ওয়েব ডেস্ক: কোভিডের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার পথে অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউনেস্কাপ) সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, দারিদ্র্যতা হ্রাস এবং উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এমপিএফডি) সংক্রান্ত কমিটির তৃতীয় অধিবেশন বুধবার (২০ অক্টোবর) শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রী অধিবেশনে ইউনেস্কাপের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারির বিশেষ আমন্ত্রণে কিনোট স্পিকার হিসেবে যোগ দিয়ে এ কথা জানান।
এ কমিটির অধিবেশন প্রতি দু’ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা এতে যোগ দিয়ে থাকেন।
ভিডিও বার্তার মাধ্যমে উপস্থাপিত মূল বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার অবিস্মরণীয় পথ পরিক্রমার ওপর আলোকপাত করে আঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কোভিড -১৯ আমাদের উন্নয়নের পথে বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছিল কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার পথে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে।
মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন যে, সময়মতো হস্তক্ষেপের কারণে যখন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৩ শতাংশের অধিক সংকোচন দেখা যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ ২০২০ ও ২০২১ সালে যথাক্রমে ৩.৫ শতাংশ এবং ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করে অর্থমন্ত্রী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নেতাদের প্রতি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সার্বজনীন এবং সাশ্রয়ী টিকা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য গর্ব অনুভব করে। একইভাবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অন্যান্য বেসামরিক কর্মকাণ্ডেও সরাসরি অবদান রাখতে আগ্রহী।
অর্থমন্ত্রী প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, প্রমাণকভিত্তিক নীতি বিশ্লেষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং চাহিদাভিত্তিক আঞ্চলিক উপদেষ্টা পরিষেবার মাধ্যমে ইউনেস্কাপ বাংলাদেশকে বিরূপ পরিবেশে টিকে থাকার সক্ষমতা তৈরি করতে এবং আঞ্চলিক সংযোগকে গভীর করতে সহায়তা করবে। সেইসঙ্গে সব স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে সমর্থন ও বহু অংশীদারত্ব বিকাশে সহায়তা করবে।
তিনি ইউনেস্কাপের একটি বিষয়ভিত্তিক উপদেষ্টা গোষ্ঠী গঠনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং আশা করেন যে, এটি সদস্য দেশগুলোকে তাদের উপযুক্ত সামষ্টিক-অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা করে এমন সামষ্টিক-অর্থনৈতিক নীতি-পরামর্শ দিতে সক্ষম হবে।
বক্তারা এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনায় বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক নীতি এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন যা কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আর্থিক সম্পদের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের সংযোগ সাধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন যা তাদের অর্থনীতিকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ঘাত সহায়ক এবং টেকসই উন্নয়নের পথের দিকে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এ সম্মেলনে মূল কমিটির আলোচনার পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনা ও সাইড ইভেন্টের আয়োজন করা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে অংশগ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে।
থাইল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী আড়খোম টারম্প পিতিয়া আইসিথ, ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী শ্রী মুলিয়ানি ইন্দ্রবতী, ভুটানের অর্থমন্ত্রী লিওনপো নামগে শেরিং, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী এইচ ওমর আইয়ুব খান উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন।