বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
কো–মর্বিডিটি কলাম কি তুলে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মহলে। যদিও সরকারের তরফে এ বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে স্বাস্থ্য দফতরের যে বুলেটিন প্রকাশিত হয়, সেখানে কো–মর্বিডিটিতে কোনও মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, ওই কারণে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করার নির্দিষ্ট কলামটিরই কোনও অস্তিত্ব ছিল না।
তবে কলামটি যে তুলে দেওয়া হয়েছে, এদিনের মৃত্যুর পরিসংখ্যান থেকে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সোমবারের বুলেটিনে প্রকাশিত হয়েছে, রাজ্যে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৪০৫ জন। এর মধ্যে শেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। তার মানে সোমবারের আগে রবিবার পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা থাকা উচিত ৩৯৬ জন। কিন্তু রবিবার পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩২৪ জন। লক্ষণীয়, এর সঙ্গে যদি কো–মর্বিডিটিতে মৃত্যু বলে উল্লেখ করা ৭২ জনকে যোগ করা হয়, তা হলে সংখ্যাটা হয় ৩৯৬ জনই। এর অর্থ, সেই মৃত্যুর সংখ্যা এখন আর আলাদা করে দেখানো হচ্ছে না। অর্থাৎ, কো–মর্বিডিটিতে মৃত্যুর কলামটি সচেতন ভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, কো–মর্বিডিটিতে মৃত্যু নিয়ে রাজ্যে অনেক বিতর্ক হয়েছে। সিপিএম, বিজেপির মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি চিকিৎসকদের একাংশেরও এই ধরনের মৃত্যুর ভাবনা নিয়েই আপত্তি ছিল। করোনা আক্রান্ত কারও মৃত্যু হলে তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ করোনাই কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হয়। সেই কমিটি করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখে জানিয়ে দিত, মৃত্যুর আসল কারণ। সাধারণ ভাবে করোনায় আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির শরীরে যদি অন্য কোনও রোগ থেকে থাকে, তা হলে তাঁর মৃত্যুর কারণ করোনা নাও হতে পারে, সরকারের তরফে এমনই ধারণা পোষণ করা হয়েছিল। স্বভাবতই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধে উঠেছিল। অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন, মৃত্যুর সংখ্যা কম করে দেখাতেই নাকি ওই কমিটি গড়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও।
বিতর্ক এড়াতে সংক্রমিত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়ে প্রতিদিন স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বুলেটিন প্রকাশ করা হতে থাকে। সেখানে করোনা সংক্রমিত, মৃত্যু এবং সুস্থদের সংখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি কো–মর্বিডিটিতে মৃত্যুর জন্য আলাদা কলামও ছিল। কিন্তু, তাৎপর্যপূর্ণ হল, কো–মর্বিডিটিতে মৃত্যুর সংখ্যা আগাগোড়াই ৭২ থেকে গিয়েছে। প্রশ্ন হল, আগে যদি কো–মর্বিডিটিতে এত মৃত্যু হয়ে থাকে, এখন কি সেই কারণে কারও মৃত্যু হচ্ছে না? এখন কি করোনা আক্রান্ত মৃতদের সবার করোনার কারণেই মৃত্যু হয়েছে? অনেকেই বলছেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তবে অনেকের ধারণা, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে কো–মর্বিডিটির ধোঁয়াশা অনেকটাই কেটে যাবে।
এদিকে, সোমবার শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমে হয়েছে ৪২৬ জন। রবিবার এই সংখ্যাটা পৌঁছে গিয়েছিল ৪৪৯ জনে। যাই হোক, এদিন পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬১৩ জনে। যদিও সংক্রমণের হার নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এখনও চিন্তিত। পাশাপাশি শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ১৬২ জন। ফলে করোনা–মুক্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৬৫ জন। এখন করোনা সংক্রমিত ৪ হাজার ৭৪৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।