1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

এই সঙ্কট আমাদের তৈরি, পরিণামও ভুগছি আমরাই

  • Update Time : শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০
  • ১৪০ Time View


উপমন্যু রায়

কারা যেন বলে মানুষ, মানে আমরা নাকি প্রাণী–শ্রেষ্ঠ? প্রাণীই বা বলি কেন, জীব–শ্রেষ্ঠ!
না, এ কথা কেউ বলে না। বলি আমরাই। আর সেটাই সত্য বলে বিশ্বাস করে আত্মরতিতে মগ্ন হয়ে পড়ি।
কে জানে আমাদের এই অদ্ভুত দম্ভ দেখে হয়তো অন্য প্রাণীরাও নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে! কিন্তু তাদের ভাষা আমরা জানি না বলে অনায়াসে তাদের কত সহজেই না অবজ্ঞা করে থাকি।

কিন্তু, চরম সত্য হল, আমরা একটা অপদার্থ জীব ছাড়া আর কিছু নই। আপনাদের মনে হতেই পারে, বড় স্পর্ধার কথা বলছি আমি। না, এটা কোনও স্পর্ধিত উক্তি নয়। বরং, এটাই সত্য। না হলে পৃথিবীটাকে আজ এত সহজে আমরাই কি এমন বিপদে ফেলে দিতে পারতাম?

এ বিপদ তো আর যে সে বিপদ নয়! এ বিপদ এক অজানা শত্রুর আক্রমণ। যে শত্রুকে আমরাই শঙ্খ বাজিয়ে আহ্বান করে নিয়ে এসেছি। ভবিষ্যতে হয়তো প্রকৃত ছবিটা অনেকটাই পরিষ্কার হবে। কিন্তু এটা তো সত্য, সেই অজানা শত্রুকে ডেকে এনে আমাদের গর্বের সভ্যতাকে একেবারে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি আমরাই!
তবে এই সঙ্কট তো একটা শিক্ষাও। এই দুঃসময় থেকে আমরা কি কিছু শিখতে পারব? আমাদের স্বার্থপরতা কি পারবে নিজের অন্তঃসারশূন্য অহঙ্কার ছেড়ে বেরিয়ে এসে সাধারণের পাশাপাশি সোজা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে? যদি না পারে, তা হলে বলব, মরাই ভালো এই অসভ্য দু’পেয়ে প্রাণী জাতটির। না হয় ধ্বংসই হয়ে যাক তথাকথিত অতি আধুনিক এই সভ্যতা।

‌অথচ কেউ যে ব্যাপারটা আগে বুঝতে পারেননি, তা কিন্তু নয়। শুনলাম, ২০১৮ সালেই নাকি ব্যাপারটার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন দেবী শ্রীধর নামে এক শিক্ষাবিদ। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তিনি। এখন ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। তবে ব্রিটিশ সরকারের সমালোচক হিসেবেই খ্যাতি তাঁর।
দু’বছর আগে ভারতীয় বংশোদ্ভুত এই মহিলা বলেছিলেন, পশুর মাধ্যমে এক চিনা নাগরিক সংক্রমিত হতে পারেন। আর সেই সংক্রমণ নাকি ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা পৃথিবীতে। সেটা হতে পারে মহামারীর চেয়েও ভয়ঙ্কর। চেলসি ক্লিন্টনের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক সমীক্ষায় এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।
শুধু তাই নয়, এমন সঙ্কট মোকাবিলায় সাতটি উপায় বলেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে। কিন্তু বরিস জনসনের সরকার সে কথায় নাকি কর্ণপাতই করেনি। আজ নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকদের মরণপণ চেষ্টায় অবশ্য শেষ পর্যন্ত বেঁচে ফিরেছেন বরিস। জানি না দেবী শ্রীধরের সেই পরামর্শ এখন তাঁর মনে পড়ছে কিনা!

কথা হল, বেবি শ্রীধর কী করে এমন ভয়ঙ্কর দিনের আগাম অনুমান করেছিলেন? কিংবা, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল, আমরা কেন তাঁর কথা বুঝতে পারলাম না? আরও কঠিন কথা হল, এই দিনগুলি কী ভাবে কাটিয়ে উঠব আমরা? ইতিমধ্যে এই করোনা নিয়েই ২০২০ সাল পাঁচ মাস পার করে দিয়েছে।
তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনের স্বাস্থ্য বিষয়ক আধিকারিকরা উহানে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। তার পর ধীরে ধীরে এ দেশ থেকে সে দেশ পেরিয়ে আজ গোটা পৃথিবীটাকেই কব্জা করে নিয়েছে এই অদৃশ্য দানব।
এ কথা অনস্বীকার্য, চিনের মানুষ নানা ধরনের খাবার খান। পশুপাখি থেকে কীটপতঙ্গ, তাদের খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র‌্য বাড়ায়। ইন্টারনেটের সৌজন্যে সে–সব দৃশ্য হরবখত আমরা দেখে থাকি। তাই প্রথমে যখন শোনা যায়, বাদুড়ের মাংস খেতে গিয়েই নাকি চিনের নাগরিকদের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়ায়, তখন ব্যাপারটা অস্বাভাবিক মনে হয়নি। তার পর তালিকায় যুক্ত হয় সাপ–সহ আরও বেশ কয়েকটি প্রাণীর নাম।

আর আজ তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‌হু)‌ শেষ পর্যন্ত স্বীকারই করে নিল, করোনা সংক্রমণের নেপথ্যে চিনের সেই বিতর্কিত উহানের সি ফুড মার্কেটের স্পষ্ট ভূমিকা রয়েছে। আচমকা ‘হু’–এর এই কথায় নড়েচড়ে বসতেই হবে।
কেন না, এতদিন তাঁরা কার্যত চিনকে আড়াল করেই এসেছে। যতবারই চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ততবারই বলেছে, চিনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের স্পষ্ট কোনও প্রমাণ নেই। তা হলে আজ কেন ‘হু’ এমন কথা বলছে?
যদিও পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির অনেকেরই বক্তব্য, উহানের বিতর্কিত ল্যাব থেকেই নাকি ছড়িয়েছে এই মারণ ভাইরাস। সেই অভিযোগের জবাবে, চিন পালটা জানিয়েছে, ওই ল্যাব নাকি ফ্রান্স এবং চিন যৌথ ভাবে চালায়। তার মানে ফ্রান্সও যুক্ত রয়েছে ল্যাবে। তারা আরও জানিয়েছে, ল্যাবের কর্মীদের নাকি ফ্রান্সই প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
কিন্তু অনেক পশ্চিমি বিশেষজ্ঞের ধারণা, ‘হু’–এর ওই বক্তব্য এইজন্যই প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। তার মানে সেই একই কথা। চিনকে আড়াল করতেই কাজ করছে ‘হু’। যে দাবি করে আমেরিকা ‘হু’–কে অর্থ সাহায্য পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, এর আগেও চিন দাবি করেছিল, কয়েকজন মার্কিন একটি অনুষ্ঠানে এসেছিল সে দেশে। তারাই নাকি চিনে ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে কোভিড–১৯ ভাইরাস। বলা বাহুল্য, সেই অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলে বৈধতা পায়নি।

ঘটনাটা যাই হোক, এ কথা সহজেই অনুমেয়, আগেও একটি লেখায় আমি বলেছি, করোনা সংক্রমণে কোনও না–কোনও ভাবে জড়িয়ে রয়েছে চিন। আসল সত্যটা আমরা জানতে পারিনি এখনও। জানি না এই সঙ্কট কবে কাটিয়ে উঠব আমরা! এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার পর হয়তো সত্য প্রকাশ্যে আসবে।
তবে ইতিমধ্যে অনেক দেশই কিন্তু চিনকে ঘটনার জন্য দোষী মনে করছে। শোনা যায় করোনা নিয়ে এতটাই বিরক্ত অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন যে, এক ঘরোয়া আলোচনায় তিনি নাকি চিনের নাগরিকদের খাবারের ব্যাপারে সংযত হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন।
আরেকটি খবরও উল্লেখযোগ্য। উহান থেকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করে দেওয়ায় চিনের কাছ থেকে ১৩ হাজার কোটি পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে জার্মানির জনপ্রিয় জাতীয় পত্রিকা ‘বিল্ড’। আবার আমেরিকায় কয়েকজন সাধারণ নাগরিক ও ব্যবসায়ী মিলে ফ্লোরিডার ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট আদালতে মামলা করেছেন চিনের বিরুদ্ধে। করোনার জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ তাঁরা ২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করেছেন।‌

চিনে এই সংক্রমণ কী ভাবে ছড়িয়েছে, সে ব্যাপারে যেমন প্রকৃত তথ্য কেউ জানতে পারেনি, তেমনই এই ভাইরাস সম্পর্কে পৃথিবীকে আগাম সতর্কও তারা করেনি বলে আমেরিকা, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া অনেকবারই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।পাশাপাশি পালটা একটি অভিযোগ জানিয়েছে চিনা দূতাবাসের একটি ওয়েবসাইট। ওই সাইটে পশ্চিমের দেশগুলিতে করোনা আক্রান্ত মৃত্যুর আধিক্য নিয়ে সেই দেশগুলিকেই দোষারোপ করা হয়। ঘটনায় এতটাই ক্ষুব্ধ হন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যে, তিনি ফ্রান্সে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূতকে তলব পর্যন্ত করেন। পাশাপাশি তিনি করোনা নিয়ে চিনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনাও করেছেন ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায়।‌

জানি না এই সঙ্কট আমরা কী ভাবে কাটিয়ে উঠতে পারব! যে–দিন পারব, অবশ্য যদি পারি, সে–দিন না হয় আমরা বিচার করব, বিশ্ব জুড়ে এই তথাকথিত কোভিড–১৯ নামে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে কে বা কারা রয়েছে! দোষ চিন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি বা অন্য যে কোনও দেশের হতেই পারে, তবে একটা বিষয় তো পরিষ্কার, অন্য কোনও প্রাণী, বা প্রাকৃতিক কারণ বা ভিনগ্রহী কোনও জীবের আক্রমণ নয়, পৃথিবীকে এই মারণ ভাইরাসের কবলে ফেলে দেওয়ার পিছনে রয়েছি আমরাই।
তার মানে এই সঙ্কট তৈরি করেছি যেমন আমরা, তেমনই ভয়ঙ্কর পরিণামটা ভুগতে হচ্ছে আমাদেরই।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..