সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: করোনা মহামারীর মধ্যেই, একে তো বন্যা তার উপর নদী ভাঙন। বলছি, সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি এবং নদী ভাঙনের কথা। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নে ২১৬টি গ্রাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৫ হাজার পরিবারের ১ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ।এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চৌহালী উপজেলা। উপজেলার পয়লা, ঘুশুরিয়া, হাটাইল, চরবিনানুই এবং সুম্ভুদিয়া গ্রামে বন্যায় পানিবন্দি হাজারো মানুষ।
বন্যার পানি দ্বিতীয় দফায় অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত। পয়লা, ঘুশুরিয়া এবং হাটাইলে এমন একটি বাড়িও বাদ নেই যার উঠানে হাটু পানির উপস্থিতি নেই। বেশির ভাগ ঘরের মধ্যেই প্রবেশ করেছে বন্যার পানি৷ অনেকে কলাগাছের তৈরি ভেলার মাধ্যমে হাট-বাজার করছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একজন জানায়, বন্যার কারনে অন্যের বাড়িতে আপাতত অবস্থান নিয়েছে। ঠিকমতো খাদ্যের জোগান পাচ্ছে না৷ কোন উচু স্থান না পেয়ে গবাদিপশু গুলোকে পানির মধ্যেই রেখে দিয়েছে। তীব্র খাদ্য সংকট, স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধা এবং গবাদিপশুর খাদ্য জোগানে হিমশিম খাছে অত্র অঞ্চলের জনসাধারণ৷ ঘুশুরিয়া এবং পয়লা দুটি বৃহৎ গ্রাম নিয়ে একটি মাত্র হাট সেখানেও পানিতে থই-থই করছে। ছোট নৌকায় অবস্থান নিয়েছে অনেকেই।
আবার অনেকেই ঘরের চালে মাটির তৈরি চৌকিতে রান্নার কাজ সম্পন্ন করছে। বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে নদী ভাঙনের তীব্রতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী ভাঙনের ফলে ঘর-বাড়ি এবং অন্যান্য আসবাবপত্র অন্যত্র স্থানান্তর অনেক জটিল বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বন্যার মধ্যে নদী ভাঙানের ফলে অনেকে তাদের অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র রেখেই অন্যত্র চলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে একরকম ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এই অঞ্চলটিতে। এলাকার বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর। তাছাড়া, বড় একটা সংখ্যা ঢাকায় বিভিন্ন কাজ করে উপার্জন করত। কিন্তু করোনা মহামারীর কারনে কয়েকমাস ধরে ঘরে থাকায় আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে।অনেকেরই প্রতিদিন তিনবেলা খাবার মুখে জুটছেনা। এলাকায় যারা মোটামুটি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত, তাদের অবস্থাও করুণ৷ নদী ভাঙনের ফলে আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অর্থাৎ এখন ত্রিবিধ সমস্যার সম্মুখীন চৌহালী উপজেলার ঘুশুরিয়া, পয়লা এবং হাটাইল চরের মানুষ।
করোনার মধ্যে বন্যা এবং নদী ভাঙন, মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে উক্ত অঞ্চলের জনসাধারণের খাদ্য সমস্যা এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।