বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানুয়ারি মাসে নন্দীগ্রামে নিজেই জানিয়েছিলেন, তিনি সেখানে প্রার্থী হবেন। সেই সঙ্গে নিজের কেন্দ্রেও প্রার্থী হবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের ওই জনসভায়। কিন্তু, তাঁর ঘোষণার পরই সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতা শুভেন্দু অধিকারী চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন, নন্দীগ্রামে মমতা প্রার্থী হলে বিজেপি জিতবেই। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে এ কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেবল নন্দীগ্রামেই প্রার্থী হতে হবে। একসঙ্গে দুটি কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে নিজের একটি কেন্দ্রে জেতার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখা চলবে না বলেও শুভেন্দু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেদিন।
শনিবার কার্যত শুভেন্দু অধিকারীর সুরেই সুর মিলিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় এবং দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ একযোগে টুইট করে জানালেন, সত্যি যদি নিজেকে এতটাই জনপ্রিয় ভাবেন, তা হলে মমতাকে শুধুমাত্র নন্দীগ্রামেই প্রার্থী হতে হবে। আর তিন বিজেপি নেতার এই সম্মিলিত টুইটের পর রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু কেন এমন টুইট করলেন বিজেপি নেতারা? কেনই বা তৃণমূল নেত্রী এবার দুটি আসনে প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবছেন? এই প্রশ্নেরই আপাতত উত্তর খুঁজে চলেছেন পশ্চিমবাংলার রাজনীতি বিশ্লেষকরা। মমতার দুটি আসনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী জানুয়ারিতেই স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘না দিদিমণি, নন্দীগ্রামের পাশাপাশি অন্য কোনও আসন থেকে লড়াই করা চলবে না। আপনাকে প্রার্থী হতে হবে শুধু নন্দীগ্রামেই। যদি সাহস থাকে, তা হলে একটি আসনেই প্রার্থী হবেন। আর সেখানে আপনাকে আমি অর্ধেক লক্ষ ভোটে হারাবই।’ যদিও শুভেন্দু অধিকারীর সেই চ্যালেঞ্জের কোনও জবাব মমতা দেননি।
এবার তৃণমূল দলনেত্রীকে আক্রমণ করতে ওই পথেই নতুন কৌশল নিল বিজেপি। দলের তিন শীর্ষনেতা একযোগে ফের একই দাবি জানিয়ে এদিন মমতার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় এক টুইটে লিখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন বলে নিজেই ঘোষণা করে দিয়েছেন। যদি তিনি মনে করেন, ওই কেন্দ্র থেকে তিনি জিতবেনই, তা হলে তিনি ওই কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হন। তবে, তাঁকে শুধু ওই কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হতে হবে। নন্দীগ্রামের পাশাপাশি অন্য কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হওয়া চলবে না। তিনি যেন নিজের ঘোষণার খেলাপ না করেন।’
শুধু মুকুল রায়ই নন, সব চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, এদিন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের টুইটেও একই সুর শোনা গিয়েছে। তিনি আরও পরিষ্কার ভাষায় লিখেছেন, ‘মমতাদিদি তো নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন বলে নিজেই জানিয়েছেন। প্রকাশ্যে দলের কর্মীদের সামনে তিনি সে কথা ঘোষণাও করেছেন। ভালো কথা। কিন্তু বিস্ময়ের কথা হল, তিনি এ কথা কখনও বলেননি যে, তিনি শুধু নন্দীগ্রাম থেকেই লড়াই করবেন। নিজের জয়ের ব্যাপারে যদি তিনি নিশ্চিত হতেন, তা হলে সে কথা বলতে তাঁর অসুবিধে হত না। আমরা চাই, নিজের সম্ভাব্য জয় নিয়ে যদি তাঁর মনে কোনও সংশয় থেকে না থাকে, তা হলে তিনি নন্দীগ্রামেই শুধু প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা করে দিন। না হলে ধরে নেব যে, নন্দীগ্রামের মানুষের ওপর তাঁর কোনও ভরসা নেই।’
দেখা যাচ্ছে, আলাদা টুইট হলেও মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের টুইটে মূল বক্তব্য কিন্তু একই। শুধু তিনিই নন, দিলীপ ঘোষও এ দিন প্রায় একই কথা লিখেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘দিদি কখন কী বলেন, তার ঠিক নেই। তিনি নন্দীগ্রামে বা নিজের পুরনো কেন্দ্র কোনও জায়গাতেই জিতবেন না। নিজের কেন্দ্রে জিতবেন না বলেই নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। আবার নন্দীগ্রামে যে জিতবেনই, তা নিয়েও তাঁর মনে সংশয় রয়েছে। তাই দুটি কেন্দ্রে একসঙ্গে দাঁড়াতে চাইছেন। তা হবে না। তাঁকে একটি আসনেই প্রার্থী হতে হবে। দুটি কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে যে কোনও একটি থেকে জিতলেই চলবে, এমন সুবিধা তাঁর নেওয়া চলবে না। যেহেতু ঘোষণা করে দিয়েছেন, তাই তাঁকে প্রার্থী হতে হবে নন্দীগ্রামেই।’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, শুধু নন্দীগ্রামে দাঁড়াতে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনৈতিক ভাবে চাপে রাখার কৌশলই নিতে চাইছে বিজেপি। যদিও মমতা নিজে বিজেপির চ্যালেঞ্জের জবাবে মুখ খোলেননি। কেন না, বিজেপির চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে হলে তাঁকে হয় ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে, নতুবা ‘না’ বলতে হবে। যদি ‘না’ বলেন, তা হলে তাঁকে স্বীকার করে নিতে হবে, তিনি একটি কেন্দ্রের ওপর ভরসা করতে পারছেন না। আবার যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তা হলে তিনি নিজে যা ভেবে ওই পথে চলতে চাইছেন, তা থেকে সরে আসতে হবে। তাই আপাতত তিনি নীরবতাকেই আশ্রয় করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে তাঁকে একটি সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এখন দেখার শেষ অবধি তিনি কী সিদ্ধান্ত নেন!