জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যাপিত হলো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চৈত্রসংক্রান্তি ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব বিজু-সংগ্রাই-বৈসু-বিষু-চাংক্রান।‘বৈচিত্র্যের শক্তিতে বিকশিত হোক জুম্ম ভাষা ও সংস্কৃতি’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো ঢাবি ক্যাম্পাসে এই আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ’।
আনন্দের এ দিনে ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি’ দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার(১২ এপ্রিল) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ফুল ভাসিয়ে বিজু-সংগ্রাই-বৈসু-বিষু-চাংক্রান উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষ বরণের এই উৎসবকে চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু, মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও ম্রো জনগোষ্ঠী চাংক্রান নামে উদ্যাপন করে থাকে। পরীক্ষার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাড়িতে যেতে না পারা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ হলে আজ সম্মিলিতভাবে শুধু ফুল বিজু উদ্যাপন করলেন।
পরে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহার নেতৃত্বে হল থেকে বিজু-সংগ্রাই-বৈসু-বিষু-চাংক্রান ২০২২ উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এ সময় মাইকে বাজছিল বিজুর গান ‘তুরু তুরু তুরু রু’। শোভাযাত্রাটি টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে দিবসটি উপলক্ষে সমাবেশ হয়। সমাবেশে মূল বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের ছাত্রী হেমা চাকমা।
এতে ছয় দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা; সংবিধান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া; পয়লা বৈশাখের মতো বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষ্ণু-চাংক্রান উৎসবের সময়ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত তিন দিন সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা; সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পাহাড়ের আদিবাসীদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া; এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে আদিবাসীদের ভাষা নিয়ে গবেষণা ও ভাষাশিক্ষা কোর্স চালু করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ সহসভাপতি সতেজ চাকমা বলেন, ‘চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষের এই আয়োজন ঘিরে পাহাড়ের পরতে পরতে যে হর্ষধ্বনি, তা ঢাকা শহরের বুকে নতুন দিনের জয়গান গাক—এই আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হোক।’