প্রত্যয় ডেস্ক, পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ সংবাদদাতাঃ আগামী বছর পশ্চিমবাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই এই রাজ্যে কি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে চলেছে? সেই বিতর্ক ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কথায়। একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলার শাসন ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থায় রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হলে তা ভুল হবে না।’ বলা বাহুল্য, অমিত শাহের বলা এই কথা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হলেও প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক নেতা বা মন্ত্রীর কোনও রকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ওই সংবাদ মাধ্যমকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, ‘বাংলায় দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আমফানের ত্রাণের টাকা নিয়ে ভয়ঙ্কর রকম নয়–ছয় হয়েছে। তা ছাড়া করোনা পরিস্থিতির কথা মনে রেখে সাধারণ মানুষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে খাদ্যশস্য পাঠানো হয়েছে, তা নিয়েও নোংরা দুর্নীতি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।’ এর পরই রাজ্যের আইন–শৃঙ্খলা নিয়ে তিনি সরব হন। বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীরা খুন হয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ বা প্রশাসন সে সব ক্ষেত্রে দক্ষতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ। বরং তাদের কাজকর্ম নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে রাজ্যে। বোমা, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র এই রাজ্যে সহজলভ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্ত জেলাই যেন এখন বোমা বানানোর কারখানা হয়ে উঠেছে।’
এ কথা বলেই তিনি থেমে যাননি। রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই রাজ্যে রাজনৈতিক কারণে যে নির্যাতন ও খুনোখুনির ঘটনা অবাধে ঘটছে, তা ভারতের অন্য কোনও রাজ্যে ঘটতে দেখা যায় না। এক সময় কেরলে এমন ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যেত। কিন্তু এখন সেখানে এইসব ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাংলায় এইসব ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণের কোনও চেষ্টা করা হচ্ছে না।’ তার মানে কি পশ্চিমবাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘বাংলার যে অবস্থা এখন, তাতে যদি এই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়, তা হলে ভুল হবে না।’
তা হলে কি কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে? এ ব্যাপারে একটু ঘুরিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘পশ্চিমবাংলার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এমন দাবি করতেই পারে। তা তাদের নৈতিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টিকে সাংবিধানিক ভাবে দেখে। রাজ্যপালের রিপোর্ট এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ কথা ঠিক, পশ্চিমবাংলার অবস্থা বেশ মারাত্মক।’ রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সরাসরি রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা না বললেও নির্বাচনের ঠিক আগে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতেই পারে।