বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভার্চুয়াল সভায় বলেছিলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে কেন্দ্র যখন স্পেশ্যাল ট্রেন চালাচ্ছে, তখন সেই ট্রেনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা এক্সপ্রেস বলে উল্লেখ করেছেন।’ তিনি এমন কথাও বলেন, ‘ওই করোনা এক্সপ্রেসে চেপেই বাংলা থেকে বিদায় নেবে তৃণমূল।’ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অমিত শাহর কথার জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, তিনি কখনও পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনকে করোনা এক্সপ্রেস বলেননি। তাঁর কথায়, ‘আমি বলেছিলাম, পাবলিক বলছে করোনা এক্সপ্রেস।’ এমনকী, সেদিনের ফুটেজ খুলে দেখলেও সত্যিটা বোঝা যাবে বলে এদিন তিনি দাবি করেন।
যদিও বিজেপি এ কথা মানতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, এ ভাবে নিজের বলা কথা পরে অস্বীকার করে যাওয়াটা তাঁর একটা রীতি হয়ে উঠেছে। এর আগেও তিনি নাকি তা–ই করেছেন। বেসরকারি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমগুলির কাছে তারা ফুটেজ চালিয়ে দেখানোর অনুরোধও করেছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘এতদিন নিজের দোষ মুখ্যমন্ত্রী আমলাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেন। এখন সেই দায় চাপাচ্ছেন সাধারণ মানুষের ওপর। এই করোনা পরিস্থিতিতেও তিনি এমন কাজ আরও করেছেন। এর আগে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখাতে কী একটা কমিটি গড়ে ফেলেছিলেন। তার নাম দিয়েছিলেন অডিট কমিটি। পরে বিতর্ক এড়াতে সেই দায় এড়িয়ে গেলেন। শুধু তাই নয়, ওই কমিটি আধিকারিকরা গড়েছেন বলে সমস্ত দায় তাঁদের ওপরই চাপিয়ে দিলেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য স্পেশ্যাল ট্রেনকে করোনা এক্সপ্রেস বলার পর ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে এখন তিনি ডিগবাজি খেলেন। আমরা বুঝতে পারছি না, সরকারটা কারা চালাচ্ছে? মনে হয় ভূতে চালাচ্ছে!’
এদিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। বলেন, ‘লকডাউনের শুরুতে সরকার বলল, বেসরকারি সংস্থাগুলি যেন কর্মীদের মাইনে না কাটে। এই সময় পুরো মাইনে দেয়। আবার এখন অন্য কথা বলছে। শুনেছি সংস্থাগুলি মাইনে দিতে বাধ্য নয়, এমনই কিছু একটা বলেছে। সত্যি কথা বলতে কী, এ ভাবে শ্রমিকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতারণা করেছে।’ সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা জবাব দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার মাইনে না কাটার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও জানিয়ে দেয়, লকডাউনে কর্মীদের বেতন কাটলেও বেসরকারি সংস্থাগুলির মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সুর ছিল বেশ চড়া। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকারকে তিনি ‘লকডাউন গভর্নমেন্ট’ বলেও কটাক্ষ করেন। পাশাপাশি, এদিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়ে দেন। এখন থেকে রাজ্য সরকারের দফতরগুলিতে কর্মীদের দুই শিফটে কাজ হবে। ফলে সকলকে একসঙ্গে অফিসে এসে ভিড় বাড়াতে হবে না। কর্মীরাও অফিসে অনেকটাই নিরাপদ থাকবেন।