1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

পশ্চিমবাংলার বিধানসভা এবার কমিউনিস্ট–শূন্য

  • Update Time : সোমবার, ৩ মে, ২০২১
  • ৩৭৬ Time View

যাঁরা বিজেপিকে পছন্দ করেন না, তাঁদের অধিকাংশই তৃণমূলকে বেছে নিয়েছেন। কেন না, লড়াইটা বাংলায়। আর এখানে এই মুহূর্তে বিজেপিকে আটকাতে পারে একমাত্র তৃণমূলই। ফলে বাম দলগুলি বা কংগ্রেসকে তাঁরা ভোট দিলেন না। এ ছাড়া মুসলিমরাও ধর্মীয় কারণেই বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। ফলে বিজেপি বিরোধী ভোট গিয়েছে তৃণমূলেই। ফলে কংগ্রেস এবং বাম দলগুলির হাতে পেনসিল ছাড়া আর কিছুই রইল না।

উপমন্যু রায়

বাংলার বিধানসভা এবার কমিউনিস্ট–শূন্য। নেই কংগ্রেসেরও কোনও প্রতিনিধি। কারণ, পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনে একটিও আসন পায়নি সিপিএম–সহ কোনও বাম দলই। পায়নি কংগ্রেসও।
ফল ঘোষণার পর এই সত্যোপলব্ধি করেছেন কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন মানুষ। ফেসবুক–সহ সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে তাই দেখতে পাচ্ছি না বিচার–বিশ্লেষণ। হা–হুতাশ। কংগ্রেসি ঘরানার মানুষও নিজেদের আক্ষেপ গোপন রাখেননি।
কিন্তু কেন? আমার প্রশ্ন, কমিউনিস্ট এবং কংগ্রেস প্রতিনিধিরা কেন থাকবেন পশ্চিমবাংলার বিধানসভায়? থাকার কথা ছিল কি?
আমি বলছি, না। ছিল না।

কেন–না, এই নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই কমিউনিস্ট নেতারা বুঝে গিয়েছিলেন বাংলায় মূল লড়াই হতে চলেছে তৃণমূল এবং বিজেপির। তাই বিহার নির্বাচনের পরই সেখানে কয়েকটি আসন পেয়ে গর্বে বুক ফুলে ৫৬ ইঞ্চিরও বেশি হয়ে গিয়েছিল সিপিআই (‌এমএল)‌–এর। দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য স্পষ্টই বলেছিলেন, দেশের বিপদ বিজেপি। তাই তাঁদেরও মূল শত্রু বিজেপি। বাংলায়ও তাই হওয়া উচিত। বাংলার কমিউনিস্টদেরও সে কথা মেনে নিতে হবে। তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার কথা ভাবতে হবে।
মুখে স্বীকার করবেন কিনা জানি না, তবে বাংলার বহু কমিউনিস্ট নেতারও মনের কথা ছিল সেটাই। কিন্তু সে কথা পুরোপুরি মেনে নিলে বাংলায় দলের আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। তা ছাড়া এই তৃণমূলই বামপন্থীদের দীর্ঘ ৩৪ বছরের জমানার অবসান ঘটিয়েছিল রাজ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানতম শত্রু যেমন ছিল বামফ্রন্ট, তেমনই বামেদেরও প্রধান শত্রু ছিলেন মমতা।
সেই মমতার সঙ্গে কী করে হাত মেলাবেন বামপন্থীরা? তাই তাঁরা অদ্ভুত পথ নিয়েছিলেন এই নির্বাচনে। তৃণমূল এবং বিজেপি— দুই দলকেই শত্রু বিবেচনা করে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

এই অবধি মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাতে ফিসফাস আলোচনা থামানো যায়নি। মাঝে মধ্যেই ইতিউতি কমিউনিস্ট বোদ্ধাদের মুখে শোনা যেতে লাগল, বিজেপিকেই মূল শত্রু বিবেচনা করা উচিত।‌ এমনকী, কেউ কেউ এমন ইঙ্গিতও দিলেন যে, ভোটের ফল যদি ত্রিশঙ্কু হয়, তা হলে তৃণমূলকেই সমর্থন করবে বাম দলগুলি। সত্যি কথা বলতে কী, এই ধরনের বক্তব্য কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন সাধারণ মানুষ বা বাম দলগুলির কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুখ খোলেন স্বয়ং সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, ‘ভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হলেও সিপিএম কখনও তৃণমূলকে সমর্থন করবে না।’ বলা বাহুল্য, সূর্যবাবুর এ কথা ছিল নেহাতই কথার কথা।
কমিউনিস্টরা চিরকালই নিজেদের বোদ্ধা ভাবেন। তাই বড় বড় কথা ভাবতে ও বলতে দ্বিধা করেন না। তাই ভোটের আগে অনেক ঢাক–ঢোল পিটিয়ে কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফের সঙ্গে জোট করেছিলেন তাঁরা। এমন ভাব দেখিয়েছিলেন যেন বাংলার ক্ষমতায় সেই জোট চলে আসবে।
ব্রিগেডে তাঁরা আইএসএফ ও কংগ্রেসকে নিয়ে জনসভাও করলেন। চারদিকে হইহই ফেললেন। তার পর যথারীতি সবাই চুপ করে গেলেন।

তৃণমূল এবং বিজেপি যখন সম্মুখ সমরে, তখন কোথায় ছিলেন এই বামেরা? বলতে দ্বিধা নেই, তাঁরা তখন ভাবতে ব্যস্ত, কে প্রধান শত্রু? বিজেপি, না তৃণমূল?
আর তখনই উঠে এলো অদ্ভুত একটি তত্ত্ব। বলা বাহুল্য, এমন তত্ত্ব কমিউনিস্টরাই বের করতে পারেন! তত্ত্বটি হল, ‘বেশি খারাপ এবং কম খারাপ’। প্রশ্ন, কে বেশি খারাপ? উত্তর, বিজেপি। প্রশ্ন, কে কম খারাপ? উত্তর, তৃণমূল। সুতরাং তৃণমূল তাঁদের কম শত্রু, আর বিজেপি বেশি বা বড় শত্রু।

সেই সময় আমার পরিচিত মহলে যাঁরা কমিউনিস্ট, তাঁদের মুখেও শুনতে পেলাম নানা কথা। কেউ কেউ আমায় বলেছিলেন, ‘না রে, বিজেপি বেশি খারাপ। তৃণমূল তবু কিছুটা ভালো।’
আর ভোটের পর কারও কারও আশঙ্কার কথাও জানতে পারলাম। তাঁদের অনেকেই বললেন, ‘বিজেপি এলে বাংলার সর্বনাশ হয়ে যাবে।’
কেউ কিন্তু একবারও বললেন না সিপিএম বা অন্য বাম দলগুলির কী হবে? সেই দলগুলি কী করবে? তারা কেন সর্বনাশের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করবে না?
শেষে ভোটের ফল বের হওয়ার পর আবার কেউ কেউ আমায় বললেন, ‘তৃণমূল জিতেছে বলে আমরা খুশি নই। তবে বিজেপি হেরেছে বলে খুব খুশি। ভালো হয়েছে।’
—কী বলব এই ধারণাকে? ভাবের ঘরে চুরি?
জানতে ইচ্ছে করে, বাংলার ক্ষমতায় কে? তৃণমূল। সেই তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় যে দল বা দলগুলি, তারাই বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করছে। বিজেপির উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তারা তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেরা নীলবাড়ি দখল করতে চায়। তাই তারা বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করছে। সেইজন্য লড়াইটা তারা নিয়ে যেতে চাইছে তৃণমূল বনাম বিজেপিতে।

কিন্তু কমিউনিস্টরা কী করলেন? ক্ষমতায় তৃণমূল রয়েছে। অথচ তাঁরা মনে করছেন, বিজেপি বেশি খারাপ। তাই বিজেপি যেন ক্ষমতায় না আসে। বেশ ভালো কথা। তা হলে তোমরা ক্ষমতায় এসো। তোমরা লড়াইটাকে নিয়ে যাও তৃণমূল বনাম বামে।
তা না করে বলছ, বিজেপির তুলনায় কম খারাপ তৃণমূল। এবং, বিজেপি যেন ক্ষমতায় না আসে। তার মানে তো এটাই যে, তৃণমূলই ক্ষমতায় থাকুক।
তা হলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে নামছ কেন?‌ এরও উত্তর আছে তাঁদের কাছে। সেই সহজ উত্তরটি হল, নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। এ কথাও যে ভুল ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ফলাফলেই। তৃতীয় শক্তি তৃতীয় হল ১টি আসন পেয়ে। যা পেয়েছে আইএসএফ। অন্যদিকে, কমিউনিস্টদের এমন ভাবনাচিন্তাই এবারের নির্বাচনকে নিয়ে গেল বিজেপি বনাম বিজেপি–বিরোধীদের লড়াইয়ে।‌

একই কথা বলতে হবে কংগ্রেস সম্পর্কেও। তবে কংগ্রেসের পথটা একটু সহজ। তারা খোলাখুলি বলতে পেরেছিল, তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই লড়াই করছে তারা। আর বিজেপিকে তাদের সমর্থনের প্রশ্নই নেই। কারণ, কেন্দ্রে (‌মানে দিল্লিতে)‌ তাদের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে।
কিন্তু সমস্যা বাঁধিয়ে দিলেন স্বয়ং রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের হয়ে প্রচারে বাংলায় এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে যে বক্তব্য পেশ করেছিলেন, তার ৯০ শতাংশ অংশেই ছিল মোদি–বিরোধিতা এবং বিজেপির সমালোচনা। তৃণমূল সম্পর্কে প্রায় কিছুই শোনা গেল না তাঁর মুখে। বোঝা গেল না এটা বাংলার নির্বাচন, নাকি দিল্লির!‌
স্বভাবতই তাঁর সভা নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায়নি কংগ্রেস কর্মী–সমর্থকদের মধ্যেও। রাহুল গান্ধীও হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই কোভিড পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে দ্বিতীয়বার আর বাংলায় প্রচার করতে আসেননি। তবে সেই একবার এসেই তিনি কংগ্রেসের যে সর্বনাশ করার, তার প্রায় পুরোটাই করে গিয়েছিলেন।

তা হলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? বিজেপিই মূল শত্রু হয়ে গেল কমিউনিস্ট এবং কংগ্রেসের কাছে। আবার তৃণমূলেরও প্রধান শত্রু বিজেপি। তাই একদিকে বিজেপি, অন্যদিকে তৃণমূল এবং বাম ও কংগ্রেস। অথচ, কী আশ্চর্য দেখুন, তৃণমূলের বিরুদ্ধেও লড়াই করছে কংগ্রেস এবং বাম জোট বেঁধেই।
সাধারণ মানুষ, যাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই কোনও দ্বিধা না করে তৃণমূলকে বেছে নিয়েছেন। কেন না, লড়াইটা বাংলায়। আর বাংলায় এই মুহূর্তে বিজেপিকে আটকাতে পারে একমাত্র তৃণমূলই। ফলে নিজেদের দল বা কংগ্রেসকে তাঁরা ভোট দিলেন না।
এ ছাড়া মুসলিমরাও ধর্মীয় কারণেই বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। ফলে বিজেপি বিরোধী ভোট গিয়েছে তৃণমূলেই। ফলে কংগ্রেস এবং বাম দলগুলির হাতে পেনসিল ছাড়া আর কিছুই রইল না।
বরং আইএসএফ অনেক সহজেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে পেরেছে। বিজেপির সমালোচনা করতেও দ্বিধা করেনি। তবে ক্ষমতা থেকে তৃণমূলকেই যে তারা সরাতে চায়, সে কথা এড়িয়ে যায়নি। ফল তথাকথিত তৃতীয় শক্তি বা জোটের পক্ষে তারাই একমাত্র আসনটি পেয়েছে ভাঙড়ে।

স্বাভাবিক কারণে শেষ পর্যন্ত মূল লড়াইটা হল বিজেপি বনাম তৃণমূলেই। আর তৃণমূলও ব্যাপক জনাদেশ নিয়ে ফের ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছে গেল। অন্যদিকে, কংগ্রেস শূন্য এবং অতি সচেতন এবং বোদ্ধা কমিউনিস্টরাও শূন্য।
বদলে কমিউনিস্টরা ভাবের ঘরে চুরি না করে যদি সরাসরি বলেই দিতেন, বাংলায় তাঁরা বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাবেন, তা হলে আমি নিশ্চিত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের হয়তো গোটা চারেক আসন ছেড়ে দিতেন। যে আসনগুলিতে দাঁড়িয়ে তাঁরা অনায়াসে খুলে ফেলতে পারতেন বিধানসভার দরজা। অন্তত এই লজ্জার ইতিহাস তৈরি হত না। একই কথা বলা চলে কংগ্রেস সম্পর্কেও।

বাংলার বিধানসভায় বাম বা কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধিই থাকবেন না এবার। ১৯৫২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা কি আর ঘটেছে? —না, ঘটেনি।

লেখক: উপমন্যু রায়

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..