একাত্তরের ৭ই মার্চ ও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনাসভায় বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে একটি পত্রিকায় ছাপিয়েছে ৯ মার্চে ১৯৭১ সালে মাওলানা ভাসানী পল্টনে ময়দানে কী বললেন? তিনি বললেন, স্বাধীনতা মেনে নিন-ইয়াহিয়াকে ভাসানী। আর কাল বিলম্ব না করে স্বাধীনতা দিয়ে দিন। একদিনে, একজনের ভাষণে স্বাধীনতা আসেনি- এ কথাটাই আমরা বার বার বলতে চেয়েছি। আমাদের সেই বক্তব্যের পরে সরকারপ্রধান ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক কথা বলেছেন যেটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি বলেন, কেন এই মিথ্যাচার? এর কারণটা কি? একটাই কারণ এখানে শুধুমাত্র তাদের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্যকে চরিতার্থ করতে চায়, তাদের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে, একজন মাত্র ব্যক্তি তার একক ঘোষণায়, তার একক কথায় দেশ মুহূর্তের মধ্যে স্বাধীন হয়ে গেছে। ৯ মাস কি কষ্ট করে, লড়াই করে যুদ্ধ করেছে, এক কোটির ওপরে মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে চলে গেছে বাড়ি-ঘর ছেড়ে সব কিছু। এখানে যারা ছিলেন প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর কথা চিন্তা করেছেন, তুলে নিয়ে গেছে পাকিস্তানি বাহিনীরা, ফিরে আসেনি। এখানে কত মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন- সেসব কথা উচ্চারণ কিন্তু হয় না। তাদের কথা কেউ বলে না।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনি যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন তাহলে কি যুদ্ধ শুরু হতো? হতো না। উনার স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবং যুদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘উই রিভোল্ট’ এই কথা মধ্য দিয়ে এবং প্রবাসী সরকার গঠন হওয়ার অনেক আগেই হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়াতে জিয়াউর রহমান সাহেব, আমাদের এমএজি ওসমানীসহ সেক্টার কমান্ডাররা সবাই বসে বৈঠক করে ন্যাশনাল কমান্ড ফর লিবারেশন ওয়ার তারা তৈরি করে ফেলেছেন। সেটা ৪ এপ্রিল।
আরও পড়ুন : মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করলেন দুই প্রধানমন্ত্রী
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কোনো একজন বললেন যে, ২৫/২৬ মার্চ। এটা হাস্যকর, এটা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়। এটা কেউ বিশ্বাস করবেন না এ জন্য যে, দেখা যায় যে, উনি এমন সমস্ত কথা বলেন, যার ঐতিহাসিক প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেন না । আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা কোনো নেতাকে ছোট করার জন্য নয় বা কাউকে বড় করার জন্য নয়। আমরা আমাদের স্বাধীনতাতে যার যার যে অবদান আছে, সেই অবদানকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। আজকে সে জন্যে আপনাদের (ক্ষমতাসীন সরকার) গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। আপনারা বিভিন্ন রকমের অসংলগ্ন কথা-বার্তা বলছেন, অপ্রকৃতিস্থ কথা-বার্তা বলছেন যেগুলোর সঙ্গে সত্যের কোনো চিহ্নমাত্র নেই। সত্য একটাই এদেশের সাধারণ মানুষ, কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষ তারা পূর্ব পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন, যুদ্ধ করেছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবের যুদ্ধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে।
আরও পড়ুন : হাজী সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল
আওয়ামী লীগের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবশ্যই আপনাদের অবদান আছে। অবশ্যই বিরাট বিরাট অবদান আছে। ১৯৭১ সালের আপনাদের যে অবদান সেই অবদান কেউ কোনোদিন আমরা অস্বীকার করি না। একই সঙ্গে আপনারা যখন মূল নায়কের অবদানটাকে অস্বীকার করেন সেটাকেও আমরা কোনো মতেই মেনে নিতে পারি না। আমি আগেও বলেছি, শহীদ জিয়ার খেতাব তুলে নেবেন। নিক। কে খেতাব পেল কি পেলে না তাতে কিছু আসে যায় না শহীদ জিয়ার। তিনি এদেশের মানুষের অন্তরে রয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ।
আরও পড়ুন : জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আপত্তিকর : রিজভী