বগুড়া সংবাদদাতা:বগুড়ার শাজাহানপুরের গন্ডগ্রাম এলাকায় গত পাঁচ জুন ক্লুলেস গার্মেন্টস কর্মী মিম আক্তার(১৯) হত্যার রহস্য উদঘাটন সহ এঘটনায় এক জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি আদালতে হত্যার বিবরণ দিয়ে দায় স্বীকার করেছে।
বগুড়ার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানায় বগুড়ার শাজাহানপুর থানার গণ্ডগ্রামে গত পাচ জুন শুক্রবার সকালে মিম আক্তার(১৯) নামক একজন গার্মেন্টস কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান নিহত মিম আক্তার ঢাকার আশুলিয়ার গ্রীন লাইফ গার্মেন্টসে কাজ করতেন। ৪/৬/২০২০ তারিখে তিনি গাজিপুরের মৌচাক এলাকা থেকে বগুড়া গামী একটা বাসে উঠেন। তার কাছে কোন মোবাইল ফোন ছিল না, বাসের কন্ডাকটরের মোবাইলের মাধ্যমে তিনি বগুড়ার কলোনীতে কর্মরত হোটেল কর্মী মায়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। বাসটি রাত সাড়ে নয়টার দিকে বগুড়ার বনানী পেট্রোল পাম্পের সামনে মিমকে নামিয়ে দেয় এবং কন্ডাকটর তাকে একটি মোটা চাকার অটোরিকশায় তুলে দেন।
কিন্তু যথাসময়ে বাড়িতে না পৌঁছায় মিমের পরিবার সেই কন্ডাকটরের নম্বরে দফায় দফায় যোগাযোগ করলে তিনি জানান তাকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে রিকশায় তুলে দেয়া হয়েছে।
পরদিন সকালে রানিরহাট – গণ্ডগ্রাম রোডের ৪ ইঞ্জিনিয়ার্স গামী রাস্তার উপরে একটা মেয়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে শাজাহানপুর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং নিহত মেয়ের পাশে থাকা পরিচয়পত্রের নম্বরে ফোন দিয়ে তার মাকে ডাকলে তিনি এসে মৃতদেহ শনাক্ত করেন।
বাস কন্ডাকটরের দেয়া তথ্যমতে সেই রিকশা চালকের অবয়বের ধারণা নিয়ে খুঁজতে থাকে টিম শাজাহানপুরের সদস্যরা। গত ১৬ তারিখ রাতে কৈগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই ফারুক সেই বর্ণনার সাথে মিলে যাওয়া একটা মোটা চাকার অটো রিকশাচালককে পায়।
নাম নুর ইসলাম(২৮),পিতা রফিকুল ইসলাম গ্রাম পাকুড়তলা,মোকামতলা,শিবগঞ্জ। বর্তমানে পালশা এলাকায় ভাড়া থেকে রিকশা চালায়।
সেই মোতাবেক সন্দেহজনক রিকশা চালক কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে সে ঘটনার কথা স্বীকার করে। সে জানায় বনানী পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে সে মেয়েটিকে তুলে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছে, তার সাথে আরও চারজন ছিল। প্রাথমিকভাবে সে জানায় সবাই মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে তারপর মেরে ফেলেছে। চারজনের নাম ঠিকানাও সে বলে দেয়। টিম শাজাহানপুরের সদস্যরা পরদিনই তিনজনকে আটক করতে সমর্থ হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে দেখা যায় তাদের অবস্থান সেখানে মোটেও ছিল না বরং আটক রিকশা চালকের সাথে চারজনেরই পূর্ববর্তী শত্রুতার ঘটনা আছে। আর গণ ধর্ষণের কোন আলামতও মেয়েটির শরীরে ছিল না। তাকে আদলতে হাজির করিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আনা হলো। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে সত্যটা স্বীকার করে ফেলে।
সে জানায় মেয়েটাকে তুলে নিয়ে সে বনানী মোড়ে আসতেই তার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চেপে যায়। শহরের দিকে না এসে সে বামে মোড় নিয়ে শাকপালার দিকে যেতে থাকে। মেয়েটি বগুড়ার রাস্তাঘাট না চেনায় বুঝতে পারেনি। টিপটিপ বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তা ছিল জনশূন্য। মেয়েটিকে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার ব্যাগ কেড়ে নিয়ে তার সাথে খারাপ আচরণ শুরু করলে মেয়েটি বাঁধা দেয় এবং ধস্তাধস্তি শুরু। সে মেয়েটির মুখে আঘাত করলে তার ঠোঁট কেটে যায়। এরপর নুর ইসলাম রিকশার চাকা খোলার রড দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করে। এক আঘাতেই মেয়েটি মারা গেলে সে রডটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে ব্যাগটি নিয়ে চলে আসতে থাকে। কিছুদূর এসে পোশাক পড়া লোক আসতে দেখে সে ব্যাগটি ছুড়ে ফেলে দেয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক রডটি উদ্ধার করা হয়েছে।
আসামি নুর ইসলাম আজ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব খালিদ হাসানের আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।