বিশেষ সংবাদদাতা:
সাধারণত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে কিংবা ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী। সেই ভাষণ সম্প্রচারিত হয় রেডিও থেকে দূরদর্শনে। বেসরকারি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমগুলিও তা সম্প্রচার করে থাকে। কখনও কখনও বিশেষ কারণে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। যেমন বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে তিনবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু কোনও রাজ্যপালকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে দেখা যায়নি। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় সেই নজিরবিহীন কাজটিই করলেন। আর তা সরাসরি সম্প্রচারিত হল কলকাতা দূরদর্শনে।
১৮ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের ভাষণে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় লকডাউনের নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করেন রাজ্যপাল। একই কথা এদিন সকালেও বলেন রাজ্যপাল। তৃতীয় দফার লকডাউন শুরু হওয়ার আগে এক ভিডিও বার্তায় রাজ্যপাল বলেন, ‘করোনা ঢাকা অন্ধকার গুহার শেষে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। ভয় নেই। তবে সকলকে লকডাউনের নিয়ম মেনে চলতে হবে। তৃতীয় দফার লকডাউন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি কোনও ভাবেই হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না। আপনারা নিয়ম মানুন। আমরা জিতবই।’ এর পাশাপাশি দূরদর্শনের ভাষণে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে আপনাদের অসুবিধের কথা কেন্দ্রীয় সরকার জানে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আপনাদের জন্য যথেষ্ট খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেশনের মাধ্যমে সেইসব সামগ্রী আপনাদের কাছে রাজ্য সরকারের পৌঁছে দেওয়ার কথা। আশা করি আপনাদের কাছে সেই রেশন পৌঁছে যাবে।’
অবশ্য কিছু জায়গায় এই রেশন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না এবং সেইজন্য কিছু জায়গায় অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলেও তিনি জানান। কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো রেশন যাতে প্রতিটি গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন রাজ্য সরকারকে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এ কথার মাধ্যমে রাজ্যে রেশন বণ্টন নিয়ে তিনি যে খুশি নন, সে কথাই পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন।
সেইজন্য তিনি কার্যত পরোক্ষ ভাবে রাজ্য সরকারের সমালোচনাই করেন। এর আগে এদিন এক টুইটেও রেশন নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন রাজ্যপাল। সেখানে তিনি বলেন, ‘রাজ্যের উচিত প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার চাল গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে কোনও রকম দুর্নীতি যাতে না হয়, তা–ও রাজ্যকে দেখতে হবে।’ এর পরই তিনি সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে বলেন, ‘করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী যেন রাজনীতি না করেন।’
ভাষণ সম্প্রচারিত হওয়ার পরই রাজ্যপালের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে তৃণমূল। খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘তাঁর বক্তব্য শুনে মনে হল বিজেপির রাজ্য সভাপতি কথা বলছেন। আমরা রাজ্যপালের বক্তব্যকে কোনও গুরুত্ব দিই না।
’রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, রাজ্যপালের ভাষণের রাজ্যে রাজভবন–নবান্ন দ্বন্দ্ব আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।