গল্পটা একজন উদ্যমী নারী র , যিনি খুব অল্প সময়েই নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে হয়ে ওঠেছেন সাধারন থেকে অসাধারণ। তিনি হলেন মশলা রানী খ্যাত সাহান আক্তার।আমরা আশাকরি যে নারী জাগরন বা নারী উদ্যোক্তা তৈরীতে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে আমাদের এই মশলা রানী বা মশলা আপু খ্যাত নারী উদ্যোক্তা । চলুন শুনি তার গল্প…….
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন একটু অন্যরকম। নতুন কিছুর প্রতি ঝোঁক ছিলো তাঁর সবসময় । একটা সাধারণ কিছুকে অসাধারণ করে তোলার বাতিক থেকেই তিনি ছিলেন সৃজনশীল। কিশোরবেলাটা কেটেছে আমেরিকায়। অন্য আট/ দশটা কিশোরীর মতোই তিনিও ছিলেন চঞ্চলা হরিণী।নিজের পছন্দটাকে প্রাধান্য দেয়া তিনি একসময় জড়িয়ে পড়েন ভালোবাসায়। সেই ভালোবাসার টানে আমেরিকার বিলাসবহুল জীবনযাপন ফেলে উড়ে চলে আসেন বাংলাদেশে। আবেগের বশে দেশে এসেই সম্পর্কের ঝড়ের সম্মুখীন হন। সেই ঝড়ে সব বিলাসী জীবন উলটপালট হয়ে যায় সাহান আক্তারের।
তবুও জীবন চলে জীবনের গতিপথ অনুসরণ করে। সাহান আক্তারের জীবনও চলছে সেভাবেই। আমেরিকার আত্মীয় স্বজনদের চিরতরে ছেড়ে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সংসার পাতেন। শুরু হয় তার নতুন জীবনের নতুন গতিপথ।
সংসার আঁকড়ে ধরে একে একে নিজের শখ আহ্লাদ সব জলাঞ্জলি দিয়েছেন। দু’টো সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে চলছিলেন। কিন্তু মনের ভেতরের সুপ্ত বাসনা আর নতুন কিছু করার ইচ্ছেটাকে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন অনেকটা বাধ্য হয়েই।
একসময় সুপ্ত ইচ্ছেটা হঠাৎ করেই যেনো বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। কিছু একটা করতে হবে, যা সম্পূর্ণ স্বাধীন কিন্তু নিজেকে স্বাবলম্বী করবে।
রান্নার প্রতি একটা টান ছোটবেলা থেকেই ছিলো। একটা সাধারণ খাবারকে নানা কৌশলে মসলার ভিন্নতম প্রয়োগের মাধ্যমে অসাধারণ করে তোলার চেষ্টা করতেন সবসময়। নিজের সংসারেও তিনি মসলা নিজের হাতে তৈরি করতেন এবং রান্নায় ভিন্নতা যোগ করতেন। হঠাৎ মনে হলো এই মসলাটাকেই তো পুঁজি হিসেবে নেয়া যায়।
তারপর থেকে নানাভাবে এক্সপেরিমেন্ট চালাতে শুরু করলেন। স্বামীও উৎসাহ দিতে লাগলেন। কিন্তু একটা কিছু উদ্যোগ নিলে তো কিছু বাড়তি টাকার প্রয়োজন! আবারও দমে গিয়েছিলেন তিনি। সংসার পরিচালনার পাশাপাশি তিনি স্বাধীনভাবে শিক্ষকতাও করতেন, তবে তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে না। টিউশনি করাটাকে তিনি স্বাধীন শিক্ষকতা মনে করেন। যেহেতু আমেরিকায় বড় হয়েছেন, তাই ইংরেজির উপর দখল ছিলো, তাই বেছে নিলেন ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্ড।
পাশাপাশি মসলা নিয়ে নানা কৌশল রপ্ত করতে থাকেেন। আমেরিকায় তিনি পাঁচ বছর অর্গানিক মসলা নিয়ে কাজও করেন। তাঁর ইচ্ছাশক্তি এবং উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে এগিয়ে আসে অনলাইন গ্রুপ Queendom’s ( নারীদের রাজ্য)। ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দেন গ্রপের এডমিন ফারজানা সুলতানা লিমা। প্রতি তিনমাস পরপর ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরি করে নারীকে স্বাবলম্বী করার মহান উদ্যোগ নেয় Queendom’s.
সেই ঋণের টাকায় সাহান আক্তার শুরু করেন তাঁর স্পেশাল মসলা ব্যবসা। সম্পূর্ণ নিজের হাতে তৈরিকৃত নানা ধরনের মসলা সম্ভার নিয়ে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন চমৎকার অর্গানিক স্পেশাল মসলা। ক্রেতারা মসলার জগতে নতুন এই মসলা পেয়ে দারুণ খুশি।খুব অল্প সময়ে ক্রেতাদের মন জয় করে কাজে আরও বেশি উদ্যমী হয়ে উঠেন। Queendom’s থেকে আয়োজিত এক উদ্যোক্তা মেলায় অংশগ্রহণ করে মাত্র ১০ দিনে সাহান আক্তার আয় করেন অর্ধ লাখ টাকা। খুব শীঘ্রই তিনি হতে যাচ্ছেন লাখপতি নারী উদ্যোক্তা।
তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা ছিলো Queendom’s গ্রুপের এডমিনের। তিনি সাহান আক্তারের নাম দেন ‘মসলা রানী।’
সামনে আরও এগিয়ে যাবেন আমাদের এই কর্মোদ্যমী মসলা রানী সাহান আক্তার।
তাঁর জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো আমাদের পক্ষ থেকে।