বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও আজকের বাংলাদেশ
— নাইম ইসলাম নিবির
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার একমাত্র প্রতীক। মুক্তি ও আলোর দিশারি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কখনও বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র নায়ক।
তার ডাকেই বাংলার মানুষ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই আমরা আজ স্বাধীন সার্বভৌম দেশের স্বাধীন নাগরিক। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এক মহান নায়ক তিনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের শ্রেষ্ঠতম প্রবক্তা। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও সংগ্রাম তিনি নিজের চেতনায় লালন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর সেদিনকার সেই সাতই মার্চের ভাষণই আমাদের শিরায়-উপশিরায় জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রকে সঞ্চারিত করেছিল। অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের এক আপসহীন সংগ্রামী নেতা শেখ মুজিব। আমাদের বিস্মৃত জাতিসত্তাকে তিনি জাগ্রত করেছেন। আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন মহান স্বাধীনতার সংগ্রামে, মুক্তির সংগ্রামে। তাইতো বঙ্গবন্ধুর জীবন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে অভিন্ন ও একাত্ম একটি বিষয়। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও আমাদের স্বাধীনতা যেনো একই সূত্রে গাঁথা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নির্দেশ না দিলে আমাদেরকে হয়তো আজও পরাধীন জাতি হিসেবেই চিহ্নিত থাকতে হতো। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন ভূখণ্ড বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন বলেই আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশ হতে উন্নত দেশে পরিনত হবার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি উন্নয়নের মাইল ফলকে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। তিনি সর্বদা ছিলেন জনগণের পক্ষে, স্বাধীন মতপ্রকাশের পক্ষে এবং শোষণ ও বঞ্চনার বিপক্ষে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, শৃঙ্খল ও শোষণমুক্তির প্রবল আকাঙ্ক্ষাই ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের মূল লক্ষ্য। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫৪’র নির্বাচন, ৫৮’র সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান এসব কিছুই যেন তার গণতান্ত্রিক চেতনা, শৃঙ্খল ও শোষণমুক্তির উদগ্র বাসনাকে আমাদের সামনে তুলে ধরে।
তিনি তার ব্যক্তিসত্তাকে বাঙালি জাতিসত্তায় রূপান্তরিত করেছিলেন। নিজের স্বার্থকে বাঙালির জাতীয় স্বার্থে বিলীন করে দিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি পরিণত হয়েছিলেন বাংলার সব বর্ণের, সব ধর্মের, সব মানুষের এক অবিসংবাদিত নেতায়। তিনিই একমাত্র নেতা যিনি পুরো দেশকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। সমগ্র বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য ছিলেন। তার অঙ্গুলির নির্দেশে সারা দেশ থমকে যেত। গাড়ির চাকা থেমে যেত। কোর্ট-কাছারি বন্ধ হয়ে যেত। তার কথায় বাঙালি কাঁদত-হাসত। তার জন্য মানুষ প্রার্থনা করত। তিনি ছিলেন বাঙালির স্বাধীনতার এক মহা নায়ক। তাই ভালোবেসে সকলে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যেন অভিন্ন বিষয়। একে অপরের পরিপূরক।
প্রিয় পাঠক! আজ ২৬ শে মার্চ। এই মার্চ মাসের ৭ তারিখেই বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন ততকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। উল্লেখ করেছিলেন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনার কথা। বঙ্গবন্ধু তার ধৈর্যশীল রাজনৈতিক ভূমিকার পাশাপাশি পাকিস্তানিদের হিংস্রতা ও নৃশংসতার বিবরণ দিয়ে সবশেষে হাত উঁচিয়ে অঙ্গুলি দোলানোর মাধ্যমে পরবর্তী দিকনির্দেশনা দেন এভাবে- ‘আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে, আজ থেকে কোর্ট, কাছারি, আদালত, ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে… আর যদি একটি গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের উপর আমার অনুরোধ রইল- প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’। ভাষণটি যতবারই শুনি আমি অনুভব করি, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ থেকে অবিরাম আগুনের ফুলকি ঝড়ে পড়েছিল সেদিনের সেই ভাষণটিতে।
তার ঐতিহাসিক এই বক্তৃতা শুনে মনে হয়, তিনি আগুনের অক্ষরে লেখা এক দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তি করে যাচ্ছেন। সেদিনই সর্বপ্রথম তিনি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ রমনার রেসকোর্স ময়দানের লাখ লাখ কণ্ঠে তখন ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে- ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। প্রকৃত অর্থে সেটিই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা।
পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা ব্যর্থ হলে নেমে আসে ২৫ মার্চের কালরাত। অপারেশন সার্চলাইটের নামে মধ্যরাতে সমগ্র ঢাকায় ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের ওপর শুরু হয় পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরোচিত সশস্ত্র হামলা। দীর্ঘ সময় যাবৎ চলতে থাকে গণহত্যা। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সৈন্যরা। তার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এক ওয়ারলেস বার্তায় তিনি বলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।’
মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে লন্ডন ও ভারত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি আত্মনিয়োগ করেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে। ওই বছরই ২৬ শে মার্চ প্রদত্ত বেতার ও টেলিভিশনের ভাষণে তিনি বলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই।’ কিন্তু তার সে স্বপ্ন সফল হওয়ার আগেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে তিনি চিরদিনের মতো বিদায় নিলেন। বিবেকহীন এক প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি শহীদ হলেন।
যিনি বাংলাদেশ শব্দটির বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন, যার পদভারে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল, ঘাতকরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। অতঃপর তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল ইতিহাস থেকে। কালক্রমে তিনি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। উল্টো ষড়যন্ত্রকারীরাই মুছে গেছে ইতিহাস থেকে।
বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই। কিন্তু পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি সসিউলিজমে বিশ্বাস করি।’ ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত আলজিয়ার্সের জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে প্রদত্ত এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ বঙ্গবন্ধুকে শোষক গোষ্ঠীভুক্ত সমাজতন্ত্রের শত্রুরাই নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল। ১৯৪৬ সালের হিন্দু-মুসলমান রায়টের সময় কখনও তিনি রক্ষা করেছেন পীড়িত হিন্দুদের, আবার কখনও আক্রান্ত মুসলমানদের। দেশবিভাগের পর তিনি হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জন্য নিরন্তর কাজ করে গেছেন।
‘কারাগারের রোজনামচা’য় বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন, ‘রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়। সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়।’ বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন প্রকৃত বীর। কখনও নীতির সঙ্গে আপস করেননি। বারবার তিনি জেলে গেছেন। আবার বীরের মতো বেরিয়েও এসেছেন জেল থেকে। সবশেষে খুনিদের বুলেটে তিনি মৃত্যুবরণ করেও হয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়ী। আমাদের মাঝে তিনি ফিরে আসেন বারবার আদর্শের প্রতীক হয়ে। বঙ্গবন্ধু মিশে আছে বাংলার আকাশে বাতাসে ফসলের মাঠে নদ-নদীর বুকে। স্বাধীনতার পরাজিত ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। সেই আদর্শের বলে বলিয়ান হয়েই ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন ছাত্রনেতা। কারাগারে তিনি ছিলেন কয়েদিদের নেতা। যখন বাইরে ছিলেন তখন তিনি ছিলেন সর্বসাধারণের অবিসংবাদিত নেতা। তার নেতৃত্বের মূল প্রতিপাদ্য ছিল সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমার দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ বঙ্গবন্ধু অভ্যুদয় ঘটিয়েছেন স্বাধীন-সার্বভৌম এক নতুন দেশের, যার নাম বাংলাদেশ। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ দেশটির নাম উচ্চারণ করেছিলেন তার এক কালজয়ী গীতি কবিতায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা উচ্চারণ করে বাস্তবে রূপায়িত করেছেন। বঙ্গবন্ধু সবসময় সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। যা এখন বাস্তবে রূপ দিতে সর্বক্ষণ দক্ষতার সঙ্গে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তারই সুযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা যদি বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চিত্রটির দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে দেখব, আমাদের অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক চিত্র থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে একটি শক্ত অর্থনৈতিক অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। অথচ সে সময় বিশ্বের কোনো দেশই আশা করেনি, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এতটা শক্তিশালী অবস্থানে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এক কথায় বাংলাদেশকে উড়িয়েই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘বটমলেস বাস্কেট’। তার ধারণা ছিল, দেশটি কখনোই অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারবে না। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বন্যা, ঝড়-ঝঞ্ঝার এ দেশ প্রান্তিক পর্যায়েই থেকে যাবে। সে সময়ের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তার এ ধারণা অমূলক ছিল না। তবে এদেশের মানুষ শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যে টিকে থাকতে পারে এবং এগিয়ে যেতে পারে, এ দিকটি হয়তো কিসিঞ্জারের জানা ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফিরে নিপীড়িত-নির্যাতিত, ক্ষুধা-দারিদ্র্যে জর্জড়িত মানুষের খাদ্যসংস্থান এবং অর্থনীতি বিনির্মাণে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। তিনি সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভাগ্য ফেরাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জাতির পিতা হিসেবে জাতির ভাগ্য অন্বেষণে এমন কোনো পথ নেই যা তিনি অবলম্বন করেননি। দুঃখের বিষয়, যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তাতেও একটি বিরোধী শ্রেণী সক্রিয় ছিল। তারা বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। যার কারণে সে সময় দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ফলাফল হিসেবে ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দেশের এই দুর্দশার মধ্যেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে বিপথগামী সেনা সদস্যদের দ্বারা স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর দেশ এক টালমাটাল এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুদ্ধ অবস্থার মধ্যে পড়লেও দিশা হারায়নি। বিগত প্রায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে সমগ্র বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে প্রশংসিত ও পুরষ্কৃত। বিশ্বনেতারা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করতে বাধ্য হচ্ছে। জিডিপি, মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু বৃদ্ধি, কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মতো উচ্ছ্বাসমূলক ঘটনা একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ঘটেছে। এছাড়াও আমরা আজ মাছ ও শাক-সবজি উৎপাদনসহ কৃষিতে বিশ্বে প্রথম সারিতে রয়েছি। পশুপালনেও ব্যাপক সাফল্য রয়েছে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের মতো বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। পায়রা সেতু, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, পায়রা বন্দর বাস্তবে রুপ পেয়েছে।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সাথে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে দেশের ইতিহাসে। বাংলাদেশ বর্হিবিশ্বে এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের চলমান মেঘা প্রজেক্টগুলো ও তার শেষ হওয়ার সম্ভাব্য সময়ঃ খুলনা রেল সেতু – জুন ২০২২, বেকুটিয়া সেতু – জুন ২০২২, মিরপুর -কালশী ফ্লাইওভার – জুন ২০২২, কালনা সেতু – জুন ২০২২, ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু – জুন২০২২, ঢাকা – টাঙ্গাইল ৪ লেন – জুন ২০২২, বনানী – এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেসওয়ে – জুন ২০২২, পদ্মা সেতু -জুন ২০২২, ভাঙা মাওয়া রেল – জুন ২০২২, লোহালিয়া সেতু – জুলাই ২০২২, গোমা সেতু – আগস্ট ২০২২, নড়াইল – খুলনা সেতু -ডিসেম্বর ২০২২, চট্টগ্রাম – কক্সবাজার রেল -ডিসেম্বর ২০২২, কুলাউড়া – শাহবাজপুর রেল – ডিসেম্বর ২০২২, মেট্রোরেল – আগারগাঁও – উত্তরা – ডিসেম্বর ২০২২, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক ( সিলেট,রাজশাহী) – ডিসেম্বর ২০২২, খুলনা – মংলা রেল ওয়ে – ডিসেম্বর ২০২২, জয়দেবপুর – ঢাকা ডাবল রেললাইন – ডিসেম্বর ২০২২, বিআরটি -৩ – জানুয়ারি ২০২৩
পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে – মার্চ ২০২৩, কর্ণফুলী টানেল – মার্চ ২০২৩, রামপাল বিদ্যুৎ – এপ্রিল ২০২৩, যমুনা রেল সেতু – জুন ২০২৩, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ – ডিসেম্বর ২০২৩, রূপপুর পারমাণবিক -১ – ডিসেম্বর ২০২৩, ঢাকা -মাওয়া রেল – ডিসেম্বর ২০২৩, ঢাকা – রংপুর ৪ লেন – জানুয়ারি ২০২৪, যশোর – ঝিনাইদহ ৪ লেন – জানুয়ারী ২০২৪, কমলাপুর – আগারগাঁও মেট্রোরেল – জানুয়ারি ২০২৪, পায়রা বন্দর ড্রেজিং – জুন ২০২৪, মংলা বন্দর ড্রেজিং – জুন ২০২৪, রূপপুর পারমাণবিক ২ – ডিসেম্বর ২০২৪, আমিনবাজার ৮ লেন সেতু – ডিসেম্বর ২০২৪, রংপুর -লালমনিরহাট ৪ লেন – ডিসেম্বর ২০২৪, ভাঙা – যশোর রেল – ডিসেম্বর ২০২৪, কক্সবাজার বিমানবন্দর – ডিসেম্বর ২০২৪, খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র – ডিসেম্বর ২০২৪, ঢাকা – ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে – জুন ২০২৫, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -২ – জুন ২০২৫, ঢাকা বাইপাস – জুন ২০২৫, মাগুরা ফরিদপুর রেল – জুন ২০২৫, রংপুর পঞ্চগড় ৪ লেন – জুন ২০২৫, পতেঙা বে টার্মিনাল – জুন ২০২৫, বঙ্গবন্ধু শিল্প অঞ্চল – জুন ২০২৫, মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর – জুন ২০২৫, কুতুবখালী – বনানী এক্সপ্রেসওয়ে – জুন ২০২৫, পানগুচি সেতু – জুন ২০২৫, ঢাকা আরিচা ৪ লেন – জুন ২০২৫, ৩য় মেঘনা সেতু – জুন ২০২৫, পায়রা – ভাঙা ৪ লেন – জুন ২০২৬, বেনাপোল – ভাঙা ৪ লেন – জুন ২০২৬, নলুয়া – বহেরচর সেতু – জুন ২০২৬, শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম – জুন ২০২৬, ঢাকা – আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে – জুন ২০২৬, চাঁদপুর শরীয়তপুর টানেল – জুন ২০২৬, চট্টগ্রাম মেট্রোরেল – জুন ২০২৭, যমুনা টানেল – জুন ২০২৭, চাঁদপুর – শরীয়তপুর সেতু – জুন ২০২৭, ভোলা -বরিশাল সেতু – জুন ২০২৭, ঢাকা সিলেট ৪ লেন – জুন ২০২৭, তিস্তা ব্যারেজ – জুন ২০২৭, চট্টগ্রাম – ঢাকা বুলেট ট্রেন – জুন ২০২৮, ভাঙা – পায়রা রেল – জুন ২০২৮, ঢাকা সাবওয়ে রেল ( ১,২,৩,৪) – জুন ২০২৮, বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ার – জুন ২০২৮, শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাটি – জুন ২০২৮, সাবরাং টুরিজম পার্ক – জুন ২০২৮, নাফ টুরিজম পার্ক -জুন ২০২৮, সোনাদিয়া টুরিজম পার্ক – জুন ২০২৮ আকাশচুম্বি চ্যালেঞ্জ আর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ইতোমধ্যেই অগ্রগতির নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করে সাফল্যের এক যুগেরও বেশি সময় পূর্ণ করেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। জঙ্গিবাদের কারণে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান সংকটে রয়েছে সেখানে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময় সাফল্য দেখিয়েছেন। দেশের চলমান কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট ২০২৩ সালের মধ্যে জনগণের জন্য উন্মুক্ত হলে দেশে আরো দ্রুত উন্নয়নের জোয়ার বইবে এবং জনগণের জীবন যাত্রার মান বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। করোনা সংকটে পুরো দেশ যেখানে ভয়ে বিহবল, তখনও শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে অর্থনৈতিক সংকট তৈরী হয়নি, দেশে কেউ না খেয়ে মারা যায়নি। বরং প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
আওয়ামীলীগ দীর্ঘদিন ধরে সরকারে থাকা এবং উন্নয়নমুখী অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অদম্যগতিতে এগিয়ে চলছে। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবম জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এরপর ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রাষ্ট্রক্ষমতায় টানা ১২ বছর পূর্ণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এর আগে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনবদলের সনদ’ নামে নির্বাচনি ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামীলীগ। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা দেয়া হয়। সরকার এমন কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যা বিগত কোন সরকারের পরিকল্পনায় ছিল না। এর মধ্যে রয়েছে ১০০ বছর মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল, পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, ই-নামজারি, অনলাইন জিডি, দেশের সকল বিদ্যালয়ে বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই প্রদান, জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু করা।
গত ১২ বছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য কুড়িয়েছে বর্তমান সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সেবা, মাথাপিছু আয়, হাতে হাতে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের বদৌলতে পাল্টে গেছে জীবনমান। এদিকে বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অপেক্ষামান রয়েছে। করোনার আক্রমণের মধ্যেও থেমে ছিল না বাংলাদেশ। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে যখন মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে, তখন ডিজিটাল যোগাযোগ প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়। সরকারি বেসরকারি কাজ, স্কুলের পড়াশোনায় চলেছে ইন্টারনেটে। ঘরে বসে খাবারের অর্ডার করেও খেতে পারছে জনগণ। দেশের ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো তিন হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিলো চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমান সরকারের এক যুগে ২০২০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৭৭৭ মেগাওয়াট। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিলো ৪২টি। ২০০৯ সালে আরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র হয় ২৭টি। বর্তমানে ২০২০ সালে এর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মোট ১৪০টিতে।
২০০৬ সালে কৃষিতে কোনো ভর্তুকি দেয়া হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে এসে ১০ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০২০ সালে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রদান করে সরকার। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে অতি দারিদ্যের হার ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০০৯ সালে ছিলো ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৮ সালে কমে তা ১১ দশমিক ৩ শতাংশে আসে। বর্তমান ২০২০ সালের তথ্য চিত্র অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।
২০০৬ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিলো ৪৫ দশমিক ৬ কোটি ডলার। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০০৯ সালে ছিলো ৯৬ দশমিক এক কোটি ডলার। ২০১৮ তা বেড়ে ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। বর্তমান সরকারের একযুগ পূর্তিতে এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের বছর ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৮ সালে হয় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আজ একযুগ পূর্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ০৯ ডলার।
২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো ৫৬০ মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালে আয় ছিলো ৭১০ ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। ২০০৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছিলো ৫০০ টাকা। ২০০৯ সালে দেয়া হয় ৯০০ টাকা করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা। বাংলাদেশের উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের বছর ২০০৯ সালে ৩৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ছিলো ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমান সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা এসে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশে।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে নাগরিকদের গড় আয়ু ছিলো ৬৫ দশমিক ৪ বছর। ২০০৯ সালে গড় আয়ু হয় ৬৬ দশমিক ৮ বছর। ২০১৮ সালে ছিলো ৭২ দশমিক এক বছর। আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়ায় ৭২ দশমিক ৬ বছর। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়েও বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
ক্ষমতায় আসার পরই পদ্মা সেতু নির্মাণকে অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে শেখ হাসিনা সরকার। দেশ-বিদেশের নানা ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের পথে। ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ৪ বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। আরও ৬৬১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার এবং তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে। ‘ওয়ান সিটি-টু টাউন’ মডেলে চট্টগ্রাম শহরের সাথে আনোয়ারাকে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হচ্ছে সাড়ে তিন কিলোমিটারের সুড়ঙ্গপথ। চীনা অর্থায়নে চলমান বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে ১২ বছর ধরে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে।
জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে দেশব্যাপী উৎসবমুখর কর্মসূচি নেয়া হলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা সবকিছু থমকে দেয়, বড় ধরনের ধাক্কায় পড়ে সরকার। উৎসবের বছর পরিণত হয় আতঙ্ক আর হতাশায়। ২০২০ সালের শুরুতেই সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশে যখন করোনাসংকটে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তখন তা মোকাবিলায় দ্রুত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের বড় অর্জন গুলোর একটি হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। দেশের যেমন উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে তেমনি প্রতিটি মানুষের ভাগ্যেরও উন্নয়ন হয়েছে।
প্রিয় পাঠক! আমরা আজকের আলোচনার একেবারে প্রান্তসীমায় চলে এসেছি। পরিশেষে বলবো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরলস প্রচেষ্টায় চলমান প্রকল্পের বাস্তবায়ন আর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সাধারণ নাগরিক, দেশী-বিদেশী সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টা ও কার্যক্রমই পারে দেশকে দ্রুত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে। এবার বিদায়ের আগে আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মানের নির্মাতা। হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কাণ্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার একামাত্র বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্নসারথী। বিশ্বরাজনীতির উজ্জ্বলতম প্রতীক, বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনগ্রসর জাতি-দেশ-জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র, বিশ্বনন্দিত নেতা। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ‘নীলকণ্ঠ পাখি’, মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। তিমির হননের অভিযাত্রী, মাদার অব হিউম্যানিটি। আত্মশক্তি-সমৃদ্ধ সত্য-সাধক। প্রগতি-উন্নয়ন শান্তি ও সমৃদ্ধির কারিগর। সমুদ্র সমান অর্জনে সমৃদ্ধ মানব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া প্রার্থনা করে আজকের মতো বিদায় নিলাম।
নাইম ইসলাম নিবির :
রাজনীতিক ও কলাম লেখক nayemulislamnayem148@gmail.com