বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
৬২৪ বছরে এই প্রথম। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথ এবার মাহেশের মাটিতে গড়াবে না। মাহেশের মন্দির ট্রাস্ট কমিটির তরফে এ কথা শনিবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি বৈঠকে মন্দির ট্রাস্ট কমিটি আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হুগলির জেলাশাসক, শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যানও। শুধু মাহেশের রথই নয়, অনেক বিখ্যাত মন্দিরও ১ জুন থেকে খুলছে না।
উল্লেখ্য, শুক্রবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ১ জুন থেকে মন্দির, মসজিদ এবং গির্জাগুলি খুলে যাবে। তবে সেগুলিতে ভিতরে ১০ জনের বেশি ঢোকা যাবে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই রাজ্যের বিখ্যাত মন্দিরগুলির অনেকগুলিই জানিয়ে দেয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ১ জুন থেকে মন্দির খোলা সম্ভব নয়।
১৩৯৬ সাল থেকে পশ্চিমবাংলার শ্রীরামপুরের মাহেশে এই রথযাত্রা উৎসব হয়ে আসছে। কথিত আছে, বাঙালি সন্ন্যাসী দূর্বানন্দ ব্রহ্মচারী পুরীতে জগন্নাথদেবের মন্দিরে ভোগ দিতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হলে অসম্মানে আমরণ অনশনের সিদ্বান্ত নেন। এই সময় জগন্নাথদেব দূর্বানন্দকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করান। শুধু তাই নয়, হুগলির মাহেশ নদীতে ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে বিগ্রহ তৈরি করে মন্দির প্রতিষ্ঠার আদেশ দেন।
সেই নির্দেশ পালন করেন দূর্বানন্দ। পরে এই মাহেশ মন্দিরেই তাঁর ভাবসমাধি হয়। তখন থেকেই এই মাহেশ ‘নব নীলাচল’ নামেও পরিচিত। রথযাত্রার সময় তখন থেকেই এখানকার স্নানপিড়ি ময়দানে একমাস ধরে মেলা বসে যায়। এখানে জগন্নাথ দেবের মূল মন্দির থেকে গুণ্ডিচা মন্দিরে ৫০ ফুট উঁচু রথটি টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্টোরথের দিন এই রথ ফের ফিরিয়ে আনা হয়।
৬২৪ বছর ধরে এই রীতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের জেরে এবার সেই রথের চাকা চলবে না। তবে রথ না চললেও মাহেশের মন্দিরে যথারীতি জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার পুজো হবে। কিন্তু রথে তোলা হবে না জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে। পরিবর্তে শিলা বিগ্রহ নিয়ে যাওয়া হবে প্রতীক হিসেবে। কোনও রকম ভক্ত সমাগম হতে দেওয়া হবে না।
শুধু মাহেশের রথই নয়, কলকাতা–সহ রাজ্যের বহু গুরুত্বপূর্ণ মন্দরের দরজাও খুলছে না ১ জুন। কালীঘাট, তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বর, তারকেশ্বর, বেলুড় মঠ–সহ বহু মন্দিরের দরজা সাধারণ ভক্তদের জন্য লকডাউন সময়ে এতদিনের মতো বন্ধই থাকছে। এইসব মন্দির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই মন্দিরগুলিতে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। তাই তাঁদের মধ্য থেকে দশ জন করে গুণে মন্দিরের ভেতরে ঢোকানো শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব ব্যাপার।
তা ছাড়া মন্দিরে না ঢোকালেও বাইরে অসংখ্য ভক্ত থাকবেন, তখন তাঁদের মধ্যেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই মন্দিরগুলি কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। আপাতত ১৫ জুন অবধি এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখছে তারা। তার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্তে নেওয়া হবে বলে মন্দির কমিটিগুলির তরফে জানানো হয়েছে।