করোনা ভাইরাস ও বাংলাদেশ
করোনার এ ভয়াবহ প্রকোপে বাংলাদেশের জনগনের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে। বর্তমান অবস্থা থেকে ধারণা করা যায় ভবিষ্যতে বা অল্পকিছুদিন পরেই এ চিত্র অনেকটা ভয়াবহ হবে।
আজ ২৬ এপ্রিল, গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৪৭৬ টি। এদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৪১৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের এবং সুস্থ হয়েছে ৯ জন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪১৬। সর্বোমোট মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জনের এবং এ পর্যন্ত সর্বোমোট সুস্থ হয়েছে ১২২ জন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে ৫০৩ জন।
উন্নত বিশ্ব যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ কতটুকুই বা করতে পারবে জানি না। তবে পৃথিবী বেঁচে থাকে আশায়। তাই আশা করা যায় করোনার এ কালো মেঘ খুব দ্রূতোই সরে যাবে।
বর্তমান পুরো বাংলাদেশ লকডাউনের মত পরিস্থিতিতে থাকলেও দেখা যাচ্ছে মানুষের একসাথে হওয়া টা খুব বেশি আটকানো যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতক্ষন টহল দেয় ততক্ষন সব ঠিক, তারা চলে গেলেই আবার যে যার মত চলাফেরা শুরু করে। সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হয় তাহলে করোনার ভয়াবহতা আরো বেড়ে যাবে।
যে করেই হোক বর্তমান পরিস্থিতি যাতে আরো খারাপ না হয়ে উঠে তার জন্য সকলেই এক হয়ে নিজ নিজ স্থানে থেকে কাজ করে যেতে হবে। যতটা সম্ভব নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
যদি আমরা কোনোভবে করোনার এ প্রকোপ থেকে বাঁচতে পারি তাহলে আগামীর বাংলাদেশ খুব পাল্টে যাবে। করোনার থেকে মুক্তি পেলে বাংলাদেশের মানুষও জীবনের একটা নতুন অধ্যায় শুরু করবে। যে অধ্যায়ে থাকবে ভালোবাসা,সম্মান,বন্ধুত্ব,বিশ্বাস, ভবিষৎ পরিকল্পনা। শত্রুতাও থাকবে তবে অনেকটাই কম।
এই ২০-৩০ দিনের কোরাইন্টাইনে মানুষে মানুষে অনেক বড় একটা গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় বা যেকোনো প্রতিষ্টানের বন্ধুবান্ধব যারা রোজ দেখা করত, হঠাৎ করে প্রায় অনেকেই একা হয়ে গেছে। এতে দুটা সুবিধা হয়েছে, এক, তারা তাদের বন্ধনটা আরো শক্ত করতে পেরেছে বা একে ওপরের উপর বিশ্বাসটা আরো পোক্ত করতে পেরেছে। আমি নিশ্চিত করতে বলতে পারি কোরাইন্টাইনের পর দেখা হলে তাদের মধ্যে যে কথাটুকু হবে তার এক ফোটাতেও ছল/রাগ/কপতটা থাকবে না। দুই, তারা তাদের পরিবারের আরো কাছে আসতে পেরেছে, যা হয়তাবা এতদিনের দৌড়োদৌড়িতে হয়ে উঠে নি।
এটা ঠিক যে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত যারা আছে তারা খুব একটা সুখে নেই! নিম্নবিত্তরা মাঝে মাঝে ত্রান পাচ্ছে, জানি সব নিম্নবিত্তের ভাগ্য এতটা সহায় না! মধ্যবিত্তরাও হয়তবা তাদের সম্ভলটুকু দিয়ে চলছে কোনোমতে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ক’দিন চলতে পারেব! সরকার ত্রান দিচ্ছে, যা খুবি ভালো উদ্দ্যেগ। কিন্তু সব জায়গায় সুষম বন্টন হচ্ছে না! দেখছিতো প্রায় প্রতিদিনিই বস্তা বস্তা চাল উদ্ধার করা হচ্ছে। শুধুমাত্র তারাই ত্রান নিন যাদের দরকার এবং শুধুমাত্র তাদেরই ত্রান দিন যাদের আসলেই দরকার। তেলা মাথায় আর ক’দিন তেল দিবেন!
দেশের অনেক সংগঠন এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে। তারা নিজ উদ্দ্যোগে ব্যবস্থা করে নিম্ন বিত্তদের খাবারের যোগান দিচ্ছে। এখনই তো সময় যাদের সাধারন জনগন হিরো ভাবে সেই সব সেলিব্রিটিদের এগিয়ে আসার।
বাংলাদেশের অনেক দিক থেকে ক্ষতি হচ্ছে। এটা যেমন সত্য, এটাও তেমনি সত্য যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে মানুষ মারা যাচ্ছে এবং এ সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে। সব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া গেলেও, মৃত ব্যক্তিকে তো আর ফিরিয়ে আনা যায় না।
আপনি বেঁচে থাকুন। অপরকেও বাঁচতে দিন, করোনার সংক্রমন না ঘটিয়ে। চেষ্টা করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কিচ্ছু নেই। তাই ১০০% নয় নিজের ২০০% দিয়ে চেষ্টা করুন।
বেঁচে থাকলে আবার দুনিয়াকে রাঙানো যাবে। কি বলেন চান না এটা?
–তন্ময় দত্ত মিশু