বৃহত্তর দক্ষিণ অঞ্চল তথা বরিশালের অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন ( বিএম) কলেজ, বরিশাল । যার রয়েছে যুগ-যুগান্তরের ইতিহাস। কালের পরিক্রমায় প্রতিষ্ঠানটি আজও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে। সকলের উদ্দেশ্যে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জানা অজানা কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো। প্রিয় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে এবং জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিতে আমার এ চেষ্টা কিছুটা হলেও উপকারে আসবে বলে আশা করছি!
দক্ষিণ বাংলার অক্সাফোর্ড খ্যাত প্রতিষ্ঠান টি ১৮৮৯ সালে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত তার পিতার নামে ব্রজমোহন ১২৬ বিঘা জমির উপর কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত। তবে ইতিহাস রয়েছে বরিশালের তৎকালীন ম্যাজিষ্ট্রেট রমেশ চন্দ্র দত্তের অনুপ্রেরণায় প্রখ্যাত সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষানুরাগী মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ১৮৮৪ সালে তারা বাবার নামে ব্রজমোহন ইন্সটিটিউট স্কুল (বিএম ইন্সটিটিউট) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
যা ১৮৯৮ সালে কলেজে উন্নীত হয়। তখন কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত ছিল। সেসময়ে এ কলেজের মান এতই উন্নত ছিল যে অনেকে একে দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড বলে আখ্যায়িত করেন। সে সময় থেকেই এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সাথে দক্ষিণাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তার করে আসছে। ওই সময় প্রবেশিকা পরীক্ষায় সারা ভারত বর্ষে শতকরা ২২ ভাগের বেশি শিক্ষার্থী পাস করেনি। কিন্তু বিএম ইন্সটিটিউট থেকে শতকরা ৮২ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করে। আর এতে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
স্বদেশী আন্দোলনের ফলে এই কলেজটি একটি বিপ্লবী চেতনা অর্জন করেছিল এবং ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে এর আদর্শের স্রোত ঘটেছিল। অশ্বিনী কুমার স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লে তার সাথে সেই আন্দোলনে যুক্ত হন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ফলে ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়ে কলেজটি। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ এবং অন্যান্য ঘটনায় দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী দেশ ত্যাগ করে। এ কারণে তৎকালীন পন্ডিত ব্রজেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী, রাজোনিকান্ত গুহ, বাবু স্বাতীশ চন্দ্র যারা এ কলেজে গৌরব অর্জনের প্রচেষ্টা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে দেশ বিভাগের পরে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অন্যান্য কিংবদন্তি শিক্ষক যেমন জীবনানন্দ দাশ, অধ্যাপক মোঃ হানিফ, কাজী গোলাম কাদের, অধ্যাপক শামসুল হক, ড. প্রানোতি বোস এই কলেজের সাথে বিজয়ী হয়েছেন। যথাযথ শিক্ষা দেওয়ার কারণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এ কলেজটিকে ১৯২২ সালে প্রথমে ইংরেজী ও দর্শনশাস্ত্রে এবং পরে ধীরে ধীরে অন্যান্য শাখায় অনার্স কোর্স করার অনুমতি দিয়েছিল।
১৯২২-১৯৪৮ সময়টি ছিল বিএম কলেজের জন্য স্বর্ণযুগ। এ সাফল্য এমনকি স্যার উডবার্ন এবং অন্যান্য ইংরেজ উচ্চ আধিকারিকদের মন্তব্যও এনেছিল যে কলেজটিকে অক্সফোর্ডের সাথে স্থান দেওয়া উচিত। কিন্তু ১৯৪৭ সালে বিভাজন এ কলেজের জন্য এক ধাক্কা ছিল। সুতরাং অনার্স কোর্স বন্ধ ছিল। ১৯৬৪-৬৫ সালে বি.এম. কলেজে আবারও অনার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ কলেজটিতে ২২টি বিষয়ে অনার্স ও ২১ টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। এ কলেজে বর্তমানে ১৮৫ জন দক্ষ ও বিচক্ষণ শিক্ষক মন্ডলী রয়েছেন। যারা কলেজের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন।
বহু জ্ঞানী গুনী ব্যাক্তিরা এ কলেজ থেকে পড়ালেখা করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্তরে সুনাম কুড়িয়েছেন। যাদের পদরারণায় মুখরিত ছিল এ কলেজটি। এদের মধ্যে অন্যতম কৃষককূলের নয়ন মনি শহীদ আঃ রব সেরনিয়াবাত, কবি জীবনানন্দ দাশ, বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।কলেজে ছাত্রদের থাকার জন্য ৩টি (মুসলিম হোস্টেল, মহাত্মা অশ্বিনীকুমার হোস্টেল, কবি জীবনানন্দ দাশ হিন্দু হোস্টেল) এবং মেয়েদের জন্য চারতলা ভবনের ১টি হোস্টেল (বনমালী গাঙ্গুলী মহিলা হোস্টেল) রয়েছে।
কলেজের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে প্রায় ৪০ হাজার বই রয়েছে। কলেজটিতে ১টি বাণিজ্য ভবন, ২টি কলা ভবন, একটি অডিটোরিয়াম, ৪টি বিজ্ঞান ভবন ও ৩টি খেলার মাঠ রয়েছে। এছাড়া কলেজের দুই প্রান্তে দুটি বিশাল পুকুর কলেজের সৌন্দর্যকে করে তুলেছে মনোমুগ্ধকর।উল্লেখ্য, এ কলেজটি ৫২২, ৬২২, ৬৯৯ এর আন্দোলনের পাশাপাশি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এবং বিশেষত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে আখ্যায়িত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। (সংক্ষিপ্ত)
বিঃদ্রঃ সকল প্রকার ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
রিপোর্ট :এম.তৌহিদুল ইসলাম রুবেল বরিশাল।