1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন, ঘোষণা মমতার, পাল্টা চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর

  • Update Time : সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১
  • ২৭২ Time View

বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : সোমবার নন্দীগ্রামে গিয়ে গোটা বাংলার রাজনৈতিক মহলকে চমকে দিলেন তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, সামনের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকেই প্রার্থী হবেন। পরে অবশ্য কিছুটা সংশোধন করে নিজের পুরনো কেন্দ্র ভবানীপুরের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, পারলে দুটি কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হবেন। তাঁর এই ঘোষণার পরই রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তাঁর সিদ্ধান্তের পেছনে হেরে যাওয়ার ভয় কাজ করছে বলে জানিয়েছে। রাজনীতি বিশেষজ্ঞরাও তাঁর এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি নিয়ে কিছুটা সন্দিহান। তবে বিজেপি নেতা তথা নন্দীগ্রামের (‌প্রাক্তন)‌ বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন মমতাকে। বলেছেন, ৫০ হাজার ভোটে তাঁকে হারাবেন।

এদিন নন্দীগ্রামের তেখালির জনসভায় মমতা বলেন, ‘‌ভবানীপুর আমার বড় বোন আর নন্দীগ্রাম আমার মেজো বোন। পারলে আমি দুটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই এবার দাঁড়াব। কারণ, নন্দীগ্রামে থেকেই আমি আন্দোলনটা করব। ভবানীপুরের মানুষ দুঃখ পেতে পারে। আমি দুঃখ দেব না। যদি ম্যানেজ করতে পারি আমি দুটোতেই দাঁড়াব। কিন্তু নন্দীগ্রামে আমি দাঁড়াচ্ছিই।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‌আমার বিবেক আমায় জাগ্রত করে দিয়ে বলেছে, ‌ওরে নন্দীগ্রাম থেকেই ঘোষণা কর। এটা তোদের সব থেকে লাকি জায়গা। এটা সবচেয়ে ভাল জায়গা। এটা সবচেয়ে পবিত্র জায়গা।’‌ এদিন তেখালির মেগা র‌্যালি ও জনসভার আগে নন্দীগ্রামে একটি সরকারি প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সেই প্রশাসনিক সভা থেকেই নিখোঁজ পরিবারগুলির হাতে আর্থিক সাহায্যের চেক তুলে দেন তিনি। স্মরণ করেন আন্দোলনের শহিদদেরও। জানান, ১৩ বছর আগে আন্দোলনের সময় শহিদদের পাশাপাশি ১০ জন আন্দোলনকারী নিখোঁজও ছিলেন। তাঁদের এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রশাসনিক সভার পরই মমতা তেখালির জনসভায় চলে যান। সেখানে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নন্দীগ্রাম এখনও আমার হৃদয়ে আছে। আমি কারও কাছে জ্ঞান নেব না, নন্দীগ্রাম আন্দোলন কে করেছে!’ অন্যদিকে, নন্দীগ্রামে মমতার সভা নিয়ে এদিন কড়া প্রতিক্রিয়া দেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, ‘৭ জেলা থেকে লোক নিয়ে এসেছিল তৃণমূল। ৩০ হাজার লোক নিয়ে মিছিল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারের সভা থেকে আমি তাঁর সব কথার জবাব দেব।’

যদিও মমতার নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কলকাতার রাসবিহারীতে বিজেপির এক জনসভা থেকে স্বয়ং শুভেন্দু অধিকারী চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, ‘তিনি দাঁড়ান। আমি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, তাঁকে আমি আধ লক্ষ ভোটে হারাব। নন্দীগ্রামের জন্য কিছুই করেননি তিনি। ওখানকার মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবেন না। তিনি নন্দীগ্রামে দাঁড়াতেই পারেন। আমার দল আমাকে নন্দীগ্রামে পাঠিয়ে দিক বা অন্য কাউকে দাঁড় করাক। লিখে রাখুন, সন্ধেবেলায় ঘড়িতে সময় দেখে তারিখ দিয়ে লিখে রাখুন, আধ লক্ষ ভোটে যদি নন্দীগ্রামে মাননীয়াকে হারাতে না পারি, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’ তাঁর পরিষ্কার কথা, ‘আসলে তৃণমূল ভয় পেয়ে গিয়েছে। তাই কী করবে বুঝতে পারছে না! এটা একটা গিমিক। সাহস থাকলে সত্যিই তিনি নন্দীগ্রামে দাঁড়ান। গো–হারা হারবেন।’

শুভেন্দু অধিকারীকে পাল্টা আক্রমণ করে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘ওঁর যদি হিম্মত থাকে এবং বাপের ব্যাটা হয়, নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াক। দিদির সিদ্ধান্তই আমাদের কাছে চূড়ান্ত। দিদি যদি নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ায়,‌ তা হলে ওঁকে কে আটকাবে। সারা রাজ্যের কর্মীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা আরেকবার অভিনন্দন জানাই।’ যদিও বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করেছেন মমতাকে। বলেছেন, ‘২০১৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ২৯৪টা কেন্দ্রে আমিই প্রার্থী। আগে যদি জানতাম এদের প্রার্থী করতাম না। এক মাস আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ২৯৪টা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক আমিই। এখন তিনি ঘোষণা করলেন নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন। তিনি আর কত জায়গায় দাঁড়াবেন? আসলে নীচের তলা থেকে তৃণমূল কর্মীরা সরে যাচ্ছেন। তাঁদের আটকাতে এসব বলছেন তিনি। এভাবে তৃণমূল ডোবা নৌকোকে তীরে ভেড়াতে পারবে না। আমরা ভবানীপুরেও চমক দেব।’

পশ্চিমবঙ্গের সহকারী পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য এক টুইটে বলেছেন, ‘১০ বছরে এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুরের আসন ছেড়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করছে, তিনি রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। মমতা কি মানুষকে জানাবেন যে, কেন নন্দীগ্রামের প্রতিবাদী কৃষকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় সিবিআইয়ের চার্জশিটে নাম থাকা আইপিএস সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলে নেওয়া হল?’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির বক্তব্য, ‘তিনি ভবানীপুরে হারের আশঙ্কা করছেন বলে আরেকটি বিকল্প খোলা রাখছেন। তিনি বুঝতে পেরে গিয়েছেন, ভবানীপুরে তাঁর জনপ্রিয়তা তলানিতে। কারণ, ওই বিধানসভা কেন্দ্রে বড় সংখ্যায় অবাঙালি ভোটার রয়েছেন। তিনি জানেন, এবার আর ভবানীপুর রক্ষা করতে পারবেন না। তাই বিকল্প হিসেবে নন্দীগ্রামের কথা বলছেন।’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘ভবানীপুরে তিনি জিততে পারবেন না বুঝে নিজের জন্য সব থেকে নিরাপদ আসনটা সবার আগে বেছে নিলেন। এভাবে নিজের পরাজয় নিজেই স্বীকার করে নিলেন তিনি। সঙ্গে বিজেপিকে বার্তা দিলেন আমি তোমাদের পিছনে আছি। তৃণমূল ও বিজেপিকে পরাস্ত করতে হবে, এটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানে।’ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান বলেন, ‘একা শুভেন্দু যেভাবে মমতার মনে ভয় ধরিয়েছেন, তাতেই এই অবস্থা! তবে এটা তো সবে শুরু। আরও অনেক বাকি আছে। তৃণমূলের পতন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই একটি জল্পনা তৈরি হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী নিজের কেন্দ্রকে আর নিরাপদ মনে করছেন না। তিনি নিজের জন্য একটি নিরাপদ কেন্দ্র খুঁজছেন। তাই অনেকেই তাঁর হয়ে বিকল্প আসন খুঁজছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বুঝে গিয়েছেন, ভবানীপুরে তাঁর আর জেতার সম্ভাবনা নেই। কারণ তাঁর করা উন্নয়নের জোয়ারে সব ভেসে গিয়েছে। তাই আর ভবানীপুরে দাঁড়ানোর সাহস নেই।’‌

প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‌আসলে লোকসভার ফল দেখে চিন্তায় পড়েছেন মমতা। কারণ ওই ফলে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, নিজের আসনেই পিছিয়ে রয়েছেন তিনি। বাধ্য হয়ে তাই গদি বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ এদিকে, দক্ষিণ কলকাতায় দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির মিছিলে এদিন তুমুল উত্তেজনা দেখা দেয়। মিছিল লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়া হয়। আক্রমণকারীদের দিকে পালটা এগিয়ে যান বিজেপি সমর্থকরাও। ফলে রণক্ষেত্রের আকার ধারণ করে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি এলাকা। বিজেপির অভিযোগ, চারু মার্কেট থানা এলাকায় দলের পতাকা হাতে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল কর্মী–সমর্থকরা। এর পরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ওই এলাকা। ইটবৃষ্টির পাল্টা বাইক, সাইকেল রিকশা ভাঙচুর করতে শুরু করা হয়।

এদিন বিজেপির মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও নেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীও। পরে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আগে থেকে অনুমতি নেওয়ার পরও মিছিলের ওপর আক্রমণ করে তা ভণ্ডুল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে তৃণমূল। পুলিশও নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ।’ ইট বৃষ্টিতে আহত হয়েছেন বিজেপির এক সমর্থকও। এর আগে পুরুলিয়া এবং নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর মিছিলেও একই ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। তখনও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..