দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ ২১ জানুয়ারি জন্মদিন ছিল তার। বন্ধু, বলিউড, পড়শি ভেবেই উঠতে পারছেন না বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত ‘নেই’!
রবিবার মুম্বাইয়ের বান্দ্রার নিজ ফ্ল্যাটে থেকেই উদ্ধার হয় তার ঝুলন্ত দেহ। বাড়িতে থাকা কাগজপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরেই ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমের সূত্র, বেশ কিছুদিন ধরেই ‘এম এস ধোনি’ মন খারাপে ডুবে। এ মন খারাপ বিলাসিতার নয়। এ এক অসুখ। বিগত ছয় মাস ধরে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন চলছিল, তিন মাস গৃহবন্দি। বন্ধুদের সঙ্গে বাক্যালাপ পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা নয়। অর্থ, শিক্ষা সব ছিল তার। নিয়মিত শরীরচর্চা, বন্ধু-আড্ডা, দিল্লির ইঞ্জিনিয়ার থেকে মুম্বাইয়ের তারকা। লাখ লাখ মেয়ের হৃদয়ের রাজা। তার এমন কেন হল? এর মধ্যেই গত সপ্তাহে তার প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ান আত্মহত্যা করেন। সে খবর নিজে জানিয়েছিলেন সুশান্ত।
আর তার পরেই তিনি…
এই হাসিখুশি ছেলেটার কোনও ডিপ্রেশন থাকতে পারে? হলে মুক্তি পাওয়া শেষ ছবি ব্লকব্লাস্টার ‘ছিছোড়ে’। ছবিতে তো আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সংলাপ বলেছেন! তবে? সেই তিনি আত্মহত্যা করে মারা যাবেন? দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোর চেষ্টা চলছে ম্যানেজারের আত্মহত্যা আর পরবর্তী কালে তার মৃত্যু নিয়ে।
এটা আপাতত তদন্ত বলবে। তবে অভিনেতার শেষ এক সপ্তাহের ইনস্টাগ্রাম যদি দেখা যায়, তবে এটা স্পষ্ট ভাবে উঠে আসবে, মনের দিক থেকে সত্যিই বোধহয় ফুরিয়ে যাচ্ছিলেন সুশান্ত। সেই অগোছালো ভাব ছায়া ফেলেছে সোশ্যালে।
সুশান্তের ইনস্টাগ্রামে চোখ রাখলে প্রথমেই দেখা যাবে ২ মে-র পোস্ট। একটি গাছ আর একটি মেয়ে ছবিতে। ক্যাপশন বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ, ‘আজ ঘুম ভেঙেই নিজেকে তোমার চোখ দিয়ে দেখেছি। তার পর আবার দেখলাম তোমায়। সঙ্গে সঙ্গে সব বুঝলাম…’
এই ‘তুমি’-টি কে?
৫ মে-র পোস্টে নিজেকে ভাল রাখার একটি লিস্ট বানিয়েছিলেন অভিনেতা। তাতে ছিল ৭ ঘণ্টার টানা ঘুম, ধ্যান, যোগ, ভাল কিছু লেখা, অনলাইনে ইতিবাচক লেখা পড়া আর হালকা উপোস। অর্থাৎ, ভাল থাকার ইচ্ছে পুরোদস্তুর ছিল মনে। কিন্তু সঙ্গের ছবিটি বলছে অন্য কথা। মুখ-চোখে বিষণ্ণতার গাঢ় ছাপ।
বিষণ্ণতা? সুশান্তের? ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি বিহারের পটনায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম সুশান্ত সিং রাজপুতের। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করলেও শুরু থেকে তার ঝোঁক ছিল অভিনয়ের প্রতি। সেই আগ্রহ থেকেই মিডিয়া জগতে তিনি পা রেখেছিলেন ব্যাকআপ নৃত্যশিল্পী হিসেবে। তার পর অভিষেক কাপুরের ‘কাই পো ছে’ ছবির হাত ধরেই বলিউডে পদার্পণ। সেখান থেকে বলিউডের জনপ্রিয়তা তাকে হাতছানি দেয়। আসে সাফল্য।
এম এস ধোনি (দ্য আনটোল্ড স্টোরি), পিকে, কেদারনাথের মতো একের পর এক জনপ্রিয় সিনেমায় তার দাপুটে অভিনয় মন জয় করেছিল বিশ্বের। এই সুশান্তকে তবে ৩৪ বছরেই চলে যেতে হল কেন?
মেন্টাল অ্যাক্টিভিস্ট রত্নাবলী রায় বলছেন, “শুধু মানুষের সাফল্য, ক্যারিয়ার এই ক্ষেত্র ধরে তার অবসাদের কারণ যাচাই করা যায় না। আমরা কি জানি ওর কোনও ধার ছিল কি না? ওর সম্পর্কের জায়গা কেমন ছিল? এগুলোও মানুষকে তার নিজের জীবন নিয়ে নিতে বাধ্য করে। আর মনের অসুখ হওয়ার আগেও মনের অস্বস্তি হয়। এই ইনস্টাগ্রাম পোস্ট হয়ত সেই মানসিক কষ্টের ইঙ্গিত দিচ্ছে।” সূত্র: আনন্দবাজার।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন