নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীর বনানী থানার পুরস্কার প্রাপ্ত এসআই (উপ-পরিদর্শক) ফেনীর আবু তাহের ভুঞাঁ মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক। তিনি কড়াইল বিট ইনচার্জ। নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার করে মাদক মামলায় ফাঁসানো, গ্রেফতার বানিজ্য, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় ও বস্তির ঘর দখলসহ অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুলিশের বদলি হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে তদবির-সুপারিশে বেশ কয়েক বছর ধরে এসআই তাহের বনানী থানায় বহাল তবিয়তে আছেন।
গত ২৬ অক্টোবর, ২০১৯ ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’ উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগরে কমিউনিটি পুলিশিংয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় জনসাধারণ ও পুলিশ অফিসারকে পুরস্কৃত করা হয়। এরমধ্যে গুলশান বিভাগের বনানী থানার এসআই আবু তাহের ভুঞাঁ পুরস্কৃত হন।
অথচ বিভিন্ন সূএে জানা গেছে, বনানী থানা এলাকায় মাদক ব্যবসার অদৃশ্য গডফাদার এসআই তাহের। আড়ালে থেকে তিনি মাদক ব্যবসার মদদ দিচ্ছেন। তার ইশারাতেই হচ্ছে মাদক ব্যবসা। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছেন। যারা তাকে ম্যানেজ করতে পারেন না তারাই হচ্ছেন গ্রেফতার। আর যারা ম্যানেজ করতে পারেন তারা অনেকটা প্রকাশ্যেই করছেন মাদক ব্যবসা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসআই আবু তাহের মাদক মামলায় এ পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করেছেন হাতে গোনা কয়েকজন বাদে তারা কেউই মাদক ব্যবসায়ী না। অধিকাংশই নিরীহ মানুষ, তার ফাঁসানো মামলায় জেল খাটছেন, মামলা বয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘুরেফিরে একজনকেই বারবার গ্রেফতার করেছেন এমন ঘটনাও আছে। সন্দেহভাজন নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার করে কিছু না পেলেও নিজের মনগড়া মাদকের সংখ্যা বসিয়ে মাদক মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে পয়েন্টের পাল্লা ভারি করেন এসআই তাহের।
২০১৮ সালে ডিএমপির গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও মাদকের পৃষ্টপোষক হিসেবে উঠে এসেছিল এসআই আবু তাহেরের নাম।
বনানী থানাধীন কড়াইলের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এসআই আবু তাহেরকে চাঁদা না দিলে বস্তির নিরীহ মানুষকে মাদক মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে তাদের ঘর দখল করে নেন। মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে অনেককে এলাকাছাড়া করে তাদের ঘরও দখল করেছেন তিনি। এভাবে তিনি কড়াইল বস্তির অন্তত বিশটি ঘরের মালিক বনে গেছেন। এসব ঘর থেকে ভাড়া আদায় করেন তার সহযোগী কনস্টেবল শহিদুল। এছাড়া কড়াইল বস্তিতে নতুন ঘর তুলতেও এসআই তাহেরকে চাঁদা দিতে হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
গত শনিবার (৪ জুন) বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহম্মেদ রাজারবাগ বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে বিশেষ অপরাধ ও আইন শৃঙ্খলা সভায় বলেন, ‘জনগণের পুলিশ হতে হলে পুলিশকে মাদকমুক্ত করতে হবে। কোন পুলিশ সদস্য মাদক খাবে না, মাদকের ব্যবসা করবে না, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। বাংলাদেশকে একটি মাদকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে যুথবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে এটা অনস্বীকার্য যে মাদক নির্মূল পুলিশকেই করতে হবে।’
আইজিপি’র এমন নির্দেশনার পরেও বনানী থানা এলাকায় মাদক ব্যবসা থেমে নেই। পুলিশ ও সোর্সদের সহযোগীতায় প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মাদক। নিয়ন্ত্রণে নেই অভিযান।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য সূএে বনানী থানা এলাকায় এসআই আবু তাহের ভুঞাঁর মদদে এখনো যারা মাদক ব্যবসা করছেন তারা হলেন- শফিকুল, পাগলা শরীফ, সোর্স শহীদ, মোল্লা মাসুম, বাবা কাশেম, জামাই মালেক, মানিক, নাটা ইউসুফ, শুভ, রাব্বি, রকি, মফিজ, স্বপন ও পাটুরিয়া সুমন।