বিশেষ প্রতিবেদন:
করোনা মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই প্যাকেজেরই বিস্তারিত তথ্য প্রতিদিন বিকেলে জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। শুক্রবারও তিনি তৃতীয় দফায় সরকারের পদক্ষেপগুলির কথা জানান। বৃহস্পতিবারও তিনি ক্ষুদ্র, ছোটো, মাঝারি শিল্পের জন্য ৩ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ এবং এদিন পরিযায়ী শ্রমিক ও কৃষকদের জন্য একগুচ্ছ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
তাঁর ঘোষিত প্যাকেজ নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুও জানিয়েছেন, এই প্যাকেজ সাধারণ ভারতীয়দের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ। তবে এই প্যাকেজ আরও আগেই দিতে পারত কেন্দ্রীয় সরকার। তবে সমালোচনায় সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমদিনই প্যাকেজকে তিনি ‘বিগ জিরো’ বলে উল্লেখ করেন। এমনকী, এই প্যাকেজকে তিনি অশ্বডিম্ব, আইওয়াশ, ধোঁকা, ভাঁওতাও বলেছেন।
এবার পাল্টা মুখ খুলল বিজেপিও। দলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানান। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার যে প্যাকেজ দিচ্ছে, তার পর বিরোধীদের আর কোনও কথা বলা উচিত নয়। তবে এই প্যাকেজের সুবিধা গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এই রাজ্য কতখানি সহযোগিতা করবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।’ তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘রাজ্যে যত কাজ হচ্ছে, সবই কেন্দ্রের দেওয়া টাকায়। আসলে দাদার টাকায় দিদি নিজের নাম কিনে চলেছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে ১০৫টি ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ফাঁস করে দিয়েছেন, মাত্র সাতটি ট্রেনের কথা এই রাজ্যের সরকার কেন্দ্রকে জানিয়েছে। এর পর রাজ্য সরকারের বলার মতো আর মুখ থাকে কি?’
শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি ‘ভারতের সবচেয়ে ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ করে তোপ দাগেন। তাঁর কথায়, ‘শুধু ভাষণ দেওয়াই তাঁর কাজ। আর কোনও কাজ নেই।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘এই মুখ্যমন্ত্রী শুধু টাকা চান। কিন্তু টাকা কী কাজে লাগবে, কী কাজে খরচ করলেন, তার হিসেব দেন না। আর সেইজন্য কেন্দ্র টাকা না দিলেই তাঁর গোঁসা হয়ে যায়। উল্টোপাল্টা কথা বলতে শুরু করেন। তিনি টাকা চাইবেন, কিন্তু হিসেব দেবেন না, তা তো হতে পারে না। কেন্দ্র টাকা দিলে, সেই টাকা খরচের হিসেব তাঁকে দিতেই হবে।’
তিনি আক্রমণাত্মক সুরে বলেন, ‘করোনা মোকাবিলার জন্য ২০০ কোটি টাকা খরচ করবেন বলে প্রতিদিনই তিনি টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজে বড় বড় কথা বলতেন। অথচ এখন দেখছি ক্লাবগুলির ভোট কিনতে ১৩০০ কোটি টাকা খরচ করে দিয়েছেন। কিন্তু ভিনরাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার খরচের ১৫ শতাংশও তিনি দিতে পারেন না। কেন্দ্রকে দিতে বলেন।’ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করেছে সরাসরি জেলাশাসকদের হাতে টাকা যাবে। এই চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে কাটমানি বন্ধ হয়। কিন্তু কেন্দ্রের টাকা যদি রাজ্য সরকারের হাতে না আসে, তা হলে তাঁর দল তো কাটমানি পাবে না। তাই রাজ্যকে যত টাকাই কেন্দ্র দিক না কেন, মুখ্যমন্ত্রী কোনওদিনই খুশি হবেন না।’