আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ফরাসি সেনারা আলজেরীয় উকিল ও স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা আলী বুমনজিলকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন। এর মাধ্যমে ১৯৫৭ সালে বুমনজিলের মৃত্যুর ৬৩ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে হত্যার কথা স্বীকার করলো ফ্রান্স। এর আগে ফরাসি বাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতে স্বাধীনতাকামী এই যোদ্ধার মৃত্যুর পর তার আত্মহত্যার দাবি করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার প্যারিসের ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে আলী বুমনজিলের চার নাতির সাথে সাক্ষাতে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক এই অপরাধের কথা স্বীকার করেন ম্যাকরন।
ইমানুয়েল ম্যাকরন বলেন, ‘তিনি আত্মহত্যা করেননি। তাকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আলজেরিয়ার যুদ্ধের সময় যেই করুক না কেন, কোনো অপরাধ, কোনো নির্মমতা ক্ষমা করা বা গোপন করা হবে না। সাহস ও স্পষ্ঠভাবে তা দেখা হবে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যাদের জীবন চূর্ণ হয়ে গেছে এবং ভাগ্য ছিন্নভিন্ন হয়েছে।’
আলজেরিয়ায় উপনিবেশিক শাসন ও ফ্রান্সের আধিপত্যের বিরুদ্ধে আলজেরীয়দের স্বাধীনতার সংগ্রামের স্মৃতি নিয়ে ফরাসি ঐতিহাসিক বেনজামিন স্টোরার এক প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে বুমনজিলের হত্যাকাণ্ডের এই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এলো।
প্রেসিডেন্ট ম্যাকরনের অনুমোদনে এই প্রতিবেদন তৈরির কাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়। এই বছরের জানুয়ারিতে প্রতিবেদন পেশ করা হয়। আলজেরিয়ার জনগণের ‘দীর্ঘ সময়ের অভিযোগ ও দাবিতে সাড়ার উদ্যোগ’ এবং ফরাসি ও আলজেরীয়দের ব্যবধানের মাঝে ‘সেতু বন্ধনের’ পদক্ষেপ হিসেবে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বুমনজিলের বিধবা স্ত্রী মালিকা দীর্ঘদিন তার স্বামীর মৃত্যুর পেছনের সত্যের অনুসন্ধানে কঠোর সংগ্রাম করেন। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৫৭ সালে তার বাবা বেলকাসিম আমরানি, ভাই আন্দ্রে আমরানি ও বন্ধু সালহ মোহান্দও নিখোঁজ হয়েছেন।
২০০০ সালে আলজেরিয়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ফরাসি বাহিনীর গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল পল অসারেস জানান, ওই সময় নির্যাতনকে জিজ্ঞাসাবাদের ‘বৈধ উপাদান’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং জল্লাদের ভূমিকায় তার বাহিনীকে ব্যবহার করা হতো।
এক চোখের এই জেনারেল তখন জানিয়েছিলেন, আলী বুমনজিলকে ১৯৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তার বাহিনী গ্রেফতার করে। পরে নির্যাতন করে হত্যার পর তাকে ভবন থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়।
এলিসি প্রাসাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আলজিয়ার্সের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাঝে ফরাসি সেনাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নির্জন কারাবাসে নিয়ে নির্যাতনের পর ২৩ মার্চ, ১৯৫৭ তারিখে তাকে হত্যা করে। পল অসারেস নিজে স্বীকার করেছেন, তিনি তার অধীনস্ত একজনকে তাকে হত্যা করে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।’
ফরাসি এক আদালত অসারেসকে ২০০২ সালে নির্যাতন সমর্থনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। পরে দেশটির সর্বোচ্চ সম্মাননা লেজিওন অব অনারের পুরস্কার তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়।
১৩২ বছরের উপনিবেশিক শাসনের পর নির্মম এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৬২ সালে আলজেরিয়া স্বাধীন হয়। আট বছরের স্বাধীনতার লড়াইয়ে আলজেরিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ নিহত হয় বলে ধারণা করেন ঐতিহাসিকরা। সূত্র : ইয়েনি শাফাক
আরও পড়ুন
আল জাজিরার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা