বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা : শুক্রবারই দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। শোনা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার শুভেন্দু দিল্লি যাচ্ছেন। শুক্রবার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে পশ্চিমবাংলায় আসবেন। মেদিনীপুরে সভা করবেন অমিত শাহ। সেখানে শুভেন্দুকে দেখা যেতে পারে বলে সূত্রের খবর। তবে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের আরেকটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, অমিত শাহের সভামঞ্চেই শুভেন্দু যোগ দিতে পারেন বিজেপিতে। তার আগে যে কোনও সময় তৃণমূলের বিধায়ক পদ ছেড়ে দিতে পারেন তিনি।
স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের ১২১তম জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার হলদিয়ায় অরাজনৈতিক সভা ছিল শুভেন্দুর। সেখানে নাম না করে তৃণমূলকে বেঁধেন তিনি। তিনি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, ‘ভারতবর্ষের মধ্যে কোনও ভারতীয় কী করে বহিরাগত হয়?’ উল্লেখ্য, স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের ছোট, বড়, মাঝারি নেতারা বিজেপি নেতাদের বহিরাগত নেতা এবং বিজেপিকে বাইরের দল বলে উল্লেখ করছেন। সেই বিষয়টিকেই শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ করেন এদিন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো কাজের জন্য লড়ব। দেশমাতৃকাকে বন্দনা করব। আমরা প্রথমে ভারতীয়, তার পরে বাঙালি।’ আবার, শুভেন্দু অধিকারীর জন্মদিনও ছিল মঙ্গলবার। তাই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর তরফে তাঁরই এক আস্থাভাজন শুভেন্দুকে ফোন করেন। তিনি শুভেন্দুকে শুভেচ্ছা জানান। তার পর রাহুল গান্ধী কী চান, তা শুভেন্দুকে বুঝিয়ে বলেন। তিনি জানান, শুভেন্দু অধিকারীদের পরিবার কংগ্রেসি ঘরানার। তাঁর বাবা শিশির অধিকারী কংগ্রেসেরই বিধায়ক ছিলেন। তাই রাহুল গান্ধী চান, তিনি তৃণমূল ত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দিন। কিন্তু সবিনয়ে রাহুল গান্ধীর সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন শুভেন্দু।
এর পাশাপাশি শুভেন্দুকে ফোন করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ফোনে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান কৈলাস। দু’জনের মধ্যে মিনিট চারেক কথা হয় বলে জানা গিয়েছে। কী কথা হয়েছে, তার পুরোটা জানা না গেলেও রাজনৈতিক বিষয় দু’জনের কথায় উঠে এসেছে। যদিও কৈলাস তা স্বীকার করেননি। পরে সংবাদ মাধ্যমকে কৈলাস জানান, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনও কথা হয়নি। ফোনে যতটুকু কথা হয়েছে, তার পুরোটাই ছিল সৌজন্যমূলক। যদিও রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দু’জনের ফোনালাপ যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। এদিকে, জলপাইগুড়ির এক জনসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী–সহ বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে নাম না করে রীতিমতো কড়া আক্রমণ শানান তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি বড় বা সে বড়, দলের মধ্যে থেকে এ–সব চলবে না। দলে সবাই সমান। ১০ বছর ধরে দলে রয়েছ, ১০ বছর ধরে সরকারে রয়েছ, সরকারের সবটুকু খেয়ে, যা পাওয়ার সব পাওয়ার পর যখন ভোট আসছে, তখন এর সঙ্গে, ওর সঙ্গে বোঝাপড়া করা হচ্ছে? আমি এ–সব বরদাস্ত করব না। আমি তাদের সহ্য করব না।’
অন্যদিকে, দলের সঙ্গে শুভেন্দুর দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের উন্নয়নে তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেতা দেব টাকার বরাদ্দ করার পরও ফিরিয়ে নিয়েছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, সেই কারণে দেবকে কি তৃণমূলই সেই পরামর্শ দিয়েছে? উল্লেখ্য, ঘাটাল লোকসভার সাংসদ দেব। এই কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছটিই পশ্চিম মেদিনীপুরে। একটি রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। নিজের লোকসভা কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য সাংসদের জন্য প্রতি বছর পাঁচ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বরাদ্দ হয়। নিয়ম হল, বরাদ্দকৃত অর্থ প্রশাসনের হাত দিয়ে খরচ করতে হবে। কোন কাজে তা ব্যয় হবে, তার সুপারিশ করেন সাংসদ। পূর্ব মেদিনীপুরের জন্য টাকা বরাদ্দ করে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসনকে তা পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই টাকা পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসনকে পাঠিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু পরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে চিঠি লিখে দেব ওই টাকা পূর্ব মেদিনীপুরের কাছ থেকে ফেরত নেওয়ার কথা জানান।