প্রতিবেদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ছাত্র সংগঠন ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্ট’স ইউনিয়নের আয়োজনে নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘এসো বনোফুলেরা, হাতে হাত মিলিয়ে শেকড়ের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নবদিগন্তের গান গায়’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে শনিবার এ অনুষ্ঠানটি হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৪র্থ বর্ষের রিয়া রোয়াজা ও ৩য় বর্ষে মং খিং অংয়ের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্ট’স ইউনিয়নের সভাপতি সাগর ত্রিপুরা। দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ৩য় বর্ষের রমিতা চাকমা এবং ২য় বর্ষের ক্যহিং রাখাইন কেইন। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসন-১১, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাওলী মাহবুব। আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি রিপণ জ্যোতি চাকমা, সাবেক সহ-সভাপতি সুইপ্রু মারমা।
অনুষ্ঠানটি বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক এন্জেল চাকমার স্বাগত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়। তিনি আদিবাসীদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে নবীনদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপমা চাকমা ও জুয়েল তঞ্চগ্যা এবং বিদায়ী ১২তম ব্যাচের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন লুম্বিনী তালুকদার ও কৌশিক মৃ ডন।
সাবেক সহ-সভাপতি সুইপ্রু মারমা প্রথমবার অডিটোরিয়ামে নবীন বরণের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে পারার জন্য বর্তমান কমিটিকে প্রশংসা করেন। সবাইকে ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করার জন্য বিপদে আপদে পাশে থাকার জন্য অনুরোধ জানান।
সাবেক সভাপতি রিপণ জ্যোতি চাকমা তাঁর বক্তব্য পাহাড় এবং সমতলের জাতিসত্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যেসব হয়রানির শিকার হয় সেসব তুলে ধরেন। পাশাপাশি রাষ্ট্র কর্তৃক শোষণের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। জাতিসত্তাদের সংবিধানে সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য সবাইকে রাজনৈতিক সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাওলী মাহবুব বলেন, তিনি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিষয়ে অধ্যয়ন করার জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের সাথে মেলামেশার সুযোগ পান। পাহাড়িদের ভূমি রক্ষার জন্য সরকারের আন্তরিকতা কামনা করেন। এছাড়া ও সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে আদিবাসী কোটা, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী জন্য বিশেষ কোটা এবং নারী কোটা বাতিল না করে আবার বলবৎ রাখার আহ্বান করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মঙ্গল কামনা করি। পাহাড়িরা অনেক সহজ, সরল হয়। আমি চায় তারা যেন সার্বিকভাবে এগিয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চল থেকে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। তারা অনেক সংগ্রাম করে জীবনযাপন করে। ১ম এবং ২য় শ্রেণির চাকরিতে তাদের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বশেষ সংগঠনের সভাপতি সাগর ত্রিপুরা তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে বাঙালি বাদে ৪৫ টির অধিক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে আসছে। যাদের প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, রীতিনীতি রয়েছে। তাঁরা কঠিন পরিস্থিতিতে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায়। এই পরিস্থিতিতে নিজের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্য আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সচেতনতার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পাশে থাকার অনুরোধ জানান। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা, মুক্তবুদ্ধি চর্চা এবংঅন্যান্য যেকোনো সমস্যায় পাশে থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উপস্থিত শিক্ষকদের মাধ্যমে অনুরোধ জানান। সভাপতির বক্তব্যের পর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সারাদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়।