নিজস্ব প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের সুনাম ও ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষে ভন্ড পাগলা বাবা নামের একদল প্রতারকচক্র সক্রিয় রয়েছে। এই প্রতারকদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়ে পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ শওকত উদ্দিন ভূইঁয়া কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি জিডি করেছেন।
আড়াইশ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক বাহক কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদটি কালের স্বাক্ষী হয়ে নরসুন্দী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম প্রান্তের হারুয়া এলাকায় মসজিদটির অবস্থান । যার দূরত্ব কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশন কিংবা বত্রিশ বাস স্টেশন, অথবা গাইটাল বাস স্টেশন থেকে এক কিলোমিটারের ভিতরে। মুসলিম-অমুসলিম সবাই এ মসজিদে দুই হাত খুলে দান করেন। কারণ মানুষের বিশ্বাস, একনিষ্ঠ মনে এখানে মানত বা দান করলে রোগ-শোক, বালা-মসিবত দূর হয়। পাগলা মসজিদের দানবাক্সে দৈনিক প্রায় লাখ টাকা জমা পড়ে। দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা, অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী।
গত কয়েক মাস যাবত একটি প্রতারকচক্র পাগলা মসজিদের নামে ইউটিউবে এবং ফেসবুকে পাগলা বাবার নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগ বালাই হতে রক্ষা করা, লটারি পাওয়ার ব্যবস্থা, প্রেমের সফলতাসহ চোখ ঝালানো বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এই বিজ্ঞাপন দেখে সরল বিশ্বাসে দেশের সাধারণ মানুষ ও মুসুল্লীরা প্রতারিত হচ্ছে। এতে করে পাগলা মসজিদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে ফেসবুকে সতর্কতামুলক পোষ্ট করেছেন পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাবেক একাধিক বার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালনকারী আলী মোহাম্মদ। তিনি লিখেন, বিভিন্ন সময়ে পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির বিভিন্ন পদে দীর্ঘ ২৭ বৎসর দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমান প্রশাসনের নিকট আমার নিবেদন থাকবে যত শীগ্রই সম্ভব প্রতারকদের কে আইনের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।
শামসুল হক লিখেন, পাগলা মসজিদ কমিটির সদস্য পদে আমিও এক টার্ম দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু তখন এইসব ভুঁইফোঁড় পাগলা বাবাদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। হঠাৎ করেই আজ কয়েক দিন যাবত ফেসবুকে একটি মহল কোন এক পাগলা বাবার নাম দিয়ে অনৈতিক বাটপারি যোচচরী কর্মকান্ড চালাচ্ছে যাহা সম্পূর্ণ বেআইনী। এই পাগলা বাবা নাকি পানির উপর দিয়ে হাঠে জিনদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করে দেন। লটারি পাইয়ে দেন অবাধ্য স্বামীকে বাধ্য করে দেন। আরো অনেক অসাধ্য কাজ সাধন করে দেন। আমাদের কিশোরগঞ্জ তথা সারা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদকে নিয়ে একটি মহল পাগলা বাবার নাম ভাংগিয়ে অবৈধ ভাবে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উপার্জনের রাস্তা বেচে নিয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এখনই এই ভূঁইফোড় ভন্ড পাগলা বাবা এবং তার দলের সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক বিচার করার দাবী জানাই।
জেলা শহরের বাসিন্দা মোঃ খায়রুজ্জামান বলেন, গত বৃহস্প্রতিবার পাগলা বাবার ০১৩১৯৪৭৫৩৬১ নাম্বারে কল দিলে তিনি আমাকে শুক্রবারে বাদ আছর দেখা করতে বলেন। পরে আমি গিয়ে কল দিলে বলে পানি পথে অনেক দূরে চলে গেছি আজ দেখা করা যাবে না।
পাগলা মসজিদের শিন্নী ঘরের দায়িত্বরত আলী আকবর বলেন, পাগলা বাবা নামে ইউটিউবে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান খয়রাতের খবর নিয়ে বিভিন্ন টিভিতে প্রচারিত ভিডিও ওই পাগলা বাবার নামধারীরা এডিট করে বিভিন্ন নাম্বার সংযুক্ত করে মানুষের থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আমি যেহেতু পাগলা মসজিদের শিন্নী ঘরের দায়িত্বে আছি তাই প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষগণ সর্ব প্রথম এসে আমাকে ওই প্রতারক পাগলা বাবার কথা জিজ্ঞেস করে। তখন জানতে পারি পাগলা বাবার ভন্ডামীর নানা বিবরণ। এই ভন্ড পাগলা বাবাকে চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনা এখন জরুরী।
পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ শওকত উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, পাগলা বাবার দরবার শরীফ বলতে এখানে কিছু নেই। কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের সুনামকে ক্ষুন্ন করার প্রয়াসে যারা পাগলা বাবা এবং পাগলা বাবার দরবার শরীফ লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (নং ১১৩১ তাং ২৬/১২/২0 ইং) করেছি।
পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বিভিন্ন সভায় কথিত পাগলা বাবার প্রতারণার বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।