ডা. জসিম তালুকদার, প্রতিনিধি চট্টগ্রাম জেলাঃচট্টগ্রামের ডিসি সহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলফাইল ছবি
আদালত নির্দেশ দেয়ার পরেও কয়েক দফা সময় নিয়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না করায় চট্টগ্রামের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না করায় জেলা প্রশাসক (ডিসি), পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ও উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আদালতের এই আদেশের কপি পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে তাদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে আগামী ৮ এপ্রিল পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।
পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার দ্বৈত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। আর পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সব অবৈধ ইটভাটা ৭ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেন আদালত। সেই সঙ্গে যেসব ইটভাটা কাঠ ও পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করছে তাদের তালিকা দেয়ার জন্যও বলা হয়।
চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক(ডিসি) ও পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালকের প্রতি আবার একই নির্দেশ দেয়া হয়। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে ইটভাটার মালিকরা আপিল বিভাগে আবেদন করলেও আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেননি।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোনো ইটভাটা চলতে পারে না। চললে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে অনেক ইটভাটা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ইটভাটার মালিকরা আপিল করলেও আদালত তাতে সাড়া দেননি। স্থিতাবস্থা বা স্থগিতাদেশ পায়নি তারা। তারপরও এসব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে দুই-দুইবার সময় নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সময় দিয়ে আদালত গতকাল ১৮ মার্চ আদেশের জন্য রেখেছিলেন।’
আবার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে সময় আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত তাদের সময় না দিয়ে আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন।’
হাইকোর্টের এ আদেশের পর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক একটি কর্মসূচি তৈরি করে ইটভাটা বন্ধের জন্য একজন নির্বাহী হাকিম নিয়োগ দেন। এদিকে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে হাই কোর্টের আদেশের স্থগিত বা স্থিতাবস্থা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার অবৈধ ১১ ইটভাটার মালিক।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি এসব আবেদন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। কিন্তু চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ না করে আবেদনগুলো শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়। আগামী ১৬ আগস্ট শুনানির তারিখ রয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ না করলেও সেই রায় বাস্তবায়নে তেমন একটা গরজ ছিল না সংশ্লিষ্টদের।
যে কারণে আদালতের আদেশ যথাযথভাবে প্রতিপালন না করায় নির্বাহী হাকিম এসএম আলমগীর ও জিল্লার রহমানের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করে এইচআরপিবি।
সে আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্ট ফের আদেশ দেন। গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চট্টগ্রামের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয় ওই আদেশে।
কিন্তু আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বারের মত সময় চায়। ওইদিন আদালত সময় মঞ্জুর করে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছিলেন।