কলকাতা সংবাদদাতা:
নবান্ন থেকে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, পরিকল্পনা ছাড়াই লকডাউন ঘোষণা করে দিয়েছে কেন্দ্র। আর তাই দেশ জুড়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথাও জানান, লকডাউন কার্যকর পাশাপাশি রাজ্য সরকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রাজ্যে ধাপে ধাপে বাড়ানো শুরু করে দেবে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কন্টেনমেন্ট জোনগুলিতে বিধিনিষেধ বজায় থাকবে। তবে অন্য অঞ্চলগুলিতে ধাপে ধাপে আর্থিক কাজকর্ম শুরু করার জন্য সরকার তৎপরতা শুরু করবে।’ জুয়েলারি, ইলেকট্রনিক্স–সহ বেশ কিছু দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর কথার পর রাজ্যে লকডাউন কতখানি বজায় রাখা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে কোনও লাভ হয় না। শূন্য থালা নিয়েই ফিরতে হয়।’ তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার নাকি রাজ্যের বকেয়া ৫২ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পেও টাকা বাকি রেখে দিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা মোকাবিলায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার (ভারতীয় টাকা) প্যাকেজ ঘোষণা করেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের সারবত্তা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘রাজ্য সরকার স্বীকার না করলেও এ কথা সত্য, কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত অনেক টাকা দিয়েছে রাজ্যকে। রাজ্যের উচিত কেন্দ্রের দেওয়া সেই টাকা করোনা মোকাবিলায় ব্যবহার করা। সেই সঙ্গে সেই খরচের হিসাব কেন্দ্রীয় সরকারকেও দেওয়া উচিত রাজ্য সরকারের। রাজ্য খরচের কোনও হিসাব দেয় না, শুধু কেন্দ্রের কাছ থেকে টাকা চায়।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২ মাস ধরে মানুষের রুজি–রোজগার বন্ধ হয়ে রয়েছে। করোনা ছিল, আছে, থাকবেও। করোনাকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে।’ মুখ্যমন্ত্রীর এ কথায় বিস্মিত অনেকেই। প্রশ্ন উঠেছে, তার মানে কি করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যে অসম্ভব, তা কি মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করে নিলেন? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই যদি এ কথা বলেন, তা হলে সাধারণ মানুষ কতখানি আত্মবিশ্বাসী থাকবেন?
এদিকে, এদিন স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনেও রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি যে খুব একটা ইতিবাচক নয়, তা পরিষ্কার হয়ে যায়। বুলেটিন অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত সারা রাজ্যে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ২ হাজার ১৭৩ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১১০ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। ফলে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৬ জন। এ ছাড়া কো–মর্বিডিটিতে মৃত্যু হয়েছে আরও ৭২ জনের। তা হলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা এখন ১৯৮ জন।