কারখানার যন্ত্রে তৈরি সুলভ সামগ্রীর এই যুগে ক’জনই বা হাতে তৈরি অনন্য বস্তুর কদর করে! ইটালির ফ্লোরেন্স শহরে অভিনব ফ্লোরেন্টাইন পেপার কিন্তু এখনও যথেষ্ট জনপ্রিয়৷ কিছু কাগজ যন্ত্রে ছাপা হলেও সেই প্রক্রিয়ারও ঐতিহ্য রয়েছে৷
প্রত্যয় ইউরোপ ডেস্ক : শহর হিসেবে ফ্লোরেন্স শিল্প ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ৷ কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে কাগজ তৈরির ঐতিহ্যও চালু আছে৷ উপহারের মোড়ক থেকে শুরু করে বই ছাপানোর জন্য ফ্লোরেন্টাইন কাগজের অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে৷ কিছু ক্ষেত্রে এমনকি হাতে করে সেই কাগজ তৈরি হয়৷ কাগজ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান মারিয়া জানিনি বলেন, ‘‘এই কাগজকে ফ্লোরেন্টিন কাগজ বলা হয়, যদিও মার্বেল্ড পেপার সেটির আসল উৎস৷ কাগজের সজ্জার অত্যন্ত প্রাচীন কৌশল এটি৷ ফ্লোরেন্সে মূলত বই বাঁধানোর প্রক্রিয়ায় এর অনেক ব্যবহার হয়েছে৷ বই ও প্রিন্টিং ক্ষেত্রে এখানে চিরকাল এর যোগসূত্র ছিল৷”
ছয় প্রজন্ম ধরে মারিয়া জানিনির পরিবার কাগজ কারখানার মালিক৷ ‘জুলিও জানিনি এ ফিলিও’ ফ্লোরেন্স শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মার্বেল পেপার প্রস্তুতকারক৷ এখনো সেখানে হাতে করে কাগজ প্রস্তুত করা হয়৷
বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে সেই কৌশল শেখানো হয়৷ মারিয়া জানিনি এমনই এক পাঠক্রমের শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘‘আমি মার্বেল পেপার প্রস্তুত করবো৷ এই জিলেটিনের মধ্যে কিছু রং ছড়িয়ে দেবো৷ তারপর ধাপে ধাপে একটি নক্সা তৈরি করবো৷ সবশেষে তার উপর কাগজ বিছিয়ে দেবো৷ দেখবেন কাগজের সজ্জা কীভাবে ফুটে ওঠে৷”
উৎপাদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও কষ্টসাধ্য৷ অনেক ভালোবাসা নিয়ে খুঁটিনাটি বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দিতে হয়৷ একটিমাত্র কাগজের জন্য মারিয়া জানিনির প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে৷ প্রত্যেকটি কাগজের জন্য নতুন রং নিয়ে গোটা প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হয়৷ তবে তার ফল অসাধারণ হয়৷
আজকাল যন্ত্রের মাধ্যমে ফ্লোরেন্টিন কাগজ ছাপা হয়৷ রসি নামের কাগজের কারখানায় সেই প্রক্রিয়ারও দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে৷ ১৯৩১ সালে এক পরিবার সেই ছাপাখানার পত্তন করেছিল৷ প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগের প্রতিনিধি মাটিয়া রসি বলেন, ‘‘এই কারখানায় আমরা পুরানো যন্ত্র দিয়েও প্রিন্ট করি৷ কিন্তু গত শতাব্দীর পুরানো যন্ত্রগুলিকে নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে আধুনিক করে তোলা হয়েছে৷ এই সব প্রিন্টিং মেশিন ঘণ্টায় এক থেকে দেড় হাজার কাগজ ছাপতে পারে৷”
তবে চিরকার এত দ্রুত কাগজ ছাপা সম্ভব ছিল না৷ উনবিংশ শতাব্দীর এই অক্ষত প্রিন্টিং প্রেস ধীর গতিতে একের পর এক কাগজ ছাপতে পারতো৷ মাটিয়া রসি বলেন, ‘‘কোম্পানির জন্মলগ্নে এটাই ছিল প্রথম যন্ত্র৷ আমার পিতামহ আন্তোনিও এই প্রেসে কিছু কার্ড ছাপিয়ে কাজ শুরু করেন৷ এক জায়গায় কাগজ, অন্য জায়গায় কালি ভরতে হতো৷”
ফুলের নক্সা, সোনালী অ্যাকসেন্ট বা রেখা এবং উজ্জ্বল রং ফ্লোরেন্টাইন কাগজের অনবদ্য বৈশিষ্ট্য৷ দ্বাদশ শতাব্দীতে জাপানে নাকি মার্বেলড পেপার আবিষ্কৃত হয়৷ সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে সেই কাগজ ইউরোপে আসে৷ জাল করা অথবা মুছে যাওয়ার মতো বিপদ এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের জন্য সেই কাগজ ব্যবহার করা হতো৷ আজকাল মূলত সুভেনির বা উপহার হিসেবেই সেটির চল বাড়ছে৷ মারিয়া জানিনি মনে করেন, ‘‘মানুষ হাতে তৈরি ও অনন্য জিনিসের খোঁজ করে৷ একেবারে অনবদ্য৷ তারা রংয়ের প্রেরণা অথবা এক টুকরো অভিনব কাগজ হাতে পেতে পারে৷”
হাতে তৈরি হোক, অথবা যন্ত্রে ছাপা – ফ্লোরেন্টাইন কাগজের নক্সার মধ্যে এখনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছাপ পাওয়া যায়৷সূত্র : ডয়েচে ভেলে