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে রাজ্যের সংক্রমণ। কিন্তু অক্টোবরের ৩ তারিখেই বদলে গেল মুখ্যমন্ত্রীর ভাষ্য। ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসক মহলে।
উত্তরপ্রদেশের হাথরসে এক তরুণীর ‘গণধর্ষণ’ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে এদিন রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল। প্রধান কর্মসূচিটি ছিল কলকাতায়। এদিন বিকেলে শহরের বিড়লা তারামণ্ডল থেকে তৃণমূলের বিক্ষোভ মিছিলকে নেতৃত্ব দেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টর্চ হাতে মিছিল করেন। জানান, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিজেপি। সকলকে আলো দেখাতেই তিনি টর্চ হাতে নিয়েছেন। মিছিল শেষ হয় মেয়ো রোডে। সেখানেই প্রতিবাদ মঞ্চে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তিনি করোনার কথা উল্লেখ করেন। বলেন, ‘আমার দলের অনেকেই সংক্রমিত হয়েছেন। এমনকী, সম্প্রতি আমার দলের তিন বিধায়ক সংক্রমিত হয়েছেন। কয়েকজন বিধায়কের মৃত্যুও হয়েছে।’
পাশাপাশি এ কথাও তিনি জানান, তাঁর বাড়িতে যে ছেলেটি চা দিতে আসে, সে–ও করোনা সংক্রমিত। আবার নবান্নে কাজ করেন এমন একজনেরও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তিনি জানান, খুব সমস্যার মধ্য দিয়ে তাঁকে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি এ কথাও স্বীকার করে নেন, কী ভাবে সংক্রমণ হচ্ছে, তা বোঝার উপায় নেই। তাই গোষ্ঠী সংক্রমণই যে হচ্ছে, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি। আর সেই সংক্রমণ ভয়ঙ্কর আকারই নিয়েছে। এর পর তিনি হাথরস কাণ্ড নিয়ে সরব হন। সরাসরি তোপ দাগেন বিজেপির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বিজেপিকে তিনি সব থেকে বড় মহামারী বলে উল্লেখ করেন। বলেন, ‘দেশে কোনও গণতন্ত্র নেই। রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বিজেপির আমলে ওয়ান নেশন, ওয়ান পলিটিক্যাল পার্টি হয়ে যাচ্ছে। বিজেপিই সব থেকে বড় মহামারী।’ রাজনৈতিক মহলের মতে, এদিন হাথরস ইস্যুতে মিছিলের মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিলেন।
এদিকে, এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বিজেপি। কলকাতায় দলের প্রধান কার্যালয়ের তরফে বলা হয়, পশ্চিমবাংলার অবস্থা নিয়ে কথা বলা উচিত মুখ্যমন্ত্রীর। এই রাজ্যে তো হামেশাই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এদিনও হাবড়ায় এক গৃবধূকে ধর্ষণের ঘটনা থানায় নথিভুক্ত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে একজন। এই রাজ্যে গত এক বছরে যত ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে, তা যদি প্রকাশ করা হত, যে কোনও সভ্য মানুষই লজ্জা পেত। মুখ্যমন্ত্রী সেইসব ঘটনা নিয়ে নীরব থাকেন, নতুবা অপপ্রচার বলে উল্লেখ করেন। এখন উত্তরপ্রদেশের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছেন।
অন্যদিকে, এদিনই হাথরস কাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় বাম দলগুলি এবং কংগ্রেস বিক্ষোভ মিছিল করে। কিন্তু এসপ্ল্যানেডে তাদের মিছিল পুলিশ আটকে দেয় বলে অভিযোগ। দলগুলির বিভিন্ন নেতাই অভিযোগ করেছেন, এখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়ার অধিকার রয়েছে শুধুই তৃণমূলের। বিরোধী দলগুলি সেই কর্মসূচি নিলেই তা পুলিশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়।