পশ্চিমবঙ্গ সংবাদদাতা:বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনের ঘটনায় অগ্নিগর্ভ টিটাগড়। সোমবার টিটাগড় থানা ঘিরে বিজেপি কর্মীদের তীব্র বিক্ষোভ, বোমাবাজি হয়। পুলিশ পাল্টা লাঠিচার্জ করে। সন্ধ্যায় নিহত নেতার মরদেহ নিয়ে বিজেপি নেতা ও কর্মীরা রাজভবনে রওনা দিলে এলিট সিনেমার সামনে বিশাল পুলিশ বাহিনী তাঁদের আটকে দেয়। শেষে নিহতের বাবা–সহ ৪ জনের এক প্রতিনিধি দল রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে। দলটি রাজ্যপালের কাছে এই খুনের সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
সোমবার মণীশ শুক্লার মৃতদেহ নিয়ে রীতিমতো উত্তেজনা দেখা দেয় কলকাতার এসপ্ল্যানেড চত্বরে। শুরুটা হয় হাসপাতাল থেকেই। ইচ্ছাকৃত ভাবে মৃতদেহের ময়নাতদন্তে দেরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানায় বিজেপি। হাসপাতাল ও পুলিশের তরফে নিহতের বাবার কাছে দেহ হস্তান্তর করতে সন্ধে ছটা বেজে যায়। পুলিশ অনুমতি না দিলেও বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা দেহ নিয়ে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোড ধরে রাজভবনের দিকে রওনা হন। কিন্তু পুলিশ বারবার আটকে দিতে থাকে শবদেহবাহী গাড়ি। এলিট সিনেমার কাছে পৌঁছোনোর পর ফের পুলিশ বাধা দিলে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে বিজেপি কর্মীদের। পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি নেতা ও কর্মীরা। ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ফাঁকা বাস দাঁড় করিয়ে দিয়ে পুলিশ যানজট তৈরি করে আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দিতে চাইছে। আসলে পুলিশ মনে করেছিল, এ ভাবে বাধা দিলে আমরা চলে যাব। আসলে তৃণমূলের সঙ্গে মিশে গিয়ে এ ভাবেই পুলিশ নোংরামির রাজনীতি করছে। কিন্তু পুলিশ জানে না, তারা যা করবে, আমরাও তা–ই করব।’
এই সময় নিহত বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লার বাবা চন্দ্রমণি শুক্লাও পুলিশের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ জানান। শেষে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) এবং বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের মধ্যে আলোচনায় পুলিশ প্রস্তাব দেয়, মিছিল করে দেহ নিয়ে রাজভবনে যাওয়া যাবে না। তবে তাঁদের পক্ষ থেকে চারজন রাজভবনে যেতে পারবেন। বিজেপি নেতারা পুলিশের প্রস্তাব মেনে নেন। এর পর নিহত নেতার বাবার সঙ্গে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অর্জুন সিং রাজভবনে যাবেন। রাজভবনে গিয়ে প্রতিনিধি দলটি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করে। তাঁর কাছে নিহতের বাবা–সহ দলের সকলেই ঘটনাটিকে পরিকল্পিত রাজনৈতিক খুন বলে অভিযোগ করেছেন। স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থা ঘটনার তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য সামনে আসবে বলে তাঁরা জানান। সেইজন্য তাঁরা এই খুনের তদন্তে সিবিআইকে নিয়োগ করার দাবি জানান। পরে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখার করার কথা টুইট করে জানান রাজ্যপালও।
এদিকে, এদিন এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের নতুন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ঘটনার তদন্ত প্রকৃতি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিজেপি নেতারা অবশ্য ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। যদিও রাজ্য সরকার ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি–র হাতে তুলে দিয়েছে। সিআইডি রাজ্য সরকারের ইচ্ছেকেই প্রতিষ্ঠিত করবে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন বিজেপি নেতারা। তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে মহম্মদ খুররম নামে একজনকে সিআইডি গ্রেফতার করেছে বলে জানা গিয়েছে। তদন্ত করতে গিয়ে এদিন একাধিক অসঙ্গতি চোখে পড়েছে তদন্তকারীদের। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরাগুলি সবই ভাঙা ছিল। সেগুলি কী করে ভাঙল, তার জবাব কারও কাছেই পাওয়া যায়নি। জানা গিয়েছে, এর আগেও দু’বার খুনের চেষ্টা করা হয়েছে মণীশ শুক্লাকে।
সিআইডি তদন্ত এবং রাজ্য সরকারের পুলিশ যে কলকাতার হাসপাতালে মণীশ শুক্লার দেহের ময়নাতদন্ত করেছে, তাতে কোনও আস্থা নেই বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র। তিনি এদিন সংশয় প্রকাশ করে জানান, এই খুনকেও আগের ঘটনাগুলির মতো আত্মহত্যার ঘটনা বানিয়ে দিতে পারে তৃণমূল সরকার! এদিন রাত দশটা নাগাদ টিটাগড়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় বিজেপি নেতার মরদেহ। ঘটনাস্থলে বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা ভিড় করে ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। গোলমালের আশঙ্কায় ওই এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। বাড়ি, দলীয় কার্যালয় ঘুরে শেষে বিজেপি নেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শ্মশানের দিকে।
এদিন সারাদিনই অগ্নিগর্ভ ছিল টিটাগড়। বেলার দিকে বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা টিটাগড় থানা আক্রমণ করে বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও বিজেপি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জও করে। ঘটনা সম্পর্কে এদিন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ‘তদন্ত চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ এই খুনের ঘটনায় বিজেপি পুলিশকে কাঠগড়ায় তোলায় মুখ খুলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা গান্ধীবাদে বিশ্বাসী। খুন, দাঙ্গায় বিশ্বাসী নই। এটা উত্তরপ্রদেশ নয় যে, এনকাউন্টার করে দেওয়া হবে। প্রকৃত সত্য সামনে আসবেই।’