❝একজন অনন্য শামসুল আলম আনু❞
আনিকা তাহ্সিন অর্না
বাংলাদেশ টেবিল টেনিস এর কিংবদন্তি, দক্ষিণ এশিয়ান টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম আনু। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট প্রথিতযশা ক্রীড়া সংগঠক। ক্রীড়াঙ্গণে যাকে সকলে ❝আনু ভাই❞ ভাই নামেই জানতেন এবং পরিচিত ছিলেন তার সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য। জনপ্রিয় ছিলেন টিটি ফেডারেশনসহ সম্পূর্ণ ক্রীড়াঙ্গণে। তার বাবা ছিলেন তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা ১৯৪৩ সালে পুরান ঢাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম বলেই হয়তো ছোটবেলা থেকেই বেশ আমোদ-প্রমোদ প্রিয় মানুষটি খুব স্বভাবতই খেলাধুলাকে নিজের জীবনের বিনোদনের খোরাক হিসেবেই বেছে নিয়েছিলেন। কর্মজীবনের প্রথম দিকে দেশ বাংলা সুগার মিল নামক কোম্পানিতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত থাকলেও পরবর্তীতে খেলাধুলাকেই জীবনের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় তিনি পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অতিবাহিত করেন। বর্তমানে তিনি উত্তরাতে বসবাস করতেন। ৩ ছেলের ২ জনকেই তিনি টি টি খেলার প্রতি আগ্রহী করেছিলেন। খুব যত্ন করে শিখিয়েছিলেন টি টি খেলা।বর্তমানে তার ১ ছেলে ইউ.এস.এ -তে এবং বাকি দু’জন দেশেই অবস্থা করছেন। খেলাধুলা জীবনের প্রথম ভাগে হকি দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে টেবিল টেনিস দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমান করেছিলেন যথাযথ কৃতিত্বের সাথেই। যুক্ত ছিলেন টিটি ফেডারেশনের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে এবং দক্ষিণ এশিয়ান টিটি ফেডারেশন ও দেশের অন্যতম প্রাচীন ক্লাব ❝ক্লাব ওয়ারী❞ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আজীবন সদস্য এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের বর্তমান কার্যনির্বাহী হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন তার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। কর্মজীবন ছাড়াও তার ব্যক্তিক জীবনেও তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত অমায়িক চরিত্রের অধিকারী।
দুই মাস আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছিলেন শামসুল। কিন্তু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ছিলেন পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি। কিছুটা সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার পরও নিজের পরিবারের সর্বোকনিষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে ঈদ পালন করেছিলেন। খুব সৌখিন এবং ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা প্রিয় মানুষটি ছিলেন অসম্ভব সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী যা ভাষায় বর্ণনাতীত। তবে ৩১ আগস্ট ভোর ৫.৩০ ঘটিকায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।সৌখিন প্রকৃতির মানুষ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন পরিবারের সদস্য মহলে। তার অমায়িক বন্ধুসুলভ আচরণ সদা সর্বদাই সবার নজর কারতো। ব্যক্তিত্বের ব্যপারে ছিলেন সচেতন। খুব স্বল্পভাষী মানুষটি তার ক্রীড়াঙ্গণের প্রিয় মুখই ছিলেন বরাবর।
সর্ম্পকে দাদাভাই হয় বলেই এই গুণীমানুষটির সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলাম। তার আমাকে দেয়া ২০ মিনিটের কথোপকথনে আমাকে বুঝিয়ে ছিলেন জীবনের নানামুখী পরিকল্পনা এবং তা আমাকে মুগ্ধ করেছিলোও বেশ।৭৮ বছর বয়সেও তিনি ছিলেন টি টি খেলার প্রতি সক্রিয়। টিটির যেকোনো টুর্নামেন্ট আয়োজনে সব সময় এগিয়ে এসেছিলেন তিনি। সদা সর্বদা প্রফুল্লচিত্তে করে গেছেন দিক প্রদর্শন। ক্রীড়াঙ্গণ হারিয়েছে একজন দক্ষ অভিভাবক। খুব নম্র, ভদ্র এবং শান্ত স্বভাবের ❝আনু ভাই❞ থেকে কেউ কখনো কোনো নেতিবাচক কথা শোনে নি সদাসর্বদা হাস্যোজ্জ্বল ও নমনীয় চরিত্রের অধিকার এই মানুষটি যেনো অস্পর্শী-মূর্ত প্রতীক হয়েই থেকে যাবেন ❝বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন❞ সহ সমগ্র ক্রীড়াঙ্গনের সকল সদস্যদ্বয়ের স্মৃতিতে। আমরা টেবিল টেনিস অঙ্গনে একজন গুণী অভিভাবককে হারালাম। এটা আমাদের দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের প্রত্যেকের স্মৃতিতে।
আনিকা তাহ্সিন অর্না
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়