বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে পশ্চিমবাংলায়। আর মহানগরী কলকাতায় সংক্রমণ রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছে গেল শনিবার। এদিন শেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৫৮ জন। সংক্রমণের দিক থেকে এর আগে কলকাতায় একসঙ্গে এত মানুষ কখনও করোনায় সংক্রমিত হননি। এর ফলে কলকাতা শহরে সংক্রমিত মানুষের মোট সংখ্যা পৌঁছে গেল ৩ হাজার ৫১৪ জনে। কলকাতায় করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ২৮৭ জনে। তবে এর মধ্যে সুখবর হল, কলকাতা মহানগরীতে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৩৮১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। স্বাস্থ্য ভবনের বুলেটিন থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
তবে সারা রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা শুক্রবারের তুলনায় কিছুটা কমেছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৪৫৪ জন সংক্রমিত হয়েছেন। শুক্রবার সংখ্যাটা ছিল ৪৭৬ জন। তার আগে বুধবার ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছিলেন ৩৪৩ জন, আর মঙ্গলবার সংখ্যাটা ছিল ৩৭২ জন। এর আগে বেশি সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল রবিবার। সেদিন সারা রাজ্যে ৪৪৯ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। শনিবার ৪৫৪ জন সংক্রমিত হওয়ায় রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৯৮ জন। আর এই মুহূর্তে ৫ হাজার ৬৯৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সক্রিয় রয়েছে। সংক্রমিতের সংখ্যায় কলকাতার পরেই রয়েছে হাওড়া। এই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৮২ জন, তার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৩ জন। এর পর রয়েছে হুগলি। এই জেলায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৬৮৬ জন।
রবিবার করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। ফলে এদিন পর্যন্ত গোটা রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬৩ জনে। নতুন করে যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার ৫ জন এবং কলকাতার ৪ জন রয়েছেন। এ ছাড়া হাওড়ার ২ জন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১ জন মারা গিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে শতকরা ১৮.৮৪ জনেরই বয়স ৭৫ বছর বা তার বেশি। আর শতকরা ১৪.৮৪ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭৪ বছরের মধ্যে। রাজ্যে শনিবার সকাল পর্যন্ত করোনা–মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৩৩৬ জন। ফলে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৪২ জন। ফলে সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২.৪৫ শতাংশ। শুক্রবার এই হার ছিল ৪০.৮২ শতাংশ।
এদিকে, কলকাতা–সহ রাজ্যে করোনা–সংক্রমণের বৃদ্ধিতে শঙ্কিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবকেই এর জন্য দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, করোনা নিয়ে এত প্রচার এবং ঘটনার পরও অনেকেই মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন। একসঙ্গে অনেক মানুষ চলাফেরা করছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। সেইজন্যই সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আবার ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারকেও দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, লকডাউনের প্রথম দিকে পুলিশ যেমন কড়া অবস্থান নিয়েছিল, পরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করে পুলিশকে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন। আর এখন তো রাতে সারা দেশে জনতা কারফিউ জারি থাকলেও বাংলায় সেভাবে তা মানাই হচ্ছে না। পুলিশও তেমন সক্রিয় নেই। ফলে সংক্রমণ রোধ করা যাচ্ছে না।
অনেকে আবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করবেন। তাঁদের ধারণা, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু এবং বাংলায় ফের কড়া লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে। তাঁরা অবশ্য এ ছাড়া ভিন্ন কোনও পথ দেখতে পাচ্ছেন না। যতদিন না করোনার প্রতিষেধক পাওয়া যায়, সরকারের সামনে এ ছাড়া আর উপায় নেই বলে তাঁরা মনে করছেন। কিন্তু ফের লকডাউন জারি হলে, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষ ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন বলেও তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।