নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী জেলার বড়গাছি গ্রামের ছেলে মাহমুদ হাসান।অর্নাস ২য় বর্ষের ছাত্র।পারিবারিক অসচ্ছলতা কাটাতে পড়াশোনার পাশাপাশি একটা কিছু করতে চান। চাকরির চেষ্টা করে বেশ কয়েকদিন। কিন্তু বর্তমান চাকুরীর বাজারে যেখানে অর্নাস মাস্টার্সের সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে ও অনেকে চাকুরি পেতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে অর্নাসের একজন ছাত্রের জন্য চাকুরী টা যে সোনার হরিন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবুও মাহমুদ থেমে থাকে না। মাঠে নামে নতুন উদ্যমে।
মাত্র ১০ হাজার টাকা হাতে নিয়ে শুরু করে কাপরের অনলাইন ব্যবসা। যুক্ত হলেন উইমেন এন্ড ই কমার্স ফোরাম ( উই) এর সাথে। পরিচিত কিছু মানুষের কাছ থেকে মোটামুটি সাড়া পেলেও তেমন একটা লাভজনক হচ্ছিল না। হঠাৎ মাহমুদের মাথায় এলো” আম” বিষয় টি। আম খ্যাত রাজশাহী র ছেলে মাহমুদ আগ পিছ আর না ভেবেই আম নিয়ে কাজ শুরু করে দেয় । “আম বাজার “নামে তার পেইজ টি যখন উই এর সহযোগীতায় পরিচিতি পেতে থাকলো তখন সামনে এলো অন্য সমস্যা। যেহেতু মাহমুদ গ্রামেবসেই তার কাজগুলো করছিলো তার আশেপাশের মানুষের কাছে এটি হয়ে গেলে হাস্যরসের একটা ব্যাপার। মুখে মুখে সবাই বলতে লাগলো,পড়াশোনা জানা এ ছেলে শেষে কিনা আমের ব্যবসা করতেছে, হায় হায় রে। মানুষের এহেন নেতিবাচক মন্তব্যে মাহমুদ কষ্ট পেলেও থেমে যায়নি। তার কেবল মনে হতো আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, আমাকে আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর মাহমুদ তা অবশ্যই করে দেখিয়েছে।
“আম বাজার” এর মাধ্যমে প্রথম বছরেই মাহমুদ ২২ মন আম বিক্রি করতে সক্ষম হয়।পরবর্তি বছর ২.৫ টন এবং গত বছর তার সরবরাহকৃত আমের পরিমান দাড়ায় ৩ টন। মাত্র তিন বছরে এতটা সাফল্য পাবে এটা হয়তো মাহমুদ নিজেই আশা করেনি। আমের জনপ্রিয়তা দেখে এবার মাহমুদ গুড় নিয়েও কাজ শুরু করে। রাজশাহী র পাঠালি গুড়ের কথা কে না জানে? আর এই গুড়কে এবার মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে মাহমুদ। তাই গুড় নিয়ে ও সে সফল হয়।প্রতি শীত সিজনে সে প্রায় ২০০ কেজি র মত গুড় বিক্রি করতে পারে। এমন কি তার পাঠালি গুড় দেশ ছাড়িয়ে ইউকে,স্পেন, বেলজিয়াম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এবার শীত আসার আগেই স্পেন থেকে গুড়ের জন্য অগ্রিম অর্ডার পেয়েছেন তিনি।
উইমেন এন্ড ই কমার্স ফোরাম( উই) এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাহমুদ হাসান বলেন, উই এর জন্যই আমি মাহমুদ হাসান আজ একটা নতুন পরিচয় পেয়েছি। যারা আগে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো তারাই এখন সম্মান দেখায়,দোয়া করে। আমি অনেক খুশি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরে।সামনে আরো অনেক পথ বাকি।সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
বর্তমানে টিভির খবর বা পত্র পত্রিকায় শুধু যুব সমাজের অবক্ষয় আমাদের চোখে পরে সেখানে ২২ বছর বয়সী মাহমুদ হাসান অবশ্যই একটা ইতিবাচক বার্তা বহন করে সমাজের জন্য। আমরা আশা করি ঘরে ঘরে এমন সোনার ছেলে জন্ম নিবে। যে কিনা দায়িত্ব নিবে নিজের, সমাজের আর দেশের।
আমরা আপনার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।