বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:করোনা পরিস্থিতিতে পশ্চিমবাংলায় দুর্গাপুজো নিয়ে বিতর্ক থেকেই গেল। পুজোমণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখা নিয়ে সোমবার যে রায় কলকাতা হাইকোর্ট দিয়েছিল, বুধবার তার কোনও পরিবর্তন হল না। মঙ্গলবার কলকাতার পুজো কমিটিগুলির সম্মিলিত সংগঠন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটি’ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য হাইকোর্টেই বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে ফোরামের পক্ষে আবেদন করেন আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু হাইকোর্ট প্রথমে এই মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল। পরে ফোরামের আইনজীবীকে আবেদন করতে অনুমতি দিলেও মঙ্গলবার মামলার কোনও শুনানি হয়নি। আদালত জানিয়েছিল, মামলা দায়েরের পর সব পক্ষকে নোটিস দিতে হবে। যদি সব পক্ষ নোটিস পেলে মামলার শুনানি হয় বুধবার। এদিন মণ্ডপে দর্শকের প্রবেশ নিয়ে ফোরামের দাবি পুরোপুরি খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। অর্থাৎ, বাইরে থেকে আগত দর্শকরা পুজোমণ্ডপের ‘নো এন্ট্রি’ জোনে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে সোমবার যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছিল, তার কিছুটা পরিবর্তন করে। সোমবার হাইকোর্ট বলেছিল, ছোট থেকে বড় সমস্ত মণ্ডপের ৫ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত দূরত্ব ব্যারিকেড করে দিতে হবে। সেখানে কোনও দর্শক ঢুকতে পারবেন না। মণ্ডপে শুধু পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ জন যেতে পারবেন। সেই নামের তালিকাও পুলিশকে আগে জমা দিতে হবে।
ঠিক এই অংশটির এদিন কিছুটা পরিবর্তন করে দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, বড় মণ্ডপের ভেতরে ঢোকার জন্য পুজো কমিটির সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দা মিলিয়ে ৬০ জনের একটি তালিকা বানানো যাবে। কিন্তু সেই তালিকার মধ্যে মাত্র ৪৫ জন মণ্ডপের ভেতরে যেতে পারবেন। আর, ছোট পুজোর ক্ষেত্রে ‘নো এন্ট্রি’ জোনে ঢোকার জন্য ৩০ জনের তালিকা বানানো যাবে। কিন্তু মণ্ডপে যেতে পারবেন ১৫ জন। একই সঙ্গে বেঞ্চ এ কথাও পরিষ্কার করে দিয়ে বলে, ৩০০ বর্গ মিটারের বেশি এলাকা জুড়ে যে সব প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে, সেগুলিকে বড় পুজো এবং তার চেয়ে কম এলাকা জুড়ে যে সব মণ্ডপ তৈরি হয়েছে, সেগুলিকে ছোট পুজো বলে ধরা হবে। এ ছাড়া ঢাকিরা মাস্ক পরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ‘নো এন্ট্রি’ জোনে ঢাক বাজাতে পারবেন। এদিকে, ফোরামের আর্জি না মানলেও এদিন হাইকোর্টের নির্দেশের পর সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘এটা আমাদের নৈতিক জয়।’ অন্যদিকে, চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, পঞ্চমীতেই বাংলায় দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই তাঁরা চেয়েছিলেন, আগের নির্দেশ যেন বদল না হয়।
এদিকে, পুজো বিতর্কে বিরোধী নেতারা রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘সরকার এতদিন বলেছে, গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি কমিটির মনোভাব অনুযায়ী যেন তিনদিক খোলা মণ্ডপ তৈরি হয়। মণ্ডপ তিন দিক খোলা থাকলে মানুষ সেখান থেকে প্রতিমা দর্শন করে চলে যেতে পারবেন। ভেতরে ঢোকার দরকার হবে না। হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে এই বিষয়টির কোনও তফাত নেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো বেশি ভিড় হোক, চাইছেন না বলে জানিয়েছিলেন। তাই তিনি ভারচুয়ালি উদ্বোধন করেছেন। তা হলে তৃণমূল নেতারা কেন হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করছেন?’ হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘তৃণমূল সরকার অযোগ্য, অদক্ষ। এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। তাই হাইকোর্টের রায় আদৌ কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
এদিকে, শারদোৎসব উপলক্ষে কলকাতা সেজে উঠেছে আলোকমালায়। অধিকাংশ মণ্ডপেরই উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। তবে দর্শকের দেখা তেমন পাওয়া যায়নি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে অধিকাংশ মণ্ডপেই ‘নো এন্ট্রি’ জোন করে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী লেকটাউনের শ্রীভূমি–সহ কয়েকটি মণ্ডপের উদ্বোধন করে দেওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বেশ ভিড় হতে শুরু করেছিল। সংবাদ মাধ্যমেও সেই ঘটনা চলে আসে। কিন্তু বুধবার দেখা গেল অনেকটাই বিপরীত চিত্র। অধিকাংশ রাস্তাঘাট আলো ও মণ্ডপে সাজানো থাকলেও দর্শকের আনাগোনা ছিল না বললেও চলে। পুজো মণ্ডপগুলিতে ‘নো এন্ট্রি’ জোনের ভেতরে কাউকেই দেখা যায়নি।