বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক। তিরাশির বিশ্বকাপ জিতলেও ভারতীয় ক্রিকেট একসূত্রে বাঁধা পড়েনি কখনও। জেতার অভ্যাসও তৈরি করে উঠতে পারেনি। সৌরভই এসে বদলে দিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের চেহারা। তাঁর অধিনায়কত্বের সময় থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট মাথা তুলে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করা শুরু করে। সেই রেওয়াজ চলেছে আজও। সহ–খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেওয়া থেকে পাশে দাঁড়ানো, সব কাজেই অধিনায়কোচিত ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই ভালবাসা আজও ভুলতে পারেননি সহ–ক্রিকেটাররা।
তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি। সামনে হাতছানি দিচ্ছে আইসিসি–র প্রেসিডেন্ট পদ। আবার, সূত্রের খবর, বাংলায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। যদিও এই দুটি বিষয়েই তিনি উদাসীন মনোভাবই দেখিয়ে চলেছেন। অবশ্য সবসময় সব কিছু যে গোপন রাখতে পারছেন, তা–ও নয়। কখনও কখনও তার ইঙ্গিতবহ কথা জল্পনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার বুধবার স্ত্রী ডোনার একটি প্রতিক্রিয়াকেও অনেকেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। সাংবাদিকরা সুযোগ বুঝে সৌরভকেই নানা প্রশ্ন করেছেন এদিন। এক সময় রাজনীতির কথাও উঠেছে। কিন্তু সতর্ক সৌরভ উড়িয়ে দিয়েছেন সে–সব কথা। বলেছেন, ‘এখনও তেমন কিছু ভাবিনি।’ পরে কি ভাববেন? সৌরভের হাসিমুখে ইঙ্গিতবহ জবাব ছিল, ‘তা হলে সবাই জানতে পারবেন।’
ব্যস, ফের শুরু জল্পনা। আর সেই জল্পনা আরও বেড়ে যায় স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যে। রহস্য বাড়িয়ে তিনি বলেছেন, ‘সৌরভ রাজনীতিতে আসবে বলে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে এখনও আমি জানি না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, যে পিচেই সৌরভ খেলুক না কেন, তাতে সে সেরা হবেই।’ কিন্তু কী ভাবে? ডোনার জবাব ছিল, ‘সৌরভ সব জায়গায় একেবারে প্রাথমিক অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ঠিক লড়াই করে শীর্ষে পৌঁছে যায়। যদি রাজনীতিতে কখনও আসে, তা হলে আমার বিশ্বাস, হি উইল ফিনিশ দ্য টপ।’ ডোনার এই মন্তব্যকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সৌরভ সত্যিই রাজনীতিতে আসবেন কিনা, তা এখনই হয়তো নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। সেজন্য এখনও অপেক্ষা করতে হবে প্রায় দশ মাস। তবে, সময় যত গড়াচ্ছে, সৌরভকে নিয়ে আলোচনা কিন্তু বেড়েই চলেছে।’
সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরই ৪৮তম জন্মদিন ছিল বুধবার। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এদিন তিনি কোনও উৎসব করেননি। কিন্তু এদিন সকাল থেকেই আত্মীয়–পরিজন, বন্ধুবান্ধব তো বটেই, একদা সহ–ক্রিকেটার থেকে এখনকার ক্রিকেটার, সকলের শুভেচ্ছা বার্তায় ভেসে গেলেন তিনি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি পাঠিয়েছেন একদিনের ক্রিকেটে তাঁর ওপেনার সতীর্থ শচীন তেন্ডুলকর। তিনি ইঙ্গিতবহ ভাবে লিখেছেন, ‘যে ভাবে আমরা মাঠে জুটি বাঁধতাম, আশা করি মাঠের বাইরেও ভালো জুটি বাঁধবে তুমি। আগামী দিনগুলি তোমার ভালো কাটুক।’ বীরেন্দ্র শেহবাগ লিখেছেন, ‘দাদা শুধু স্টেপআউট করে ছক্কা হাঁকানো ছাড়া অন্য সময় চোখের পাতা পর্যন্ত ফেলেন না। আমার শুরুর দিনগুলিতে দারুণ ভাবে পাশে ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ।’ হরভজন সিং লিখেছেন, ‘হ্যাপি বার্থ ডে দাদা। সামনের দিকে দারুণ ভাবে এগিয়ে যাও।’
রাহুল দ্রাবিড় লিখেছেন, ‘বাঁ হাতে অফ সাইডে সৌরভই ছিল সেরা। ওর মতো কেউ ওভাবে বল মারতে পারত না। জীবনের ক্ষেত্রেও এভাবেই বারবাস সেরা হবে সৌরভ।’ অনিল কুম্বলে লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন সৌরভ। তুমি আরও উপরে ওঠো।’ এক ভিডিও পোস্টে যুবরাজ সিং লিখেছেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেটের অবিসংবাদী দাদাকে হ্যাপি বার্থ ডে। তুমি সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছ। দেখিয়ে দিয়েছ নেতা কাকে বলে! তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তুমি আমার কাছে যে অনুপ্রেরণা, অন্যদের প্রতি আমি তেমনই হওয়ার চেষ্টা করে যাব।’ ভি ভি এস লক্ষ্মণ লিখেছেন, ‘এই দিনটি তোমার জীবনে বারবার ফিরে আসুক। আরও সাফল্যের স্বাদ পাবে তুমি। পাবে আরও অনেক বেশি মানুষের ভালবাসা।’
মহম্মদ কাইফ লিখেছেন, ‘অসাধারণ ব্যাটসম্যান থেকে দুর্দান্ত অধিনায়ক ছিলে তুমি। এখন আবার পৌঁছে গিয়েছ ভারতীয় ক্রিকেটের নেতৃত্বে। আমার প্রিয় অধিনায়ক ছিলে তুমি। ছিলে প্রিয় মেন্টরও। তোমাকে শুভেচ্ছা।’ বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন দাদা। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুক।’ কে এল রাহুল লিখেছেন, ‘একজন ভয়ডরহীন নেতা। তিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে একেবারে উঁচুতে পৌঁছে দিয়েছিলেন।’ যুবেন্দ্র চাহাল লিখেছেন, ‘স্যার, শুভ জন্মদিন। আপনি সুখী এবং সুস্থ থাকুন।’ সৌরভের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এদিন তাঁর জন্মদিনকে মনে রেখে কলকাতা, আসানসোল, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৯ হাজার সদস্য নিয়ে গড়ে ওঠা ‘দাদার ফ্যান ক্লাব’ এই করোনা পরিস্থিতিতে ৪৮টি মাস্ক বিক্রি করে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮ পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে।