বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে হিংসার ঘটনা ততই বাড়ছে। রবিবারই দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ব্যারাকপুরে দাপুটে বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা। বিজেপি সেই ঘটনার জন্য সিবিআই তদন্তের দাবি জানালেও রাজ্য সরকার মানেনি। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইডি–কে। সিআইডি এ পর্যন্ত ওই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
তবে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং দাবি করেছেন, ‘সিআইডি এই খুনকে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। মণীশ শুক্লাকে খুনের পেছনে তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের যোগাযোগ রয়েছে। তৃণমূল ও পুলিশের যৌথ অপারেশনে এই খুন। পুলিশ যে এই খুনে যুক্ত, সেই প্রমাণ আমরা আদালতে দেব। এই খুনের জন্য তৃণমূলের ২ জন চেয়ারম্যান কয়েকজনকে সুপারি দিয়েছিলেন।’ মণীশ শুক্লা খুনের ঘটনার দু’দিনের মধ্যেই ফের আক্রান্ত হলেন বিজেপির রাজ্য নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। ঘটনাটি ঘটেছে ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার পথে মঙ্গলবার দুপুরে। জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার মহকুমা অফিসের সামনে দলের অবস্থান–বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন শমীকবাবু। সঙ্গে ছিলেন আরও এক জেলা নেতা। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের স্রোতেরপাল এলাকার কাছে আচমকাই জনাপাঁচেক দুষ্কৃতী তাঁদের গাড়ির ওপর চড়াও হয়।
শুধু তাই নয়, তারা গাড়ি ভাঙচুর করতে শুরু করে। গাড়ির ভেতরে থাকা শমীকবাবুকে মারধর করতে থাকে। দুষ্কৃতীরা তাঁকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তাঁর মোবাইল, পার্স কেড়ে নেওয়া হয়। সেই সময় শমীকবাবুর সঙ্গে থাকা সেই জেলা নেতা সাহায্য চেয়ে পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ কোনও রকম সাহায্য করেনি বলে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। ডায়মন্ড হারবারের বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি উমেশ দাসের অভিযোগ, ‘শমীক ভট্টাচার্যের ওপর হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের গুন্ডারা। এই ঘটনার পরও পুলিশ ও প্রশাসন পুরোপুরি নির্বিকার রয়েছে। জেলার পুলিস সুপারকে ফোন করা হয়েছে হাজার বার। কিন্তু তিনি ফোনই ধরেননি।’ অবশ্য বিজেপির সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। ডায়মন্ড হারবারের ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি উমাপদ পুরকাইত বলেছেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল জড়িত নয়। বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের ফল হতে পারে এই ঘটনা।’
যাই হোক, ওই ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতাদের মধ্যে। মুখ খোলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্বয়ং। পরে ডায়মন্ড হারবারে মহকুমা অফিসের সামনে বিজেপির বিক্ষোভ সভায় তিনি যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘রাজ্যের পুলিশ অফিসাররাই তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের রক্ষা করছে। কিন্তু এত করেও তৃণমূলকে তাঁরা রক্ষা করতে পারবেন না। ছ’মাস পরেই আমরা নবান্নের ক্ষমতায় আসব। তখন সুদ–আসলে এই ঘটনার হিসেব নেব। তৃণমূল নেতা, দুষ্কৃতীদের পাশাপাশি পুলিশ অফিসারদেরও তখন লকআপে পাঠাব।’