1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বান্ধবীর কথায় চলত আইন মন্ত্রণালয়

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪
  • ১৩৯ Time View

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বান্ধবীর কথায় চলত আইন মন্ত্রণালয়। তার ফোনে পাল্টে যেত মামলার রায়। ফোনেই শুনানি চলত অথবা বন্ধ হতো। ওই বান্ধবী বললে জামিন অযোগ্য ব্যক্তির জামিন হতো। সাবেক আইনমন্ত্রীর বান্ধবীর পরিচয়ও ছিল অনেক। কখনো তিনি আইনজীবী, কখনো মানবাধিকার কর্মী বা ব্যবসায়ী। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী বিয়োগের পর আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। দ্য মিরর এশিয়াকে আইন মন্ত্রণালয় এবং হাইকোর্ট সূত্র তার বিষয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়।

আগে টাকা পরে নিয়োগ

সূত্র জানায়, আনিসুল হকের ওই বান্ধবীর নাম তৌফিকা করিম। এ জুটি ১০ বছরে অবৈধভাবে ২০০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তৌফিকার সিন্ডিকেট আইন মন্ত্রণালয়ের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করত। প্রতি জেলার চিফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা জজ নিয়োগে শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে এ সিন্ডিকেট। অবৈধভাবে অর্জিত টাকা পাচার হয়েছে কানাডাসহ আরো অনেক দেশে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তৌফিকার ছেলে থাকেন কানাডায়। পাচার করা অর্থ দিয়ে বিপুল সম্পদ গড়েছেন ওই নারী। তৌফিকা-আনিসুল চক্র কানাডা, দুবাই এবং  মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম হিসেবে কয়েকটি বাড়ি করেছে। তৌফিকার সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি করত সাব রেজিস্টার অফিস থেকেও। ঢাকা ডেপুটি রেজিস্ট্রার্ড সাদিকুর নাহারের মাধ্যমে তৌফিকা হয়ে টাকা পৌঁছাত স্বৈরাচারি সরকারের আইনমন্ত্রীর হাতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চ আদালতের এক কর্মকতা তৌফিকা করিমকে ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি দ্য মিরর এশিয়ার কাছে স্বীকার করে বলেন, আদালত পাড়ায় টাকা ছাড়া নিজ যোগ্যতায় চাকরি হয় না।

একজন উজ্জ্বল মাহমুদ 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিনা অপরাধে শাস্তি দিতে বাধ্য করতেন আনিসুল হক। আবার যারা রাজনীতিতে জড়িত না, তাদের নাশকতার মামলায় জড়িয়ে, ফাঁসিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন সাবেক আইনমন্ত্রীর এ বান্ধবী।

আনিসুল হকের মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪০০ থেকে ৫০০ মামলা দেওয়া হয়েছে। অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা এই ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনমন্ত্রীর সময়েই বেশি দেওয়া হয়। দেশের সব আদালতে বিচারকরা মন্ত্রীর কথামতো রায় দিতেন।

তবে এর মধ্যে কেউ ছিলেন ব্যতিক্রম। তাদের একজন মোহাম্মাদ উজ্জ্বল মাহমুদ। ২০২৩ সালে তিনি রাজশাহী সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ধরতে চাপ দিচ্ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। মিথ্যা মামলা হলে আসামিরা গিয়ে উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। এরপর থেকে বল প্রয়োগ করা হয় ওই বিচারককে। এ সময়ে মামলার রায় না দিয়ে ঢাকা অবস্থান করছিলেন মোহাম্মদ উজ্জ্বল মাহমুদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তৎকালীন আইনমন্ত্রীকে অবগত করেন শাহরিয়ার আলম।

চাপ সইতে না পেরে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে জাপান চলে যেতে চান উজ্জ্বল। এতেও বাধা দেওয়া হয়। কোনো উপায় না পেয়ে আনিসুল হকের কাছে ক্ষমা চান এ বিচারক। কিন্তু তাতেও বাধ সাধেন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা দিপংকর রায়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বলকে বিএনপি-জামায়াতের লোক বলে  অপবাদ দেওয়া হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে উজ্জ্বল দেশ ছাড়তে সক্ষম হন।

মন্ত্রণালয় চালাতেন তৌফিকা

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজি আরিফুল জামান ও মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা দিপংকর রায়কে দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় চালাতেন তৌফিকা করিম। জানা গেছে, বিপুল টাকার বিনিময়ে চট্রগ্রাম জেলার দায়রা জজ আদালতের এক মামলার রায়ে প্রভাব বিস্তার করেন তৈফিকা করিম।

সারা দেশে আদালতের নিয়োগ বাণিজ্য করতেন এ নারী। অপকর্মে সহযোগিতা করতে না চাওয়ায় আরেক যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা বিপাকে পড়েন। তৌফিকার কথা না শোনায় দীর্ঘ নয় বছর তার কোনো পদান্নতি হয়নি।

মামলায় রায় বদল ও নিয়োগ বাণিজ্য

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, দেশজুড়ে আলোচিত দুটি মামলার রায় পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন আনিসুল ও তৌফিকা জুটি। এর মধ্যে রয়েছে, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ  বনানীর রেইন ট্রিতে সংঘটিত ধর্ষণ মামলার রায়। এ মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত হোসেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে গুলশানের একটি তারকা হোটেলে তৈফিকা করিম বৈঠক করেন দিলদার হোসেন সেলিমের সঙ্গে। তারপরই নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায় মামলার রায়।

অর্থের বিনিময়ে আইন মন্ত্রণালয়ে মামলার রায়ের নথি লেখা হয়। এ নথি ২১ নভেম্বর পাঠ করেন বিচারপতি মোসাম্মত কামরুন নাহার। ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মামলা না করায় নির্যাতিতের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করেন তিনি। এতে সুশীল সমাজ ক্ষুব্ধ হয়। ফলে কামরুন নাহারকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় কামরুন নাহারের গোপনে ধারণ করা অডিও ছাড়া হয়। যেখানে কামরুন নাহারকে মন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ঝারতে দেখা যায়।

ওই অডিও রেকর্ডে বলা হয়, ২০২০ সালে ঢাকার দায়রা জজ আদালত ও চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮ জন গাড়িচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ বিঞ্জপ্তি অনুসারে দুই বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলা হলেও নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক গাড়িচালকের গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্সই ছিল না। তারা সবাই সাবেক এ মন্ত্রীর এলাকা আখয়াউরা-কসবার বাসিন্দা। জানা গেছে, এসব কাজে আনিসুল তৈফিকাকে ব্যবহার করতেন।

আরো জানা যায়, ২০১৪ সালের পর বিভিন্ন আদালতে হাজার হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়।

বসুন্ধরার আনভীরকে রক্ষা

এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের ছেলেকেও রক্ষা করে এ জুটি। গুলশানের চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে আনিসুল ও তার বান্ধবী তৌফিকার বিরুদ্ধে। বিপুল অর্থের বিনিময়ে এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ আটজন।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মামলার রায় পরিবর্তন, আসামির জামিন, নিয়োগ প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতেন তৌফিকা করিম। ১৬ বছর ধরে আইন পেশায় নিয়োজিত এ নারী এমনকি আনিসুলের প্রতিষ্ঠিত সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবেও নিয়োগ পান।

স্ত্রী মারা যাওয়ার পরপরই তৌফিকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে আনিসুল হকের। যদিও তৌফিকার স্বামী ও সন্তান রয়েছে। জাতীয় চার নেতা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন তৌফিকা করিম। আইনমন্ত্রীর কল্যাণে ২০১৯ সালের ২৮ এপিলে বেসরকারি উদ্যোক্তা সম্মননা নেন তৌফিকা করিম। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের আভাস পেয়ে তিনি গত ২৬ জুলাই ঢাকা ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমান।

অনেক উচ্চ পদে তৌফিকা

তৌফিকা করিম সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং দেশ টিভির নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদে বহাল আছেন। জানা গেছে, বেসরকারি দেশ টিভির নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসাবে তৌফিকা নিয়োগ পেয়েছেন অন্যায়কে সুবিধা দিয়ে। এই টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে দুদকে অর্থপাচারের মামলা রয়েছে। তার ব্যাংক জব্দ করে রেখেছে দুদক। তৌফিকা করিম দেশ টিভির চেয়ারম্যান হওয়ার পর সরকারের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ থেকে বেঁচে যান আরিফ হাসান।

আবার তৌফিকার এনজিও রয়েছে। যার নাম ‘লিগ্যাল এসিসটেন্স টু হেল্পলেস প্রিজনার্স অ্যান্ড পার্সনস (এলএএইচপি)’। এর মাধ্যমে সহস্রাধিক নিরাপরাধ বন্দিকে মুক্ত করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..