করোনাভাইরস মহামারির নতুন করে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটেন এখন মহাবিপদে পরতে যাচ্ছে।ইউকের বর্ডার গুলিতে ইউরোপের পন্যবাহী ট্রাক আটকে আছে। এছাড়া বিশ্বের সাথে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। ইউরোপের সাথে বিমান যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এসব কারনেই ব্রিটেনে খাদ্য সংকটের আশংকা করা হচ্ছে।
ফ্রান্স অবশ্য ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থল ও আকাশ পথের সব ধরনের পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার লরি চলাচল করে দেশ দুটির মধ্যে।ফান্স এবং ইউকে এই দুই দেশের মধ্যে লরি চলাচল বন্ধ থাকায় রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃস্টি হয়েছে। খাদ্যপণ্য বহনকারী হাজার হাজার লরি যাতায়াত না করলে অচিরেই মহা খাদ্য সংকটে পরবে ব্রিটেন।
ফ্রেশ ফুড খাওয়ার আশা আপাতত না করাই ভালো কেননা ফ্রান্স থেকে পন্যবাহী লরি ব্রিটেনে প্রবেশ করতে চাচ্ছে না। অনেক লরি ড্রাইভারই ব্রিটেনে আসবেন না তাদের ভাষ্য “খাদ্য সাপ্লাই দিতে এসে করোনাভাইরস নিয়ে ঘরে ফিরবেন’”।এই আশংকায় লরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।লরি যাতায়াত না করলে ফ্রেশ ফুড আসার কেন সম্ভবনা নেই।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সোমবার ক্যাবিনেট মেম্বার, সিনিয়র মিনিস্টার, আর্মি অফিসার, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা, রোড এ্যান্ড হাইওয়ের কর্মকর্তা , সাইন্টিস্ট সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের নিয়ে কোব্রা মিটিং এর আয়োজন করেছেন। এই মিটিং থেকেই খ্রিস্টমাস খাদ্য সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করবেন।
এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম বিভিন্ন মেয়াদে ফ্লাইট বাতিল করেছে।
এছাড়া অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।আয়ারল্যান্ড সরকার ঘোষণা করেছে, ইংল্যান্ড, ওয়ালেস এবং স্কটল্যান্ড থেকে আসা ফ্লাইটগুলোকে মধ্যরাত থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ করা হবে।
তারা বলেছে, ‘জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে, ব্রিটেনের জনগণ আকাশ বা সমুদ্রপথে আয়ারল্যান্ডে ভ্রমণ করা উচিত নয়’।
এসব কারনে সব্জি, কাঁচা মাল নস্ট হবে রাস্তায় আর অন্য খাদ্য প্রবেশ না করতে পারায় খাদ্য সংকট সৃস্টি হবে।
রোববার হেল্থ সেক্রটারী হ্যানকক বলেন, দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকা করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের কারণে সরকারকে বড়দিনে বিধিনিষেধ শিথিলের পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়েছে। কোভিড সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ার আলামত পেয়ে শনিবার দ্রুতই বিধিনিষেধ জারি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হেল্থ সেক্রেটারী আরে বলেন, “সবাই বড়দিন পালনের নানা পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের আরও বেশি সংক্রামক এবং আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়া স্ট্রেইনটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাই সরকারকে দ্রুত এবং বিস্তারিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে”।
এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন রূপটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বিবিসি জানায়, করোনাভাইরাসের নতুন যে ধরন শনাক্ত হয়েছে। এই ভাইরাস অতিদ্রুত ছড়িয়ে পরে সে জন্য বেলজিয়াম ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের ফ্লাইট বন্ধ ঘোষনা করেছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। এদিকে আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটির সাথে সব ধরণের ফ্লাইট বন্ধ দিয়েছে ইতালি। অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়ামও একই পদেক্ষেপ নিয়েছে।
তুরস্ক আপাতত সব ধরণের ফ্লাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়েছে। আরো কয়েকটি দেশ থেকে দ্রুতই একই ধরণের ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, লন্ডন ও দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি ৭০ শতাংশেরও বেশি সংক্রামক। নতুন ও আরও বেশি সংক্রামক শক্তি সম্পন্ন করোনাভাইরাসের নতুন একটি প্রজাতি ব্রিটেনে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে ব্রিটেন দেশের বিভিন্ন অংশে লোকজনকে ঘরে থাকার নির্দেশ জারি করেছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন,”করোনাভাইরস মহামারি নিয়ন্ত্রে না আসলে ব্রিটেনের জন্য বিরাট সমস্যা দেখা দিবে।খাদ্য সংকট ছাড়াও বিশ্বের সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। একই সাথে অর্থনৈতিক ভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি জনসাধারনের জীবন রক্ষাও হুমকির মুখে পরবে।সবাইকে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে”।