ওয়েব ডেস্ক: কিশোরগঞ্জে ছাত্রকে বলাৎকার মামলার প্রধান আসামি মাদ্রাসাশিক্ষক বেলাল হোসেন বিল্লালকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার বিশ্বনাথ এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বেলাল কিশোরগঞ্জ শহরের শ্যামলী রোডে অবস্থিত জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক।
র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জের কোম্পানি কমান্ডার উপপরিচালক লে. কমান্ডার বিএন এম শোভন খান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রকে বলাৎকারের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন বেলাল। তাকে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন ওই ছাত্রের বাবা। তাতে বলাৎকারের অভিযোগে আসামি করা হয় বেলালকে।
ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি হোসাইন মোহাম্মদ নাঈমকেও মামলার আসামি করা হয়। তার বিরুদ্ধে বেলালকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ করা হয় এজাহারে।
মামলার বাদী জানান, তিনি ঢাকায় একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। তার স্ত্রী একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাদের একমাত্র ছেলেকে কোরআনে হাফেজ বানানোর জন্য ভর্তি করা হয় জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসায়। ১০ বছর বয়সী ছেলেটি নাজেরা বিভাগ থেকে পাস করে হেফজখানায় ভর্তি হয়। মাদ্রাসাতেই থাকত সে।
সাপ্তাহিক ছুটিতে গত ২৪ আগস্ট ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যান তিনি। সেখান থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে যান শ্বশুরবাড়ি। সেদিন বিকেলে শিক্ষক বেলাল তাকে ফোন করে জানান, ছেলেকে দ্রুত মাদ্রাসায় ফিরিয়ে দিতে হবে, না হলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
ওই ছাত্রের বাবা আরও জানান, মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা শুনে তার ছেলে কান্নাকাটি শুরু করে। একপর্যায়ে সে জানায়, গত ১৫ আগস্ট সকালে মাদ্রাসার তিনতলায় একটি টয়লেটে নিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকে বলাৎকার করেন শিক্ষক বেলাল।
একইভাবে গত ২৪ আগস্ট সকালেও তাকে নির্যাতন করা হয়। সেদিনই মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষের কাছে বিষয়টি জানালে বেলালকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বেলাল তা স্বীকার করে সবার কাছে ক্ষমা চান।
ওই ছাত্রের বাবা বলেন, ‘বেলালকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের জিম্মায় রেখে বাসায় চলে আসি। স্বজনদের পরামর্শে আবার মাদ্রাসায় গিয়ে ওই শিক্ষকের খোঁজ করে জানতে পারি তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হোসাইন মোহাম্মদ নাঈম।’
ওই ছাত্রের মামা বলেন, ‘বলাৎকারের খবর এতদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখে আসছি। আর আজ নিজ পরিবারের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটল।
‘আলেম হয়ে এ ধরনের জঘন্য কাজ ওনারা করেন কীভাবে? ছাত্ররা তো তার কাছে সন্তান সমতুল্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমিও গিয়েছিলাম মাদ্রাসায়। সেখানে যাওয়ার পর হুজুরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। কিন্তু তাকে কোরআন ছুঁয়ে বলতে বলা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।’
ওই ছাত্র জানায়, বেলাল আরও কয়েক ছাত্রকে বলাৎকার করেছেন। বেশ কয়েকটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীও সে। তবে ভয় ও লজ্জায় সবাই চুপ থাকে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসাইন জানান, ১৭০ জন ছাত্র পড়াশোনা করে তার মাদ্রাসায়। এর মধ্যে ৩০ জন আবাসিক ছাত্র।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরই বেলালকে মাদ্রাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।’