বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্যের উন্মোচন চান পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই দাবি জানিয়ে তিনি সরাসরি চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। বুধবার সেই চিঠি নবান্ন থেকে পৌঁছে গিয়েছে দিল্লিতে। একই সঙ্গে ওই চিঠিতে তিনি নেতাজির জন্মদিনটিকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য আবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। উল্লেখ্য, এই দুটি দাবি এর আগেও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনেকবার জানিয়ে ছিলেন তিনি। বেশির ভাগ সময়ই কেন্দ্রের সরকারে ছিল কংগ্রেস অথবা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। মমতার সেই দাবি কোনওবারই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে তিনি যে চিঠি লিখেছেন, তাতে বলা হয়েছে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিত্বের কী পরিণতি হয়েছিল, তা শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবীই জানতে চায়। তাই তাঁর অন্তর্ধান সংক্রান্ত যে সব তথ্য কেন্দ্রের কাছে রয়েছে, তা প্রকাশ করা হোক। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতাজি সংক্রান্ত বেশ কিছু সিক্রেট ফাইল প্রকাশ করেছেন। তবে, অনেকেরই ধারণা, সমস্ত ফাইল প্রকাশ করা হয়নি। তাই নেতাজির রহস্যে ঢাকা অন্তর্ধানের আড়ালে যে সত্য রয়েছে, তা পৃথিবীর সামনে প্রকাশ করতে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র মানে একটা আবেগ। শুধু বাংলা নয়, সারা দেশ, এমনকী গোটা বিশ্বের সব প্রান্তেই নেতাজি অনুগামীরা রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই এই বিষয়ে আসল সত্যটা জানতে চান।’ উল্লেখ্য, এর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নেতাজির অন্তর্ধানের আড়ালে থাকা সত্য উন্মোচনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মনোজকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি কমিশন তৈরি করেন। সেই কমিশন যখন রিপোর্ট পেশ করে, তখন কেন্দ্রের ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং।
রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট তাইহোকুতে কোনও রকম বিমান দুর্ঘটনার প্রমাণই নেই। তাই তেমন দুর্ঘটনায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু হয়েছে, এমন তথ্য প্রমাণও হয় না। বলা বাহুল্য, মনমোহন সিংয়ের ইউপিএ সরকার সেই রিপোর্ট বাতিল করে দেয়। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, নিজেদের মনের মতো রিপোর্ট দেওয়া হয়নি বলেই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ওই রিপোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। এর আগেও কংগ্রেস জমানায় নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে একাধিকবার কমিশন গঠিত হয়েছিল। অভিযোগ, কংগ্রেস তথা গান্ধী পরিবারকে খুশি করতে শাহনওয়াজ খান কমিশন ও খোসলা কমিশন জানিয়েছিল, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিরুদ্ধ জনমতের চাপে সেই রিপোর্ট দুটি সার্বিক ভাবে সত্য বলে স্বীকৃতি পায়নি। মুখোপাধ্যায় কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হওয়ার পর প্রশ্ন ওঠে, ওই দুটি কমিশনের বক্তব্য যদি ঠিক হয়ে থাকে, তা হলে মুখোপাধ্যায় কমিশন গড়া হয়েছিল কেন? আর, তা যদি না হয়, তা হলে মুখোপাধ্যায় কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করা হল কেন? বলা বাহুল্য, কংগ্রেস পার্টি বা ইউপিএ সরকার এই বিষয়ে পরিষ্কার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
স্বভাবতই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধানের ঘটনা এখনও রহস্যে ঢাকা পড়ে রয়েছে। ঠিক সেই বিষয়টি নিয়েই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লেখায়, রাজনৈতিক মহলে নতুন করে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি নেতাজির জন্মদিনটিকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্যেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২২ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী। তার আগে ২০২১ সালে দেশের এই নির্ভীক সন্তানকে এ ভাবে সম্মান জানিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি জানানো হোক। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ব্যক্তিগত ভাবে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন মমতা।