প্রত্যয় ডেস্ক : খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে দারুচিনি একটি পরিচিত মশলা। এর সুগন্ধ মনকাড়া। কিন্তু এই মশলাই যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারে তা কি জানেন? তাই এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুচিনিকে কাজে লাগাতে পারেন। এদিকে একেবারে অনেকটা দারুচিনি খেয়ে ফেললেও হিতের বিপরীত হতে পারে। দারুচিনি কীভাবে এবং কতটা খেলে উপকার মিলবে তা প্রকাশ করেছে এই সময়-
১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সময়ে যারা দারুচিনির কারখানায় কাজ করতেন, তাদের প্রায় কেউই সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। অর্থাৎ খাওয়া তো বটে, দারুচিনির সংস্পর্শে থাকাটাও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, সেই সময় স্প্যানিশ ফ্লু নির্মূল করার অন্যতম সেরা ওষুধ ছিল দারুচিনির গুঁড়া। কেউ কেউ আবার দুধে সামান্য পরিমাণ দারুচিনি তেল ব্যবহার করেই সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে যে, এইচআইভি, অ্যাডিনোভাইরাস ও হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধেও দারুচিনি ব্যাপকভাবে কার্যকারিতা দেখিয়েছে।
করোনাভাইরাসের এই আতঙ্কের সময়েও অনেক দেশে প্রতিষেধক হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে দারুচিনি। বিশেষ করে ডাক্তার থেকে শুরু করে গবেষকরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুচিনি খেতে বলছেন। তবে এখনও পর্যন্ত দারুচিনি করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে পারে কি না, সেই বিষয়ে কোনো প্রমাণ না মেলেনি। চিকিৎসকেরা বলছেন সংক্রমণের তীব্রতা প্রতিরোধ করতে পারে দারুচিনি। তবে তা সঠিক পদ্ধতি মেনে খেতে হবে। আর কোন সময়ে খাওয়া হচ্ছে, এবং কতটা পরিমাণে দারুচিনি খাওয়া হচ্ছে তার উপরেও নির্ভর করছে এর গুণ।
যেভাবে সাহায্য করে দারুচিনি: দারুচিনি মূলত শরীরের প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে। আমাদের শারীরিক প্রতিরক্ষার জন্য প্রদাহ গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রদাহে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আর এই প্রদাহের পরিমাণই মূলত কমিয়ে দিতে পারে দারুচিনি। দারুচিনির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পলিফেনল ও প্রোঅ্যান্থোসায়ানাইডিন, যা কোনো ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এছাড়া দারুচিনি মেদ ঝরাতেও কাজে আসে। শ্বাসতন্ত্রের রোগ এবং হার্টের রোগ নির্মূল করতেও খুবই সহায়ক এই মশলা। দারুচিনির অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রপার্টি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
ভারতের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, দারুচিনির প্রোসায়ানাইডিন পলিমার এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদেরকে এইচআইভি কন্ট্রোলার্সে পরিণত করতে পারে। গবেষকরা দারুচিনিতে যে মলিকিউল পেয়েছেন তা এইচআইভি ভাইরাসকে দমিয়ে রেখে ডিফেন্স প্রোটিনকে সুরক্ষা দিতে পারে। এছাড়াও সেই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, দারুচিনির সিনামালডিহাইড শ্বাসতন্ত্রের রোগ অ্যাডিনোভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
দারুচিনির কিছু বিশেষ গুণ: জাপানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনির মধ্যে থাকা উপাদান সিনাজিলানিন বাকুলোভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাধা দিয়েছে। বাকুলোভাইরাস পোকামাকড়কে সংক্রমিত করে। এই উপাদান হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-১ ও হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-২ এর বিরুদ্ধে কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী হার্বাল মেডিসিনের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো দারুচিনি। বিশেষ করে বুকের যেকোনো ধরনের অসুস্থতায় দারুচিনি ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, নিয়মিত দারুচিনি খেলে নিউমোনিয়া, শ্বাসনালির ফুলে ওঠা, কাশি, গলার কর্কশতা ও শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধা কমাতে সাহায্য করে।
দারুচিনি খাওয়ার পদ্ধতি: পানিতে দারুচিনি সেদ্ধ করে অথবা গরম পানিতে দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে পান করলে এর সঠিক উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দারুচিনির তেল ব্যবহার করা উচিত নয়। সিনামন অয়েল এত বেশি শক্তিশালী যে এক বা দুই ফোঁটার বেশি খেলে শরীরের ভেতর পুড়ে যেতে পারে। কোনো খাবারে ঠিক কতটা পরিমাণ সিনামন অয়েল মিশিয়ে খেলে শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না, তা জানতে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।