মানুষের কাছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রত্যাশা, তারা যেন সব প্রকার অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে মুক্ত থাকে। তারা যেন কারো সঙ্গে কথা কিংবা কাজে জুলুম না করে। এমন কোনো মন্দ কাজ যেন তার দ্বারা সংঘটিত না হয়; যা আল্লাহ তাআলার অপছন্দ। এক কথায় মানুষ নিজেকে একজন আল্লাহ প্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলবে। এ জন্য মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে।
অন্যায়ভাবে যারা মানুষের ওপর জুলুম করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ أَلِيمٍ
‘সুতরাং জালেমদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক দিনের আজাবের দুর্ভোগ।’ (সুরা যুখরুফ : আয়াত ৬৫)
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জুলুম নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকো, কেননা কেয়ামতের দিন তোমার কৃত জুলুম অন্ধকাররূপে ধেয়ে তোমার সামনে এগিয়ে আসবে। লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা থেকে দূরে থাকো, কেননা লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা আত্মমর্যাদাকে আক্রান্ত করে হত্যা করায় উস্কিয়ে দেয় আর সম্মানজনক বস্তুর মানহানী ঘটায়।’ (মুসনাদে আহমাদ)
ইসলাম এমন এক শান্তি প্রিয় ধর্ম, যেখানে কাউকে গালিগালাজ তো দূরের কথা কোনোরূপ অন্যায় কাজের শিক্ষাও দেয় না। এক কথায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষাই ইসলাম প্রদান করে। হাদিসে এসেছে-
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনকে গালিগালাজ করা বিদ্রোহাত্মক কাজ আর তার সঙ্গে লড়াই করা কুফর।’ (মুসনাদে আহমাদ)
– হজরত আব্দুর রহমান বিন শিবল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা দুষ্ট প্রকৃতির হয়। বর্ণনাকারী বলেন, নিবেদন করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ তাআলা ব্যবসা বাণিজ্য কি বৈধ করেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কেন নয়? কিন্তু তারা যখন বেচা-কেনা করে তখন মিথ্যা বলে আর কসম খেয়ে খেয়ে মূল্য বাড়ায়’। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘পাপাচারীরা নরকবাসী’। নিবেদন করা হলো ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পাপাচারী কারা?’ এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘নারীরাও পাপাচারী হয়ে যায়।’ একজন ব্যক্তি নিবেদন করলো ‘হে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ওরা কি আমাদের মাতা, ভগ্নি আর সহধর্মিণী নয়?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন ‘কেন নয়! তবে তাদের কিছু দেয়া হলে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না আর তাদের ওপর যখন কোনো পরীক্ষা আপতিত হয় তখন তারা ধৈর্যও রাখে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)
এখানে সেই সব ব্যবসায়ীদের ভেবে দেখা দরকার যারা মানুষদের মাপে ঠকায় বা কম দেয় আর খারাপ জিনিস দেয় এবং অধিক মুনাফার জন্য মজুদ করে রাখে। তাই ব্যবসা বাণিজ্য খুবই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিৎ, ব্যবসায় সৎ থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে
আমরা যদি কারো অধিকার হরণ করি তাও কিন্তু জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিবেদন করি, ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন্ জুলুমটি সবচেয়ে বড়?’ উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সব থেকে বড় অন্যায় হল, কোনো ব্যক্তি নিজের ভাইয়ের প্রাপ্য অংশ থেকে একহাত পরিমাণ জমি জবর দখল করে। এমনকি ঐ জমির এক টুকরা পাথরও যদি সে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিয়ে থাকে, তবে পাথরের তলার ঐ জমিটুকু পরিপূর্ণ আকারের এক কাঁটায় পরিণত করে কেয়ামতের দিন তার গলায় ঢুকিয়ে দেয়া হবে আর জমির তলদেশে কি লুকানো আছে তা ঐ পবিত্র সত্তা ব্যতিরেকে কেউই জানেনা, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সব ধরনের অন্যায়, জুলুম ও মন্দ কর্ম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন। শ্রেষ্ঠনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান জীবনাদর্শ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।