প্রত্যয় নিউজডেস্ক: প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের পরীক্ষা উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির কারণে শিশুদের নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই প্রস্তুত করা সম্ভব না হওয়ায় এ কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে ২০২১ সালে দেশের এক হাজার বিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি চালু করা হবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিপিইর মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিশু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা তুলে দিয়ে ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইলটিং হিসেবে ১০০টি বিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি চালু করা হয়। তবে ২০২১ সাল থেকে দেশের সাড়ে ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, আগামী বছর দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস মূল্যায়ন চালু করা সম্ভব না হলেও বেছে বেছে বিভিন্ন জেলার এক হাজার স্কুলে ক্লাস মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হবে। ২০২২ সাল থেকে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন এ পদ্ধতি চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০২১ সালে নতুন পাঠ্যসূচিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেয়া হয়। তার আগে ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ১০০ স্কুলে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, সামেটিভ পরীক্ষা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত রাখব না, ফরমেটিভ পরীক্ষা রাখব। অর্থাৎ রাউন্ড দ্য ইয়ার পরীক্ষা নেয়া হবে।
২০২১ সালে নতুন কারিকুলামের পুরো বাস্তবায়ন হবে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘গতানুগতিক প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক পরীক্ষা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে না। সারা বছরেই ক্লাসে মূল্যায়ন করা হবে। শুধু পড়াশোনা নয়, শিক্ষার্থীর আচার-আচরণ সবগুলো বিষয় মূল্যায়ন করে গ্রেড দেয়া হবে বলে।’
ক্লাস মূল্যায়ন পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছর থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস মূল্যায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান সংকটের কারণে আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না-ও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই তৈরির কথা থাকলেও এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে) সেসব বই তৈরি করতে পারছে না। নতুন বই তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এসব কারণে আগামী বছর থেকে ক্লাস মূল্যায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলেও পরবর্তী বছর থেকে এটি কার্যকর করা হবে।’
দেশের ৬৫ হাজার ৫৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় না, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। শিশুর ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব পরীক্ষা তুলে দিতে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন। অতিরিক্ত চাপে লেখাপড়া নিয়ে শিশুদের মধ্যে যেন ভীতি তৈরি না হয় সেজন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের নজর দিতে গত ১৩ মার্চ এক অনুষ্ঠানে অনুরোধ রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি প্রাথমিকে ২০১৪ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু করা হয়। প্রাক-প্রাথমিকের প্রথম ব্যাচে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের প্রাথমিক সমাপনীতে অংশ নিয়েছে।